দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পুরো চব্বিশ ঘণ্টাও কাটল না। নাগরিকত্ব আইন প্রশ্নে রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারিতে গণভোটের দাবি থেকে সরে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, আমি ঠিক গণভোটের কথা বলিনি। বলেছি, নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করা ঠিক হয়েছে কিনা তা নিয়ে জনমত নেওয়া হোক। পাশাপাশি মমতা এও বলেন, “দেশ জুড়ে এই যে প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে, তা থামানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হস্তক্ষেপ করুন। তাঁর কাছে আবেদন করছি, নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করে নিন”।
বৃহস্পতিবার ধর্মতলার সভায় দাঁড়িয়ে দিদি বলেছিলেন, নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে ক’জন রয়েছেন আর বিপক্ষেই বা ক’জন তা জানতে গণভোট করা হোক। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের মতো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের নজরদারিতে হোক সেই নির্বাচন।
গণভোটের দাবি তোলা যে ঠিক হয়নি তা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব গতকাল বিকেলেই বুঝতে পারেন। তাই দলীয় মুখপাত্রদের এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়। অবশেষে আজ ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুক্রবার দুপুরে তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে দলের কোর কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন দিদি। তার পর সাংবাদিক বৈঠকে গণভোট সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি বলেছি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মানুষের মতামত নেওয়া হোক। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের কথা যেমন বলেছি তেমন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কথাও বলেছি।” তিনি এও বলেন, গণভোটের ইংরেজি প্রতিশব্দটা কিন্তু বলিনি। বার বার বলছি, জনমত নেওয়ার কথা বোঝাতে চেয়েছি মাত্র। আমি ভাত আর আমি ভাত খাই এক ব্যাপার নয়।
মুখ্যমন্ত্রীকে এদিন রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাতে দৃশ্যত বিরক্ত হয়ে দিদি বলেন, “ছাড়ুন তো! এক কথা কতবার বলব!”
সন্দেহ নেই সমূহ সমালোচনার আশঙ্কা করে এ ব্যাপারে ডিগবাজি খেল তৃণমূল। তবে এর পরেও বিজেপি বিষয়টি ছাড়তে নারাজ। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, পাকিস্তান যে ধরনের দাবি জানায় মুখ্যমন্ত্রী সেরকম কথা বলছিলেন। আসলে তোষণের রাজনীতি তৃণমূলের মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে। ভিতর থেকে সেই মর্মেই কথা বেরিয়ে আসে। কিন্তু ওরা বুঝতে পেরেছে, গণভোটের দাবি তোলায় শুধু বাংলা নয় গোটা দেশের সব ধর্ম, জাতির মানুষ তৃণমূলের উপর ক্ষেপে গিয়েছে। কারণ, দেশের গণতন্ত্রের অপমান করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ভয় পেয়েই পিছু হটল তৃণমূল।
রানী রাসমনির সভা থেকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বার্তা দিয়েছিলেন, আগুন জ্বালাবেন না। বরং দেশের আগুন নেভানোর দায়িত্ব আপনার। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আগুন জ্বলছে। আপনি ব্যবস্থা নিন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি একটুও পাল্টায়নি। তাই এবার তৃণমূল ভবনে দলের সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছি। পেশিশক্তি না দেখিয়ে গণতন্ত্রের কাছে মাথানত করতে হয়। আমি হাতজোড় করে আপনার কাছে আবেদন করছি গোটা দেশ জ্বলছে। সেটা নেভানোর ব্যবস্থা করুন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ফেরত নিন।’
শুক্রবার টুইটারে মমতা লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবতা সংহতি দিবসে আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের উদ্যাপন করুন। এটা আমাদের শক্তি। যাঁরা ধর্ম, জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজন করতে চাইছে, তাঁদের পরাজিত করতে একজোট হয়ে কাজ করুন।’ এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি ফের জানিয়ে দেন, এই কালা আইনের বিরুদ্ধে আবারও পথে নামবে তৃণমূল।
তবে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস বন্ধ–অবরোধ সমর্থন করে না। জনজীবনে শান্তি বজায় রেখে তৃণমূল আন্দোলন করবে। রামচন্দ্র গুহকে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে সেটা কী গণতন্ত্রের পরিচয়?’
গোটা রাজ্যে এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি কর্মসূচিও সাজিয়ে দেন। তিনি জানান, আগামী ২৩ ডিসেম্বর প্রত্যেক মহকুমায় মিছিল হবে। ২৪ ডিসেম্বর সিমলা রোড থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত মিছিল হবে। ২৬ তারিখ দমদম কামারহাটিতে মিছিল হবে। ২৭ ডিসেম্বর সিঙ্গুর থেকে কৃষকদের মিছিল হবে। ২৮ এবং ২৯ ডিসেম্বর সব বিধানসভা কেন্দ্রে ধর্না কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।