দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তর ২৪ পরগনার গৃহশিক্ষকেরা প্রায় দু’বছর ধরে স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।লাগাতার মিটিং-মিছিল করে তাঁরা তাঁদের এই আন্দলোন চালিয়ে যাচ্ছেন৷

জেলার বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকদের কাছে আবেদন করেছিলেন, স্কুলের যে সব শিক্ষক গৃহশিক্ষকতা করছেন, প্রধান শিক্ষকেরা যেন তা বন্ধ করতে পদক্ষেপ করেন।সেই সঙ্গে প্রায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। এছাড়া

জেলাশাসক, স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছেও বহু বার এ নিয়ে দাবি জানানো হয়েছে। স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করানোর ভিডিয়ো তুলে শিক্ষা দফতরে তাঁরা জমা করেছেন। সেই সঙ্গে স্কুলশিক্ষক যাঁরা গৃহশিক্ষকতা করছেন, তাঁদের নামের তালিকা পর্যন্ত সংগ্রহ করে তুলে দেওয়া হয় সমস্ত দফতরে।

অভিযোগ এত কিছুর পরেও গোপনে স্কুলশিক্ষকদের একাংশ এখনও গৃহশিক্ষকতা করে চলেছেন অবাধে।ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে নিচ্ছেন মোটা টাকা৷

বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনা স্কুলশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্দেশ দিয়েছে, গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত নন বলে এ বার মুচলেকা দিতে হবে সরকারপোষিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এর অন্যথা হলে সরকারি নিয়মে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

শিক্ষা দফতরের দেওয়া এই বিজ্ঞপ্তিতে এবার আশার আলো দেখছেন জেলার গৃহশিক্ষকেরা। গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্যের কথায়, শিক্ষা দফতরের নির্দেশে খুবই আশাবাদী। তবে স্কুলশিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না, এমন সরকারি নির্দেশিকা আগেও ছিল। তার মধ্যে কিছু স্কুলশিক্ষক রমরমিয়ে গৃহশিক্ষকতা করে আসছেন। আশা করব, এ বার স্কুলশিক্ষা দফতর গৃহশিক্ষকতায় যুক্ত স্কুলশিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ’’তাঁদের লাগাতার আন্দোলনের জেরেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অনেক স্কুলশিক্ষক গৃহশিক্ষকতা ছেড়েছেন। তবে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের স্কুলশিক্ষকদের একাংশ এখনও গোপনে গৃহশিক্ষকতা  চালিয়ে যাচ্ছেন। বনগাঁর গৃহশিক্ষক পার্থ দেবনাথ জানান, ‘‘এ বারের নির্দেশিকা যেন সম্পূর্ণ ভাবে কার্যকরি হয়,শুধু কথার কথা হলে এই আন্দোলনের জের পৌঁছাবে আগামী বিধানসভার ভোটব্যাঙ্কেও।’’

স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে  জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা শিক্ষা জেলার মধ্যে ৭২৫টি সরকারপোষিত স্কুল আছে। এ ছাড়াও, কিছু মাদ্রাসা রয়েছে। ‘‘স্কুলশিক্ষকদের মুচলেকা দেওয়ার নির্দেশ প্রধান শিক্ষকদের কাছে  ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক সহশিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকে মুচলেকা নিয়ে দফতরে জমা করবেন। এরপরেও কেউ গৃহশিক্ষকতা করলে কড়া পদক্ষেপ করা নেওয়া হবে।’’

বনগাঁ এবং অশোকনগরের এক স্কুলশিক্ষক বনগাঁর মতিগজ্ঞ এলাকায় গোপনে এখনও গৃহশিক্ষকতা করছেন। এক অভিভাবক জানিয়েছেন , ‘‘ওই শিক্ষক তাঁকে ফোন করে জানিয়েছেন, ছাত্র-কে তাঁর বাড়িতে আবারও পড়াতে পাঠাতে। এঁদের বোধোদয় কবে যে হবে!’’ আর এক স্কুলশিক্ষক অভিভাবকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে বকেয়া মাসিক বেতন দাবি করেছেন বলে অভিযোগ। লকডাউনেও তিনি অনলাইনে পড়িয়েছেন বলে জানাগিয়েছে। যদিও অধিকাংশ শিক্ষকদের বক্তব্য, তাঁরা কোন রকম বেতনে নেননা, ছাত্রদের পড়ান শুধু মাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য। ফলে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করছেন না। খোঁজ-খবর  নিয়ে জানা গেল, ওই সব স্কুলশিক্ষকেরা অনেকে গোপনে অভিভাবকের কাছ থেকে বেতন নেন। এখন অনেকেই অনলাইনে পড়াচ্ছেন বলে বিষয়টি আপাতত কারো চোখে পড়ছে না। 

বনগাঁয় গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির এক সদস্যের কথায়, স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার বিষয়টি স্কুল খুললে আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাবে। আমরা স্কুলশিক্ষকদের পড়ানোর ভিডিয়ো-অডিয়ো সংগ্রহ করছি। সেই মতো ব্যাবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

বনগাঁর দু’একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা ইতিমধ্যেই  সহশিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিতে শুরু করেছেন। যাঁদের মনে হয়েছে গৃহশিক্ষকতা  করতে পারেন, তাঁদের সাদা কাগজে নয়, স্ট্যাম্প পেপারের উপরে লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও সূত্রের খবর।

বনগাঁর এক গৃহশিক্ষক পার্থ দেবনাথ বলেন, একেই লকডাউন তার উপরে আমফান এই সময়ে বহু গৃহশিক্ষক-শিক্ষিকারা পেশা বদল করেছেন,এই সব গৃহশিক্ষকেরা বহু দিন ধরেই চাইছেন, স্কুলশিক্ষকদের একাংশের প্রাইভেট টিউশনের কারণেই তাঁদের রুজিরোজগারে টান পড়েছিল আগে থেকেই। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের  কারণে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। টাকার অভাবে অন্য পেশায় যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। টিউশন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় আর্থিক অনটনে দিন কাটচ্ছে তাঁদের।স্কুলশিক্ষকদের উচিত, গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করা। তাঁরা তো সরকারের কাছ থেকে বেতন পান। আমাদের মতন কিছু মানুষ আছেন যাঁদের কয়েকজনকে পড়িয়ে সংসার চলে।তাঁদের রোজগারে তাঁরা কেন ভাগ বসাবেন?

স্কুলশিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করলে তাঁদের আর্থিক সুরাহা হবে বলে মনে করেন বহু গৃহশিক্ষক।এখন দেখার স্কুল শিক্ষকদের ঘুম ভাঙে কিনা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here