দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে  শোক জ্ঞাপন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি সকলেই।

শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলা ভাষায় টুইট করে মোদি লিখেছেন, ‘শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধায়ের প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গ- সহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি’। বাঙালি সংস্কৃতিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও এ দিন লেখেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি লেখেন, ‘তাঁর কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। তাঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত। শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জনাই। ওঁ শান্তি’।

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এ দিন লেখেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ফলে ভারতীয় সিনেমা এক মহীরুহকে হারাল। ‘অপু ট্রিলজি’ ও সত্যজিৎ রায়ের একাধিক ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাঁকে বিশেষ ভাবে মনে রাখবে মানুষ। অভিনয়ের জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে’। রাষ্ট্রপতি এ দিন মনে করিয়ে দেন জাতীয় পুরস্কার-সহ বহু সম্মান পেয়েছেন সৌমিত্র। 

এ দিন সৌমিত্রর প্রয়ানের খবর পেয়ে প্রথমেই বেলভিউ হাসপাতালে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘ফেলুদা আর নেই। অপু বিদায় জানাল। বিদায় সৌমিত্র (দা) চট্টোপাধ্যায়। তিনি একজন ‘লেজেন্ড’ ছিলেন। ভারতীয় ও জাতীয় সিনেমা আলাদা করে এক অতিকায় প্রতিভাকে হারাল। আমরা ওঁকে মিস করব। বিশ্ব ও বাংলা সিনেমা আজ অনাথ হয়ে পড়ল’।

এদিন সত্যজিৎ-সৌমিত্র জুটির কথাও মনে করিয়ে দেন মমতা। তিনি লেখেন, ‘মূলত সত্যজিৎ রায়ের ছবির জন্য পরিচিত সৌমিত্র পেয়েছিলেন লিজিয়ন অফ অনার, দাদা সাহেব ফালকে, বঙ্গবিভূষণ, পদ্মভূষণ এ ছাড়াও অসংখ্য জাতীয় পুরস্কার’। আর পাঁচ জন বাঙালির মতো সৌমিত্রর মৃত্যুতে তিনি গভীর ভাবে শোকাহত, সেকথা টুইটারে লিখেছেন মমতা। শোক প্রকাশ করেছেন রাহুল গান্ধীও। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘দাদাসাহেব ফালকে জয়ী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। এমন এক অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন, যাঁকে গোটা দেশ শ্রদ্ধা করত। তাঁর পরিবারের প্রতি, বন্ধু, আত্মীয়ের প্রতি আমার সমবেদনা রইল’।

শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রবীন্দ্র সদনে অনুরাগীদের ঢল:

রবিবার বিকেলে সৌমিত্র চ্যাটার্জির মরদেহ নিয়ে আসা হয় রবীন্দ্র সদনে। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে দুঘণ্টা শায়িত থাকবে তাঁর দেহ। কোভিড বিধি মেনে রবীন্দ্র সদনেই তাদের প্রিয় ফেলুদাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন তাঁর অসংখ্য অনুরাগী এবং গুণগ্রাহী। সৌমিত্রের প্রয়াণে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী অপর্ণা সেন বলেন, ‘‌কত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। রবিদা চলে গেলেন, মানিকদা চলে গেলেন। শুভেন্দু চলে গেল। সৌমিত্রও চলে গেল। অভিভাবককে হারালাম।’‌ তাঁর প্রথম ছবি ‘‌অপুর সংসার’‌–এর নায়ক। সৌমিত্রের কথা বলতে গিয়ে ফোনেই গলা ধরে এল শর্মিলা ঠাকুরের। বললেন, ‘‌দুঃখের দিন, কাছের মানুষকে হারালাম।’‌

বিকেল ৫.‌৩০ মিনিট নাগাদ শোকমিছিল রওনা দেবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে। সেখানে সন্ধ্যা ৬.‌১৫ মিনিট নাগাদ গান স্যালুটের পর শেষকৃত্য। বেলভিউ নার্সিংহোম থেকে মরদেহ প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় গল্ফ গ্রিনে সৌমিত্র বাড়িতে। সেখানে তাঁর পরিবার এবং আত্মীয়রা শেষ শ্রদ্ধা জানান। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে। সেখানে টলিউডের শিল্পীরা এবং কলাকুশলীরা শেষ বিদায় দেন তাঁদের প্রিয় নায়ককে। তারপর মরদেহ নিয়ে শোকমিছিল পৌঁছয় রবীন্দ্র সদন।   ‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here