দেশের সময়, কলকাতা :মঙ্গলবার ইস্তফা দেওয়ার কথা তাঁর। তার আগে সোমবার শেষবারে মতো এজলাসে এলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির চেয়ারে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে এদিন বহু মানুষ ভিড় করেন। কোর্টরুমের মধ্যে তৈরি হয় এক আবেগগ মুহূর্ত।

‘আপনার জন্য আমার সন্তান চিকিৎসা পেয়েছে। আপনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে চাই।’ এ কথা আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে বললেন এক মহিলা। উপস্থিত অনেক মামলাকারীর তখন চোখে জল। কলকাতা হাইকোর্টে আরও এক নজিরবিহীন ছবি দেখা গেল সোমবার।

রবিবার দুপুরেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিচারপতি পদে ইস্তফা দেবেন আগামী মঙ্গলবার। বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার জল্পনাও চরমে। সোমবার তাঁর এজলাসে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লেন মামলাকারীরা।

মোট ৬৪টি মামলা ছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের হাতে। তার মধ্যে একটি মামলা এদিন শুনে অর্ডার দেন তিনি। বাকি ৬৩ টি মামলা ছেড়ে দেন। এজলাসে উপস্থিত ছিলেন তাঁর অনেক গুণগ্রাহী। অনেকেই কেঁদে ফেলেন এদিন।

আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য বিচারপতিকে বলেন, আপনার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি। আপনি চলে গেলে অনেক ক্ষতি হবে। আমাদের ছেড়ে যাবেন না। এ কথা শুনে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় জানিয়ে দেন, এখন থেকে নিজেকে অন্য কাজে নিয়োজিত করবেন তিনি। আইনজীবী তখন বলেন, আপনার কাজ তো এখনও শেষ হয়নি।

এক মহিলা বিচারপতির দিকে এগিয়ে এসে বলেন, “আমি আপনার কাছ থেকে একটি মামলায় অনেক সুরাহা পেয়েছি। আপনার জন্য আমার সন্তান চিকিৎসা পেয়েছিল। আমি খোরপোষের টাকা পাই। কাল খবরটা পেয়ে ছুটে এসেছি। আপনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে চাই।” মহিলার কাছে বিচারপতি জানতে চান, তাঁর সন্তান কেমন আছে? মহিলাকে বলেন, “আমি পায়ে হাত দিয়ে কারও প্রণাম নিই না।” এক মামলকারী বলেন, “এই ১৭ নম্বর এজলাস ছিল আমাদের কাছে মন্দির। আপনি চলে গেলে আমাদের কী হবে?”

২৯ বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে বলে এদিন উল্লেখ করেন তিনি। উপস্থিত মামলকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমার যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আমার জায়গায় অন্য কেউ আসবেন। তিনি নিশ্চয়ই আপনাদের সুরাহা করবেন।” শেষে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে নমস্কার করেন বিচারপতি। আইনজীবী ও উপস্থিত সাধারণ মানুষের দিকে হাত নেড়ে শেষবারের মতো এজলাস ছাড়েন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here