দেশের সময়: বনগাঁ: উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোট নিয়ে কম হইহট্টগোল হয়নি। পুরসভার বাইরে মারামারি থেকে হাইকোর্টে মামলা—সব দেখেছে রাজ্য। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই বৃহস্পতিবার জেলা শাসকের দফতরে আস্থা ভোট ছিল। সেখানে হাজিরই হল না বিজেপি। ফলে ১৪-০ ব্যবধানে জিতে বনগাঁ পুরসভা দখলে রাখল তৃণমূল। অন্যদিকে ফের বিজেপি ছুটল হাইকোর্টে মামলা দায়ের করতে। তাদের দাবি, বৃহস্পতিবারের আস্থা ভোটের প্রক্রিয়াও নিয়ম মাফিক ছিল না। কলকাতা হাইকোর্ট নতুন মামলা দায়েরের অনুমতিও দিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে।

গত ২৬ অগস্ট বনগাঁ মামলার রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন নতুন করে ১২ দিনের মধ্যে অনাস্থা প্রস্থাব আনতে হবে। নির্দেশ দেন ভোটের দিন কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা দেওয়ার যাবতীয় দায়িত্ব থাকবে জেলার পুলিশ সুপারের উপরে। সেই মতো জেলা শাসকের দফতর থেকে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে চিঠি পাঠানো হয়। নিরাপত্তারও বন্দোবস্ত করা হয়। কিন্তু বিজেপি-তে যোগ দেওয়া সাত কাউন্সিলর আসেননি।

আস্থা ভোটের দিন যে গণ্ডগোল হয়েছিল, তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের উপর ব্যাপক ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বিচারপতি। বিজেপি-তে যোগ দেওয়া ১১ জন কাউন্সিলরকে বিচারপতির স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা হলফনামায় জানান। কে, কীভাবে বাধা দিয়েছিল ঘটনার দিন, তাও উল্লেখ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। বিজেপি-র আইনজীবীকে বিচারপতি সপমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রমাণ করুন, সেদিন ১১ জনকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”

শাসকদলের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, “এটা কী আইন? আমাকে তো নতুন করে অঙ্ক শিখতে হবে, যেখানে ‘’ ‘১১’-র থেকে বেশি হয় ১০?” চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য ছিল, “এখনও চেয়ার আঁকড়ে বসে আছেন? আপনি এত নির্লজ্জ কেন?”

বনগাঁর মোট আসন ২২। জুলাই মাসে বিজেপি-র পক্ষে ছিলেন ১১ জন। কিন্তু ক্যালেন্ডার জুলাই থেকে অগস্টে ঢুকতেই সমীকরণ পাল্টে গিয়েছে। বিজেপি-তে যাওয়া চার কাউন্সিলর তৃণমূলের ঘরে ফিরেছেন। ফলে তৃণমূল এখন ১৪। সেই ব্যবধানেই এদিন ১৪-০ ভোটাভুটিতে আস্থাভোটে বনগাঁ পুরসভা নিজেদের দখলেই রাখল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে ১৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী-র উপস্থিতিতে হল ভোটাভুটি। যাতেই এক কংগ্রেস কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে ২২ আসন বিশিষ্ট বনগাঁ পুরসভায় ১৪টি আসন নিয়ে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমান করে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে এদিনের অনাস্থা ভোটে উপস্থিত হননি সাত জন বিজেপি কাউন্সিলরদের মধ্যে এক জনও।

যাতেই এক কংগ্রেস কাউন্সিলরকে সঙ্গে নিয়ে ২২ আসন বিশিষ্ট বনগাঁ পুরসভায় ১৪টি আসন নিয়ে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমান করে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে এদিনের অনাস্থা ভোটে উপস্থিত হননি সাত জন বিজেপি কাউন্সিলরদের মধ্যে এক জনও।
আস্থাভোটকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকে বারসতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে ছিল কড়া পুলিশি ব্যবস্থা। কোনও রকম আপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে মোতায়েম ছিল ২০০ জনের বিশাল পুলিশ বাহিনী।

মোতায়েম করা হয়েছিল র‌্যাফ। এছাড়া কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার ছবি ক্যামেরা বন্দি করতে বেশ কয়েকজন ভডিয়ো গ্রাফারকেও এদিন নিয়োগ করা হয়েছিল জেলাশাসকের তরফে। এরই মধ্যে আগে থেকে চিঠি দিয়ে জানানো নির্দিষ্ট সময়ে একে একে কাউন্সিলররা জেলাশাসকের দফতরের ১ নম্বর কক্ষে উপস্থিত হন। কিন্তু এদিনের ভোটাভুটিতে সাত জন বিজেপি কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁরা না আসায় মাইকিং করে তাদের আসার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু তাতেও তাঁরা না আসায়, শেষ পর্যন্ত ২২ আসন বিশিষ্ট বনগাঁ পুরসভায় ১৩ জন তৃণমূল কাউন্সিলর ও ১ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পুরসভা নিজেদের দখলেই রাখল তৃণমূল।
যদিও এদিন ফের একবার আস্থাভোটে অনিম হয়েছে এই অভিযোগে ফের একবার আস্থাভোটকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ছেন বিজেপি কাউন্সিলদের একাংশ। তাঁদের দাবি, হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে ১৫ দিনের মাথায় ভোট হয়েছে ঠিক। কিন্তু নির্দেশ মত আগে আনা অনাস্থার ওপর ভোট হয়নি।

তার জেরেই অনাস্থাভোটে অনিয়মের অভিযোগে এদিন ফের হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার আবেদন জানান বিজেপি কাউন্সিলররা। সেই আবেদনে সারা দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। যার পরই এদিন মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া শুরু করেন মামলাকারী বিজেপি কাউন্সিলররা। সূত্রের খবর এদিন যদি মমলা দায়ের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়, তবে বৃহস্পতিবারই এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভবনা।
তবে বিজেপি যে নতুন মামলা দায়ের করেছে তা নিয়ে আবার জটিলতা হয় কি না এখন সেটাই দেখার। এ দিনের আস্থা ভোটের ফলাফলকে যদি আদালত ফের খারিজ করে দেয়, তাহলে নতুন সঙ্কট তৈরি হবে বনগাঁয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here