দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সারেগামাপা-র গ্র্যান্ড ফিনালের ফলাফলের জন্য রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিল বাংলার মানুষ। অনেকেই মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন হয় স্নিগ্ধজিৎ নয় অনন্যা জিতবেন এবারে। যদিও ট্রফি জিতে নেন বাংলার আরেক মেয়ে, আলিপুরদুয়ারের নীলাঞ্জনা রায়। দ্বিতীয় হন হুগলির মেয়ে সঞ্জনা বাগ। প্রথম তিনে নাম না থাকলেও বড় অফার অনন্যা চক্রবর্তীর হাতে। গত মঙ্গলবার যেন নিজের সোশ্যাল পোস্টে তাঁরই অভাস দিয়ে গেলেন তিনি।
সারেগামাপার সর্বভারতীয় মঞ্চে যে শিল্পীর হাত ধরে বাউল গান পার জমিয়েছে তিনি আর কেউ নন অনন্যা চক্রবর্তী! অনন্যার “অনন্য” কণ্ঠস্বরের জাদুতে এত কম বয়সেই তিনি তৈরি করেছেন তার হিউজ ফ্যানবেস। এতদিন বাংলা এবং হিন্দি গানে দর্শকবৃন্দ সহ বিচারকদের তাক লাগালেও এইবার নিজের কম্পোজিশন থেকে বেরিয়ে সোজা তামিল গান গেয়ে বিচারকদের কাছে স্ট্যান্ডিং ওভেশন জিতে নেন এই বঙ্গতনয়া!
বজবজের বাসিন্দা বাংলা গানের দুনিয়ায় এখন পরিচিত মুখ এই কন্যে। একতারা হাতে অনন্যার বাউল গান মুগ্ধ করেছে বাঙালিকে। এর আগে জি বাংলার সারেগামাপা-র মঞ্চে অংশ নিয়েছেন অনন্যা। অনন্যার অন্যরকম কন্ঠস্বর বরাবরই প্রশংসা কুড়িয়েছে সব্বার।
সারেগামাপা-র এক বিচারক বিশাখজ্যোতি জানান,বাংলার লোকসঙ্গীত এবং একজন বাউল শিল্পীকে নিয়ে জিটিভি (GEE TV) সারেগামাপার সর্বভারতীয় মঞ্চে যেভাবে পুরো একটা সিজিনে গ্র্যান্ড ফিনালে পর্যন্ত রাখার নিদর্শন এর আগে অন্য কোন রিয়েলিটি শোতে দর্শকরা দেখেছেন বলে আমার মনে হয় না৷ পাশাপাশি এটাও দেখা গেছে এবার যে,অনন্যা বেশির ভাগ সময়ই বাংলার লোকসঙ্গীত গেয়েই গ্র্যান্ড ফিনালে পর্যন্ত পোঁছেছিল৷ আমি অনন্যার প্রতি ভিষণ ভাবে গর্বিত এই জন্য যে বাংলার লোকসংগীত গেয়ে ও যে ভাবে মঞ্চ দাপিয়েছে এবং অবশ্যই জিটিভি সারেগামাপা-র একটা বড় প্রশ্রয় ছিল এ ব্যপারে থা অনস্বীকার্য৷ এখন ওর কন্ঠে লোকসংগীত দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে৷ এর ফলে আগামীদিনে সারা ভারতবর্ষের মাটিরগান এই বাংলারলোক সংগীত বিশ্ববাসীর কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস৷
অনন্যাকে দেখা গেল তাঁর নিজস্ব কোয়ার্কি স্টাইলেই। এক গাল হেসে ছবি তুলেছেন। তবে লক্ষ্য করার ব্যাপার হল অনন্যার মাথার ঠিক উপরেই হিমেশ রেশামিয়ার ছবি। আর হিমেশের স্টাইলেই দু’হাত ছড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন তিনি।
https://www.instagram.com/p/Caz42G1hjYg/?utm_medium=copy_link
অনন্যা ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘একটা বড় ব্যাপার হতে চলেছে’। আর নিজের পোস্টে তিনি ট্যাগ করেছেন হিমেশ রেশামিয়াকে। সঙ্গে হ্যাশট্যাগে জুড়ে দিয়েছেন ‘রেকর্ডিং’ কথাটা। যার থেকেই স্পষ্ট হিমেশের সুরে গান রেকর্ড করে ফেলেছেন তিনি।
সম্প্রতি অনন্যা তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে একটি সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেছেন যেখানে তাকে ব্লকবাস্টার সুপারহিট দক্ষিণী সিনেমা “পুষ্পা”র “স্বামী স্বামী” গান গেয়ে মঞ্চ মাতাতে দেখা যাচ্ছে। তবে ভিডিও ক্লিপটিতে তিনি শুধু গান গেয়েই থেমে থাকেননি রশমিকা মন্দন্নার হটকেক সিগনেচার স্টেপ করেও দেখিয়েছেন গায়িকা।
https://www.instagram.com/p/CaKbzYnBu-J/?utm_medium=copy_link
হিমেশ বরাবরই সুযোগ দিয়ে থাকেন নতুন প্রতিভাদের। তাঁর সুরে ইতিমধ্যেই রেকর্ডিং করে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি গান বাংলার আরেক উঠটি ট্যালেন্ট অরুণিতা কাঞ্জিলাল। ইন্ডিয়াল আইডলে দ্বিতীয় হন অরুণিতা। তাঁর আর পবনদীপের জুটিতে বেশ কয়েকটি গান সামনে এনেছেন হিমেশ।
সারেগামাপা ২০২১-র গ্র্যান্ড ফিনালে। যেখানে বিজেতা হওয়ার দৌঁড়ে অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিক, অনন্যা চক্রবর্তীর নাম, সেখানে বিজেতার ট্রফি হাতে তুলে নেন নীলাঞ্জনা রায়। আলিপুরদুয়ারের এই মেয়েটি সারেগামাপা জিতল মাত্র ১৮ বছর বয়সে। তবে ফলাফলে যেমন অনেকেই খুশি, তেমনই কেউ আবার প্রতিবাদ জানাতেও শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, এই ট্রফির আসল অধিকার ছিল স্নিগ্ধজিৎ বা অনন্যার!
https://www.instagram.com/p/Ca05ZHRoxD6/?utm_medium=copy_link
নীলাঞ্জনা এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘সারেগামাপা ২০২১ জিতে আমি খুব খুশি। দর্শকদের অনেক ধন্যবাদ আমাকে এত ভালোবাসা আর স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। আমি এখনও ভাবতে পারছি না এই অসাধারণ জার্নিটা শেষ হয়ে গেল। এটা একটা দারুণ সুযোগ ছিল আমার কাছে শেখার। বিচারক, মেন্টর, আর জুরি সদস্যদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। আমার পরবর্তী জীবনের জন্যও আমাদের একইরকম ভালোবাসা আর আশীর্বাদ চাই।’
https://www.instagram.com/p/CayPQQgh8HQ/?utm_medium=copy_link
সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন অনন্যা চক্রবর্তী। যেখানে হুড খোলা গাড়িতে করে তাঁকে দেখা গেল সবার দিকে চুম্বন ছুঁড়ে দিতে। ক্যাপশনে লিখলেন, ‘Thankyou Universe ✨❤️’। আর এখনেই কমেন্ট করেছেন অনন্যার অনুরাগীরা। একজন লিখেছেন, ‘আমার জন্য আপনিই বিজেতা’। আরেকজনের মন্তব্য, ‘কালকের ফলাফল সত্যি মেনে নেওয়া যায় না। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের থেকেও এটা জঘন্য।’
https://www.instagram.com/tv/Caxm-k5hDia/?utm_medium=copy_link
শো-তে অতিথি বিচারক হিসেবে যাঁরাই এসেছিলেন তাঁরা সকলেই প্রশংসা করেছিলেন স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিকের গায়কীর। সাথে করে বিশাল দাদলানি নিজে তাঁকে গানে প্লেব্যাক করার অফার দিয়েছিলেন।বিমানবন্দর থেকে কলকাতা ফেরার ছবি দিতে দেখা গেল স্নিগ্ধকে। সাথে অনন্যা। ছবির ক্যাপশনে লিখলেন, ‘এবার আমরা ফিরছি নিজের শহরে একটা দুর্দান্ত সফর শেষ করে।’ সেখানেও এই দুইয়ের হয়ে গলা ফাটাতে দেখা গেল নেট-নাগরিকদের। একজন লিখলেন, ‘তোমরাই আমাদের গর্ব’!
https://www.instagram.com/p/CazUbmihv6K/?utm_medium=copy_link
প্রসঙ্গত, সারেগামাপা-য় দ্বিতীয় হন বাংলার আরেক মেয়ে সঞ্জনা বাগ। তৃতীয় হয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ছেলে শরৎ শর্মা। স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিক, অনন্যা চক্রবর্তীরা প্রথম তিনে না থাকায় মন খারাপ অনেকেরই! কারও কারও মতে এই ফলাফল ভুল। ট্রফি গিয়েছএ ভুল লোকের হাতে। প্রসঙ্গত, বাংলার চার ছেলে-মেয়ে এই প্রথম কোনও জাতীয় মঞ্চের ফাইনালে একসাথে। নীলাঞ্জনা, সঞ্জনা, অনন্যা আর স্নিগ্ধজিত পৌঁছেছিলেন সারেগামাপা ২০২১-র ফাইনালে।