দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সামনেই ভবানীপুরে উপনির্বাচন। ভবানীপুর কেন্দ্রে প্রার্থী স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবানীপুরের অলিগলিতে শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের প্রচার। উপনির্বাচনের দামামা বাজতেই জনসংযোগে ব্যস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারের ফাঁকে এদিন গুরুদ্বারে হাজির হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফুল ও উত্তরীয় দিয়ে স্বাগত জানান গুরুদ্বার কমিটির লোকজন। 

চেতলার কর্মিসভা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছিলেন, প্রচার সারবেন ছোট আকারে। কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছতে। সেইসঙ্গে বলেছিলেন, “আমি তো সব জায়গায় যেতে পারব না! কিছু কিছু জায়গায় যাব। কথা বলে আসব!”

দু’দিন আগেই ষোল আনা মসজিদ, কয়েকটি দুর্গাপুজোর ক্লাবে জনসংযোগ সেরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ভবানীপুরের গুরুদ্বারে গেলেন উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী। সেখানে শিখ সম্প্রদায়ের পুরুষ-মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মাইক হাতে নিয়ে তাঁদের উদ্দেশে দু’চার মিনিট কথাও বলেন মমতা। তখনই তাঁকে শুনতে হল, ‘দিদি আপনাকে দিল্লি যেতে হবে।’

গুরুদ্বারে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের জমায়েতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‌শুভকামনা জানাতে গুরুদ্বারে এসেছি। পেতেও এসেছি। আগেও অনেকবার এখানে এসেছি। গুরুদ্বারে এলে মন শান্ত হয়ে যায়। এখানকার হালুয়া খুব পছন্দ করি। গুরু নানকজির অনুষ্ঠানেও গিয়েছি। পঞ্জাবের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক বহু দিনের।

সেই স্বাধীনতার সময় থেকে পাঞ্জাবের সঙ্গে বাংলার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন জাতীয় সঙ্গীত লিখেছিলেন তা শুরুই করেছিলেন পাঞ্জাব দিয়ে। আন্দামানে গিয়ে দেখিছে, যত মানুষ দেশের জন্য বলিদান দিয়েছেন তাদের মধ্যে পাঞ্জাব ও বাংলার মানুষের সংখ্যা বেশি। কুড়ি বছর আগে পঞ্জাবের বিভিন্ন জেলা সফর করেছি। পাঞ্জাবের মানুষদের থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি আমি।’‌

পাঞ্জাব ছাড়া বাংলা সম্ভব নয় আবার ভারতও সম্ভব নয়। দেশের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথাই এদিন তুলে ধরেন মমতা। সেইসঙ্গে বার্তা দেন, বাংলায় সেই বেঁধে বেঁধে থাকার সংস্কৃতি বহমান। তা যাতে অটুট থাকে সেই চেষ্টাই করতে হবে সকলকে মিলে।

ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে একটি বড় অংশ শিখ ভোটার রয়েছে। মনোনয়নের দিনেই দেখা গিয়েছিল, অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিকের স্বামী নিশপাল রানে মমতার সঙ্গে গিয়েছেন আলিপুর সার্ভে বিল্ডিংয়ে। এদিন হরিশ মুখার্জি রোডের গুরুদ্বারে গিয়ে জনসংযপোগ সারেন উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী।

এদিন মমতাকে ঘিরে শিখ মহিলাদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। একদিকে তাঁরা যেমন পরিশীলিত বাংলায় স্লোগান দিলেন দিদির জন্য তেমন মমতাও  দু’চার লাইন পাঞ্জাবি বললেন।
কোভিডের কারণে বড় মিটিং, মিছিল, জমায়েত করা যাচ্ছে না। সে কারণে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রার্থীরা। মমতার হয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কাজের বেশিরভাগটাই দেখছেন ফিরহাদ হাকিম। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুরে ভোট। ৩ অক্টোবর হবে ভোট গণনা।

প্রসঙ্গত, ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় প্রচুর শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের ভোট নিজেদের দিকে টানতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচুর অবাঙালি ভোটারের বসবাস। অবাঙালি ভোটারদের কাছে টানতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহুতলগুলির বেশিরভাগ বাসিন্দাই হিন্দিভাষী। তৃণমূলের পক্ষ থেকে মহিলা বিগ্রেডকে পাঠানো হবে বহুতলগুলিতে।

বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে মহিলারা যাবেন বহুতলগুলিতে। প্রতিটা দলে ৫ জন করে মহিলা তৃণমূল কর্মী থাকবেন। তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা বহুতলগুলির ঘরে ঘরে যাবেন। সেখানকার বাসিন্দাদের অভাব-‌অভিযোগ শুনবেন। সরকারি প্রকল্প গুলির সুবিধা পাচ্ছেন কিনা সেবিষয়েও খোঁজ নেবেন। উপনির্বাচনের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভার ভোটেও কাজে লাগবে এই ধরণের প্রচার।  

উল্লেখ্য, দলের তরফে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুব্রত মুখার্জিকে। ৮২, ৭৪ ও ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিমকে। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারের যাবতীয় দায়িত্ব সামলাবেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার। ৭১ ও ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারের দায়িত্বে থাকছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here