দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নদিয়ার তেহট্টের বেতাই ভাটুপাড়া গ্রাম লাগোয়া সীমান্তের ১২৫ ও ১২৬ নং পিলারের মাঝামাঝি কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে সাড়ম্বরে হচ্ছে দুর্গাপুজো। 

কাঁটাতারের বেড়া থেকে মণ্ডপের দূরত্ব খুব বেশি হলে ১৫ ফুট। এই পুজোর বিষয়ে গ্রামের স্থানীয় প্রবীণরা বাসিন্দারা জানান, অবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা ১২৭৪ বঙ্গাব্দ ইংরেজি ১৮৬৭ সাল থেকে এখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। পরে পুজোর মন্দির অক্ষত রেখে কাঁটাতারের বেড়া দেয় সরকার। দেশভাগের আগে তৎকালীন মেহেরপুরে সুভাষ বোস নামে এক জমিদার ছিলেন। তিনি এই মন্দির তৈরি করে প্রথম পুজো শুরু করেন। 

 ‘‌তখনকার সময়ে বেশ কয়েকজন বড় মাপের জমিদারের মধ্যে সুভাষবাবু একজন ছিলেন। সেই সময় এই গ্রাম থেকে প্রায় তিন মাইল পায়ে হেঁটে জঙ্গল পেরিয়ে গ্রামবাসীরা জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে যেতেন। ঘন জঙ্গল থাকার কারণে সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেহেরপুরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে সেখানে পুজো দেখে আবার সূর্য ডোবার আগে সকলে একসঙ্গে ফিরতে হত।’

স্থানীয় এক প্রবীণ মানুষ গোপী নাথ বিশ্বাস বলেন,তখন পুজো শুরু হয়েছিল বেশ ধুমধাম করে। যার মূল কর্মকর্তা ছিল গোপাল দাস। কিন্তু দেশভাগের আগে আমাদের ভাটুপাড়া গ্রামের প্রায় সকলেই ভীষণ আর্থিক কষ্টে দিন কাটাতেন। আমাদের গ্রামটাতে সবাই ছিলেন হিন্দু। কিন্তু আশেপাশের মোবারকপুর, লালবাজার, ইলশামারি–‌সহ পাঁচটি গ্রামে মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশকিছু মানুষ বসবাস করতেন। কয়েকবার এমন ঘটেছে যে অর্থের অভাবে পুজো হচ্ছে না জেনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুজোর সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে পুজো করতে সাহায্য করেছেন।’ এখনও এই পাঁচ টি গ্রাম থেকে পুজোর ৫দিন এই মন্ডপে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা মণ্ডপে এসে আমাদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজোর অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে প্রসাদ বিতরণ সবেতেই জওয়ানদের অংশগ্রহণ থাকে। সীমান্ত সড়কের ওপর দিয়ে চলে ভাসানের শোভাযাত্রা। পুজোর মণ্ডপের পাশে কর্তব্যরত বিএসএফের ৮৪ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা জানান, বাংলার সীমান্তে ডিউটি করার সুবাদে দুর্গাপুজোর আনন্দ দারুণভাবে উপভোগ করতে পারব। বছরের অন্য সময় ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাই, তবে এবারে দুর্গাপুজোর সময় বাংলার সীমান্তে থাকার সুবাদে আমাদের খুব ভাল লাগছে। আমাদের অবাঙালি জওয়ানেরাও বাংলার শারদ উৎসবের আনন্দে শামিল হবেন। গ্রামের মানুষ পুজোয় প্রসাদ ও মিষ্টিমুখ করাবে বলে আমাদের সহকর্মীদের আগে থেকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here