দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের অ্যাডিনো ভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তাঁর বাড়িতেও একজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় যাতে কোনওভাবেই খামতি না থাকে এই বার্তা আগেই দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার হোলি এবং দোলের আগে বড় সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন।
এই ভাইরাল সংক্রমণের পরিস্থিতিতে রাজ্যের সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য হাসপাতালের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ডেপুটি সুপার এবং শিশুরোগ ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি শিশুদের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা পরিষেবায় যুক্ত সমস্ত সরকারি কর্মী এবং সমস্ত জেলার মুখ্য ও উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ছুটি সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
ফলে এই আধিকারিক এবং চিকিৎসকরা দোল এবং হলিতেও ছুটি পাবেন না। জ্বর এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে যাতে কারও কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয় সেই জন্যই এই নির্দেশ বলে জানা যাচ্ছে। একইসঙ্গে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে ফিভার ক্লিনিক।
বিসি রায় হাসপাতালে ফের শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। জানা গেছে, সোমবার ভোরে হাসপাতালে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এক শিশুর নাম আরিয়ান খান। আনন্দপুর এলাকার বাসিন্দা আট মাসের বাচ্চাটা জ্বর-সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল তার। আজ ভোরে মৃত্যু হয়। এই নিয়ে গত ১০ দিনে অন্তত ৪৩ জন শিশুর মৃত্যুর খবর শোনা গেল।
প্রসঙ্গত বিসি রায় হাসপাতালে ফের শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। জানা গেছে, সোমবার ভোরে হাসপাতালে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এক শিশুর নাম আরিয়ান খান। আনন্দপুর এলাকার বাসিন্দা আট মাসের বাচ্চাটা জ্বর-সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল তার। আজ ভোরে মৃত্যু হয়। এই নিয়ে গত ১০ দিনে অন্তত ৪৩ জন শিশুর মৃত্যুর খবর শোনা গেল।
রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়, একজন মেটিয়াবুরুজ, আর এক জন মিনাখাঁর বাসিন্দা।মেটিয়াবুরুজের শিশুটি গত রবিবার থেকে জ্বর, শ্বাসকষ্ট-সহ একাধিক উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। অন্য জনও একই উপসর্গ নিয়ে গত সোমবার থেকে ভর্তি ছিল। দুই পরিবারের অভিযোগ, কী কারণে শিশুদের মৃত্যু হল, তা স্পষ্ট করে জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে তাদের দাবি অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। মৃত শিশুদের পরিজনদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। তাই অনেক সঙ্কটাপন্ন শিশুকে বাধ্য হয়েই সাধারণ শয্যায় রেখে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মৃত শিশুদের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর শংসাপত্রে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ‘অ্যাডেনোভাইরাল নিউমোনিয়া’র কথা উল্লেখ রয়েছে।
শনিবার রাতেই বিসি রায় হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ৬ মাসের শিশু গাইঘাটার বাসিন্দা। ১১ দিন ধরে জ্বর নিয়ে সে ভর্তি ছিল বিসি রায় হাসপাতালে। শনিবার সকালে বিসি রায়ে ৬ জন শিশু মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মিনাখাঁ এলাকার চার মাসের এক শিশুর মৃত্যুও হয় শনিবার। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বাসিন্দা এক শিশুর মৃত্যু হয় শনিবার দুপুরে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারেও একজন অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত। বিধানসভায় এ কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁর পরিবারের কোন সদস্য ভাইরাস আক্রান্ত তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোভিডের পরে কোনও অসুখ হলেই সবাই ভয় পাচ্ছে। এত উদ্বেগের কারণ নেই। সরকার পদক্ষেপ করছে।
মমতা বলেছেন, রাজ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জন শিশুর। বাকি ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে কোমর্বিডিটির কারণে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সব মৃত্যুর কারণই যে অ্যাডেনোভাইরাস তা নয়। তাই অযথা আতঙ্ক ছড়ানোর দরকার নেই।
রাজ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত। গত কয়েকদিনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও বিসি রায় হাসপাতাল থেকে একের পর এক শিশু মৃত্যুর খবর এসেছে। গত দু’দিনে বিসি রায় হাসপাতালে অন্তত সাত জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে। একজনের মৃত্যুর শংসাপত্রে লেখা ছিল অ্যাডেনোভাইরাস ৷
এর আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “ভাইরাস এখনও এপিডেমিক হয়নি। ভয় পাওয়ার কারণ নেই। অযথা আতঙ্ক বাড়াবেন না।” মমতা বলেছেন, ‘‘আমার পরিবারের এক জন অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত। আমি এ সব বলে বেড়াই না।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেছেন, তাঁর ভাই ও অফিসের বিশ্বস্ত এক কর্মীরও মৃত্যু হয়েছিল করোনাভাইরাসে। তাই আপনজনদের হারানোর যন্ত্রণা তিনি বোঝেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাচ্চাদের তিনি ভালবাসেন। তাই আর যাতে কারও অসুখ না হয় সে জন্য রাজ্য সরকার যথেষ্ট তৎপর। মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল-সহ প্রতিটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ অর্থাৎ এআরআই চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, এআরআই চিকিৎসার জন্য রাজ্যের ১২১টি হাসপাতালে পাঁচ হাজার শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালগুলিতে এই মুহূর্তে ৬০০ জন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডিউটিতে থাকবেন। মমতা বলছেন, ওপিডি-তে রাখতেই হবে অন্তত একজন শিশুরোগ চিকিৎসককে। ২৪৭৬টি ‘সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট’, ৬৫৪টি পিআইসিইউ বেড ও ১২০টি এনআইসিইউ বেড তৈরি রাখা হয়েছে।
তাছাড়া বিসি রায় হাসপাতালে অতিরিক্ত ৭৫টি পিআইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলায় জেলায় টেলিমেডিসিনের উপরও জোর দিতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।