শঙ্কর রায়, কলকাতা: পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত অনিল চন্দ্র শাহ-র সঙ্গে ১৭-মিনিট অ-পূর্বনির্ধারিত বৈঠক নিয়ে  নানা কাল্পনিক ধারণা চাউর হয়েছে বাজার গরম করার জন্য। কিন্তু কেন শ্রী শাহ্‌ বিমান বন্দরে নেমে সরাসরি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)মুরলীধর সেন লেনে  পার্টির রাজ্যের সদর দপ্তরে গেলেন, সেটা তো এই রাজনৈতিক পন্ডিতকুলের বোঝা প্রত্যাশিত ছিল।

আগে কখনো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রী এমন করেছেন? রাজ্য বিধান সভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায় এটা স্পষ্ট যে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সাকরেদ পশ্চিম বঙ্গে আসন্ন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঘুটি সাজাতে এসেছিলেন। তাঁর তথা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাথায় এখন প্রদান চিন্তা কি করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসেকে কাবু করা যায়। অন্তত বেশ কয়েকটি জেলা পরিষদ যাতে বিজেপির দখলে আসে তার রণনীতি প্রণয়নের সমস্যা এখন সামনে এসে গেছে।

শুভেন্দুবাবুর সাথে বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি  ও সাংসদ দিলীপ ঘোষের সম্পর্ক ভালো নয়। আবার এ দুজনের সাথে বর্তমান রাজ্য সভাপতি ড সুকান্ত মজুমদারের বোঝাপড়া প্রায় নেই।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সরেজমিনে এই ত্রিকোন সংঘাতের চেহারা দেখেই শুভেন্দুবাবুকে বলেছেন মঙ্গলবার তিনি যেন তাঁর সাথে পার্লামেন্টে দেখা করেন ও সেজন্যে আধ ঘণ্টা সময় দেবেন। সেই বৈঠক দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তার সম্ভাবনা  কম। কারণ গরুপাচার, স্কুল শিক্ষক-নিয়োগ কেলেঙ্কারী ও কয়েক শত কোটিটাকার লেনদেন ইত্যদি সামনে এনে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইন্টেলিজেন্সস ও ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ তৃণমুল কংগ্রেস-বিরধিদের সামনে যে সুযোগ এনে দিয়েছে,  তার সুযোগ সবচেয়ে বেশী নিতে পারে বিজেপি। এমন সুযোগ বারেবারে আসে না।

অমিত শাহ্‌ প্রধানত সরকারী কাজে এসেছেন।পূর্বাঞ্চলের মুখ্য মন্ত্রীদের বোঠকে সভাপতিত্ব করতেই নবান্নে এসেছিলেন। বৈঠক শেষে মাত্র ১৭ মিনিটের  জন্যে মমতা -শাহ মোলাকাত হয়। এটুকু সময়ে কোন ‘ডিল’ হ্যেচ্ছে ও তাই একান্তে গোপন বৈঠক হয়েছে, এমন ধারণা তৈরি করা হয়েছে। এই ধারণা তারাই করছেন যারা প্রতিদিন-মুখ দেখাতে-চাওয়া অ্যাকাডেমিক বা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। এরা  নানা জল্পনাকল্পনা  চাউর করছেন।

কেন দুজনে একান্তে মুখোমুখি হলেন, কেন সেই বৈঠকের মিনিটস নেই ইত্যাদি কৃত্রিম চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছেন, যেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে মুখ্য মন্ত্রী জ্যোতি বসু একান্তে বাজপেয়ীজি বা তদানীন্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লাল কিষিনচাঁদ আদবানীর সাথে একান্তে  দেখা করেন নি অথবা দেখা করলেও তার মিনিটস রাখা ও আদান-প্রদান করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তো ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ভারতে তখনকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড ক্যাম্বেল মালফোর্ডের ৭৫ মিনিট বৈটক হয়েছিল। তার মিনিটস হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে উইকিলিক্স ফাঁস করে দিয়েছিল দুজনের কথাবার্তার সারমর্ম যা মার্কিন কূটনীতিবিদ ও কলকাতা দূতাবাসের কন্সালজেনারেল টিমোথি রোমার ওয়াশিংটনে কেবল করে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯-এ পাঠিয়েছিলেন। মাঋন বিদেশ দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন।তার অংশবিশেষ এইঃ “Buddhadeb Bhattacharjee said that his Communist Party of India-Marxist must ‘either change or perish’ and he lamented the lack of technocratic expertise within party leadership in a meeting with the Ambassador in Kolkata. He was also frank in his criticism of the Communist Party of India-Marxist (CPI-M). Bhattacharjee , a member of CPI-M’s Politburo, argued that communist ideology needs to ‘either change or perish’. He lamented the fact that long-term politicians and outdated ideology continue to overwhelmingly dominate the Left in India. He contrasted this with the technocrats and other experts that now have power within China’s communist party। যদিও সিপি আই(এম)-এর তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট বলেছিলেন এ সব গালগল্প, উইলিক্সের ফাঁস করা খবর আজ অব্দি কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি।

কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের এক প্রাক্তন ডিএসপিঁ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে একদিন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘ মমতার ইগো এতটাই যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হলেও তিনি অমিত শাহ্‌কে তেমন রেয়াৎ করেন না।’। মুখ্য মন্ত্রীর এক ছায়াসঙ্গিনী ২০২১ সালে পশ্চিম বঙ্গে ভোটের প্রচারের সময় কথায় কথায় বলেছিলেন, ‘দিদি যখন রেল মন্ত্রী, তখন অমিত শাহ-কে চিনত কে?’ কাজেই ১৭ মিনিটের মোলাকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন বোঝাপড়া করেছেন, এমন সম্ভাবনা কম।তাছাড়া ২০২১ সালে অমিত শাহ-র দাপাদাপি আর বিজেপি ২০০ আসন নিয়ে জিতে পশ্চিম বঙ্গে সরকার গড়তে চলেছেন, সেই হুংকার কি করে ভুলবেন মমতা বা ভোটের প্রচারে সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here