দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সুপারসনিক নির্ভয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ থমকে গেলেও পৃথ্বী ২ মিসাইল তার শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। ওড়িশার চাঁদিপুরের টেস্ট রেঞ্জ থেকে রাতের অন্ধকার চিরে নির্ভুল লক্ষ্যে ছুটে গেছে পৃথ্বী ২। পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষায় আরও একবার সাফল্য পেল ভারত।

শুক্রবার সন্ধেবেলা ওড়িশার সমুদ্র উপকূলের চাঁদিপুর টেস্ট রেঞ্জ থেকে পৃথ্বী ২ মিসাইলের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ পুরোপুরি সফল হয়েছে। চাঁদিপুরের তিন নম্বর লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে ছোড়া হয় এই ক্ষেপণাস্ত্র। চাঁদিপুর টেস্ট রেঞ্জ থেকে বঙ্গোপসাগরের বুকে ক্ষেপণাস্ত্রটির আঘাত হানার বিন্দু পর্যন্ত পুরো এলাকাতেই ভারতীয় সেনার নজরদারি ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের তত্ত্বাবধানে ছিল ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)।

বিজ্ঞাপন:

রাতের অন্ধকারে দু’বার পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হল পৃথ্বী ২ ক্ষেপণাস্ত্রের। প্রথমবার হয় ২৭ সেপ্টেম্বর। তাছাড়া হত বছর ডিসেম্বরে ওড়িশার চাঁদিপুর উপকূল থেকেই পরমাণু অস্ত্রবাহী এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাতেও সাফল্য পেয়েছিল ডিআরডিও।

সারফেস-টু-সারফেস শর্ট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল পৃথ্বী ২। ৯ মিটার লম্বা ওই ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রথম সফল উৎক্ষেপণ হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারি। সরকারি ভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসে ২০০৩ সালে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত ওই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তিতে ধাপে ধাপে উন্নতি করা হয়।  বহু দূর থেকেই শত্রুঘাঁটি চিনে নিতে পারে এই মিসাইল। একবার নিক্ষেপের পরে নির্ভুল নিশানায় আঘাত করতে পারে। এতে রয়েছে ‘ইনার্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম’। দিনে ও রাতে, আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতে শত্রুঘাঁটিতে পরমামউ হামলা চালাতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। শত্রুপক্ষের অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নজরও এড়িয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন:

পৃথ্বী মিসাইলের তিন রকম ভ্যারিয়ান্ট রয়েছে। পৃথ্বী ১ মিসাইল যার ওজন ১০০০ কিলোগ্রাম। ১৫০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি নিশানা লাগাতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র।

পৃথ্বী ২ মিসাইলের এয়ার ফোর্স ভার্সনের পাল্লা ৩৫০ কিলোমিটার। ৫০০ কিলোগ্রাম অবধি পেলোড বয়ে নিয়ে যেতে পারে এই মিসাইল।

পৃথ্বী ৩ ক্ষেপণাস্ত্রের ন্যাভাল ভার্সন রয়েছে। এর ওজন ১০০০ কিলোগ্রাম। ৩৫০ কিলোমিটার পাল্লায় ছুটে গিয়ে আঘাত করতে পারে।

লাদাখ সীমান্ত সংঘাতের আবহেই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি প্রদর্শন করছে ভারত। গত ৪০ দিনে অন্তত ১১টি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে ডিআরডিও। কিছুদিন আগেই ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন করা হবে এই ব্রাহ্মস মিসাইল। তার জন্যও পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের প্রয়োজন ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্র তার উৎক্ষেপণ স্থল থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। তবে এর চেয়েও বেশি ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ব্রাহ্মসও প্রস্তুত আছে ডিআরডিও-র কাছে।

ভারতের ‘মেন-ব্যাটল ট্যাঙ্ক’ অর্জুন থেকে সফল উৎক্ষেপণ করা হয়েছে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইলের। রুশ-ভারত যৌথ প্রযুক্তিতে তৈরি টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক থেকেও এই মিসাইলের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। দেশের দুই শক্তিশালী যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক থেকেই যদি সফলভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়, তাহলে ভারতীয় বাহিনীর শক্তি আরও বাড়বে। 

অন্যদিকে, ওড়িশার হুইলার উপকূল থেকে স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণও সফল। ভারত মসাহাগরে যেভাবে চিনের আধিপত্য বাড়ছে তাতে সমুদ্র-যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে বা শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজ গোপনে হামলা চালাবার চেষ্টা করলে, সর্বশক্তি দিয়ে তা রুখে দিতে পারবে ‘স্মার্ট’ ক্ষেপণাস্ত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here