দীপ বিশ্বাস , দেশের সময়: দেশ জুড়ে করোনা সংক্রমণ রুখতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে,সেই তালিকায় রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত শহর বনগাঁও। লড়াইয়ের দৃশ্য সর্বত্রই এক৷ এক নজরে বনগাঁ:

বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের নেতৃত্বে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের দুস্থ শ্রমজীবী মানুষদের কাছে শুক্রবার যোগেন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে খাদ্যসামগ্রী প্যাকেট তুলে দেন পুরপ্রধান৷ সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার অন্যান্যকর্মীরাও।এদিন প্যাকেট করে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ও ৫০০ ডাল দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করেন বাসিন্দারা।

শংকর আঢ্য জানান” বনগাঁ পৌরসভার ২২ টি ওয়ার্ডের দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের আজ থেকে চাল ডাল আলু দেওয়ার কাজ শুরু করলাম ।আজ পাঁচ হাজার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মোট ৩২ হাজার পরিবারের হাতে সামগ্রী তুলে দেওয়া হবে।

বিজেপির পক্ষ থেকে এদিন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট এর হাতে তুলে দেওয়া হলো বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী৷সোমবার সকালে বারাসাত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি দেবদাস মন্ডল এবং কয়েক জন সদস্যরা মিলে হাসপাতালের সুপারের হাতে তুলে দেন মাক্স, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবংউদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষগ্লাভস, এই প্রসঙ্গে দেবদাস মন্ডল বলেন মানুষের জন্য সামর্থ অনুযায়ী সামান্য কিছু করার চেষ্টা করছি, দু’হাজার সালের ভয়বহ বন্যার দুর্যোগের পর ফের এই করোনার আক্রমণ কেও মানুষ রুখেদেবেন, মানুষের পাশে আছি এবং থাকব যোদ্ধা হয়ে৷মনে বিশ্বাস আছে এই করোনা যুদ্ধে আমরা জয়ী হব৷

বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ দিন রাত্রি ছুটে চলেছেন শহর থেকে গ্রামের ঘরে ঘরে,রবিবার গোপাল নগরে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে এক যোগে পথ চলতি মানুষের হাতে তুলে দেন খাবার সহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র৷

লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন বনগাঁ এলাকার প্রচুর সংখ্যক বৃহন্নলারা । ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে তাদেরকেও। কাজ নেই। তাঁদের ঘরে মজুত আনাজ প্রায় শেষ। তাদের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস চাল, ডাল, আলু, তেল, সাবান, মাস্ক সহ একাধিক জিনিসপত্র নিজে গিয়ে তাদের হাতে তুলে দেন নেতা গোপাল শেঠ। এক বৃহন্নলা জানান আমাদের কে প্রয়াত ভূপেন শেঠ বিগত ২০০০ সালের বন্যায় খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে ছিলেন, এবার তাঁর ছেলে গোপালকে আমাদের পাশে পেয়েছি, করোনা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে খুব শীঘ্র।

আবার অন্য দিকে এদিন বাগদা হেলেঞ্চা, আষাড়ু, রনঘাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২০০ আদিবাসী, পাড়ুই ও দিনমজুর পরিবারের হাতে বাগদা থানার ও সি কে নিয়ে সোমবার দুপুরে চাল, ডাল, আলু প্রদান করলেন বৃহন্নলা সংগঠনের পক্ষ থেকে৷

বৃহন্নলা সংগঠনের পক্ষ থেকে নয়ন চক্রবর্তী বলেন, এই মানুষ গুলোই আমাদের মা, বাবা, তারা এক মুঠো অন্ন দেয় আমাদের প্রতিদিন তাঁদের শ্রমের সাহায্যে আজ দেশের বিপদের সময় সেই জন্যই আমাদের সামর্থ মতো আমাদের ঝুলিতে যা ছিল তা তাদের হাতে তুলে দিতে পেরে ভাল লাগছে।

“করোনা আতঙ্কের জেরে বন্ধ সমস্ত রক্ত দান শিবির ,একদিনের মধ্যে আয়োজন করে এলাকায় প্রথম ক্যাম্প করল বনগাঁ চাঁপাবেড়িয়া যুব গোষ্ঠীর সদস্যরা।”

সোমবার চাঁপাবেড়িয়া যুব গোষ্ঠীর উদ্যোগে শুরু হয় অস্থায়ী ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলে নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে সেই ক্যাম্পে রক্ত দিচ্ছেন গ্রামের ছেলেরা তাদের রক্ত নিচ্ছেন বনগাঁ ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাক্তার গোপাল পোদ্দার।

চিকিৎসক গোপাল বাবু বলেন” লকডাউন এর পর এই প্রথম যুবকরা তাদের এলাকায় ক্যাম্প করল। সকল নিয়ম মেনেই তাদের রক্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।

ব্লাড ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে,
সম্প্রতি করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তেই একে একে বাতিল হয়েছে এলাকার ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প গুলি। লকডাউনের পর বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না মানুষ।রক্তের সংকট শুরু হওয়ার আশঙ্কায় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, রক্তের চাহিদা মেটাতে এরপরই এলাকার বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে রক্ত দানের আহ্বান জানান ডা গোপাল পোদ্দার।
বৃহস্পতিবার থেকে ব্লাড ব্যাংকে এসে রক্ত দিয়েছেন অনেক মানুষ। এই খবর পেয়েই রবিবার বনগাঁ হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন চাপা বেড়িয়ার একদল যুবক। সেই মত সোমবার সকালে ওই এলাকায় চলল ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প। একে একে লাইনে দাঁড়িয়ে রক্ত দিল গ্রামের যুবকেরা। উদ্যোক্তা সজল ভট্টাচার্য বলেন” করোনা আতঙ্কে অনেকেই হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে রক্তের প্রয়োজন জানতে পেরে আমাদের এলাকাতেই সব ছেলেদের একত্রিত করে রক্ত দান করলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here