দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের তীব্রতা আরও বেড়ে গেল শনিবার। তা এতোটাই যে মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণপুর স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দিল বিক্ষোভকারীরা। এই পাঁচটি ট্রেনের মধ্যে তিনটি লোকাল ট্রেন, অন্য দুটি হল লালগোলা প্যাসেঞ্জার ও হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস। অন্যদিকে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে ডাউন মালদহ কাটিহার লোকাল ট্রেনেও একদল বিক্ষোভকারী এদিন বিকেলে হামলা চালায়।
শুক্রবার কেবল বেলডাঙা, উলুবেড়িয়া স্টেশনে তাণ্ডব চালিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। তা নিয়ে সংখ্যালঘু নেতারা শনিবার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এও বলেছেন যে, প্রতিবাদ জানানো যেতেই পারে। কিন্তু তা হিংসার পথে গিয়ে নয়। এতে আখেরে রাজ্যেরই ক্ষতি হচ্ছে।
আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেছেন, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন চলতেই পারে। কিন্তু কেউ যেন রেল ও পথ অবরোধ না করে।
কিন্তু তার পরেও দেখা যায় যে, হাওড়ার সাঁতরাগাছি, উত্তর চব্বিশ পরগণার আমডাঙা, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকা এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় উগ্র বিক্ষোভ চলছে।
বিক্ষোভ-অবরোধের কারণে কৃষ্ণপুর স্টেশনে ওই পাঁচটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল। অবরোধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ভিতরে কোনও যাত্রী ছিলেন না। সারাদিনে ট্রেনগুলির উপর কোনও হামলার ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু বিকেল গড়াতেই কয়েক’শ বিক্ষোভকারীরা কৃষ্ণপুর স্টেশনে তাণ্ডব শুরু করে। রেল পুলিশের যে নিরাপত্তারক্ষীরা ছিলেন তাঁদের সংখ্যায় তুলনায় এতই কম যে ভয়ে তাঁরাই স্টেশন ছেড়ে পালান বলে অভিযোগ। ফলে বিকেল পাঁচটা নাগাদ একেবারেই মুক্তাঞ্চল হয়ে যায় কৃষ্ণপুর স্টেশন। তার পর একের পর এক ট্রেনের কামরায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
রেল স্টেশনে তাণ্ডব এদিন কেবল মুর্শিদাবাদেই সীমিত ছিল না। শনিবার সকালে হাওড়ার সাঁকরাইল স্টেশনের বুকিং কাউন্টারে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। তাতে রেলের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর। এমনকি রেল পুলিশের এও অভিযোগ টিকিট কাউন্টার থেকে টাকা লুঠ করার চেষ্টাও হয়েছে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে ক্রমশই বিপজ্জনক চেহারা নিচ্ছে এ ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই। রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের তরফে অবশ্য প্রতিনিয়ত শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হচ্ছে। তবে বিজেপির অভিযোগ, এসব স্রেফ লোক দেখানো। তৃণমূল তথা সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই পরিস্থিতির উপর। তা ছাড়া কোনওরকম কঠোর ব্যবস্থা নিতে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল। কারণ এই সংখ্যালঘুরাই তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক।
রাজ্যের পুলিশ যদি এই ধরনের হিংসা থামাতে না পারে তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত কেন্দ্রের কাছে সাহায্য চাওয়া। প্রয়োজনে সেনা বা আধা সামরিক বাহিনী পাঠাতে পারে কেন্দ্র। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “শুধু রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বাংলার মানুষের জীবন বিপদের দিকে ঠেলে দিলে তার ফল ভাল হবে না। মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না”।