বাঙালি আর ইলিশ এই দুটো শব্দ যেন একে অপরের পরিপূরক শোনায়। বর্ষা এবারে দেরিতে এলেও এসেছে সেইসাথে খাদ্যরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে সঙ্গে এনেছে ইলিশকেও৷ দেবী দুর্গার আগমনীর সাথেই এই ইলিশের আগমনিতেও পাড়ায় পাড়ায়, বিভিন্ন রেঁস্তোরায় শুরু হয়ে গেছে বাঙালির ইলিশ উৎসব। এই রুপোলি শস্যের রূপে, গন্ধে আর স্বাদে মজেনি এমন মানুষ কমই আছেন৷ আর তাই বোধহয় খাদ্য রসিক ‘যমদত্ত’ ওরফে যতীন্দ্রমোহন দত্ত ইলিশ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন; নানা ঘাটের, নানা নদীর ইলিশ খেয়ে তিনি জানিয়েছিলেন যে পুব দেশের ইলিশে তেল আর কলকাতার ইলিশে সুগন্ধ বেশি৷আয়ুর্বেদে ইলিশ মাছের গুণ লিখিত আছে – ইলিশমাছ স্নিগ্ধ, রোচক, মধুর, বলবর্ধক, পিত্তকারী ও কিঞ্চিৎ কফকারী, লঘু, পুষ্টিকর ও বাতনাশক; ভগবান শ্রী কৃষ্ণ গীতায় যেমন বলেছেন ‘যে আমাকে যেমন ভজুক তাকে আমি তুষ্ট করি’, তেমনি বাঙালির ইলিশ বলেন, যে যেমন করেই আমাকে ভাজুক, আমি তাকে তুষ্ট করি৷ তবে শুধু ভাজাতেই নয় এক ইলিশেই অন্তত পঞ্চাশ রকমের পদ হতে পারে৷ তাই ইলিশের প্রলুব্ধি থেকে নিষ্কৃতি নেই৷ আর একজন খাদ্যরসিকের কাছে ইলিশ মাহাত্য অবর্ণনীয়; এবারের দেশের রান্নাঘরে রইলো রুপোলি, সুন্দরী ইলিশের নানা স্বাদের নানা পদ

ইলিশ মাছের ট্রামফ্রাডু:
উপকরণ: ইলিশ মাছ ৪২০ গ্রাম, নারকেল ১ টি, কাগজী লেবু ১ টি, মাঝারি সাইজের পিয়াঁজ ৬টি, ছোট পিয়াঁজ ১০টি, আদা ১ ইঞ্চি, শুকনো লঙ্কা ২টি, কাঁচা লঙ্কা ৪টি, ঘি ১ বড় চামচ, দারচিনি ৩গ্রাম, ছোট এলাচ ১টি, লবঙ্গ ৯টি, জৈত্রি ১ শীষ, নুন ১ চা চামচ, জল দেড় কাপ
প্রণালী: ইলিশমাছ ধুয়ে কেটে নিতে হবে৷ কাগজী লেবুর রস বানিয়ে রাখতে হবে৷ নারকেল কুরে তার দুধ বানিয়ে নিতে হবে৷ মাঝারি সাইজের পিয়াঁজ বেটে নিতে হবে। আদা ও শুকনো লঙ্কা বেটে রাখতে হবে৷ ছোট পিয়াঁজ ও কাঁচা লঙ্কা সরু লম্বা কুচি করে কাটতে হবে
কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে গোটা গরম মশলা, কুচানো পিয়াঁজ ও কাঁচালঙ্কা দিতে হবে। সোনালী রং ধরলে নুন দিয়ে নাড়তে হবে; এরপর পিয়াঁজ, আদা, শুকনো লঙ্কা বাটা দিয়ে কষতে হবে৷ কড়া ধরে এলে নারকেলের দুধ অল্প পরিমানে দিতে হবে, মশলা কষে লাল রং ধরলে বাকি থাকা নারকেলের দুধ ঢেলে ভালো ভাবে মিশিয়ে ইলিশের টুকরো সাজিয়ে চাপা দিতে হবে। মাছ ভাপা হয়ে নরম হয়ে এলে কাগজী লেবুর রস ওপর থেকে ছড়িয়ে নামাতে হবে৷ গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে

কাসুন্দি দিয়ে ইলিশের অম্বল
উপকরণ: গোটা ইলিশ মাছ ১ টি টুকরো করে কাটা, গুঁড়ো হলুদ ২ বড় চামচ সর্ষে ১ মাঝারি চামচ, শুকনো লঙ্কা ২ টো, টোপা কুল ১২টি, আমের কাসুন্দি ৬০ গ্রাম, গুড় ৩০ গ্রাম, তেল ৩ মাঝারি চামচ, জল ১ কাপ
প্রণালী: সর্ষে বেটে নিতে হবে৷ কড়াইতে তেল দিয়ে আধ চা চামচ সর্ষে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিতে হবে৷ বাটা সর্ষে ও গুঁড়ো হলুদ জলে গুলে তেলে ঢালতে হবে। ফুটে উঠলে টোপা কুল এবং গুড় দিতে হবে৷ কুল একটু নরম হয়ে এলে এরমধ্যে আমের কাসুন্দি জলে গুলে ঢেলে দিতে হবে৷ এরপর অল্প নুন দিতে হবে৷ইলিশ মাছের টুকরো এরমধ্যে দিয়ে চাপা দিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট সিদ্ধ করতে হবে৷ মাছ সিদ্ধ হওয়ার আগে যদি জল শুকিয়ে আসে তাহলে মাঝে অল্প গরম জল দিতে হবে৷ মাছ সিদ্ধ হয়ে ঝোল গাঢ ও থকথেকে হয়ে এলে নামাতে হবে

কচুশাক ও নোনা ইলিশ
উপকরণ: কচুশাক ৪ ডাল, শুকনো লঙ্কা ৫টা, নোনা ইলিশ ২৫০ গ্রাম, ঘি ১ চা চামচ, তেজপাতা ১ টি, জিরে ২ চা চামচ, হিং ৪৫০ মিলিগ্রাম, নুন ১ চা চামচ, চিনি ১ চা চামচ, দুধ ১ বড় চামচ, জল ১ লিটার, সর্ষের তেল ৩ মাঝারি চামচ
প্রণালী: কচু শাক ছোট করে কেটে আঁশ ছাড়িয়ে জলে মিনিট কুড়ি সিদ্ধ করে নিতে হবে৷ শুকনো লঙ্কা বেটে নিতে হবে। সিদ্ধ কচু শাক জল ঝরিয়ে শুকনো করে রাখতে হবে; এবার শাকের মধ্যে বাটা লঙ্কা, নুন, মিষ্টি ও দুধ মেশাতে হবে। নোনা ইলিশ গরম জলে ধুয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে৷ ভাজা মাছ ভেঙে বড় কাঁটা বেছে নিতে হবে৷ মাছ গুলো আধভাঙা করে রাখতে হবে
এবার কড়াইতে ঘি, তেজপাতা, জিরে ও হিং ফোড়ন দিয়ে কচুশাক দিতে হবে৷ জল শুকিয়ে এলে ভাঙা মাছের টুকরো ছড়িয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে নামাতে হবে৷

ইলিশমাছ দিয়ে কচু শাকের ঘন্ট –
উপকরণ: কচুশাক ৩ টি ডাল, ইলিশ মাছ পিস্ করে কাটা ২৫০ গ্রাম, কালো জিরে ১ চা চামচ, শুকনো লঙ্কা ২টি, কাঁচা লঙ্কা ২টি, গুঁড়ো হলুদ ১ চা চামচ, ধনে ১ চা চামচ, জিরে ১ চা চামচ, মরিচ ১ চা চামচ, নুন ১ চা চামচ, নারকেল কোৱা হাফ কাপ
প্রণালী: কচু শাক ছোট করে কেটে আঁশ ছাড়িয়ে জলে মিনিট কুড়ি ভাপিয়ে নিতে হবে। ধনে, জিরে, মরিচ, কাঁচা লঙ্কা বেটে নিতে হবে। ইলিশ মাছ আলাদা ভেজে তুলে নিতে হবে। ভাজা মাছ ভেঙে বড় কাঁটা বেছে নিতে হবে৷ মাছ গুলো আধভাঙা করে রাখতে হবে। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে কালো জিরে ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিতে হবে, এরমধ্যে ভাপানো কচুশাক ও ভাজা, আধভাঙা ইলিশমাছ দিয়ে নাড়তে হবে; এরপর হলুদ ও সব রকম বাটা মশলা ও নুন দিয়ে ভালো করে কষতে হবে৷ জল শুকিয়ে গেলে নারকেল কোৱা ছড়িয়ে নামাতে হবে

ইলিশ মাছের উল্লাস –
উপকরণ: ইলিশ মাছ ৫০০ গ্রাম পিস্ করে কাটা, রসুন আড়াই চা চামচ, শুকনো লঙ্কা ২টো, হলুদ ১ বড় চামচ, সর্ষে বাটা ২ বড় চামচের একটু বেশি, ভিনিগার ৬ বড় চামচ, নুন ২ চা চামচ, সর্ষের তেল ৩ বড় চামচ
প্রণালী: মাছ ধুয়ে নুন মাখিয়ে রাখতে হবে৷ রসুন বাটা, শুকনো লঙ্কা বাটা, সর্ষে বাটা ও হলুদ গুঁড়ো ও ভিনিগার একসাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে৷ কিছুক্ষন রেখে একটা পরিষ্কার কাপড়ে এই বাটা মশলার মিশ্রণ ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে ও পরিশিষ্ট ছিবড়ে ফেলে দিতে হবে। একটা বড় স্যুপ প্লেটের মতন কোনো পাত্রে বাটামশলা মিশ্রিত ভিনিগার ঢেলে তাতে ইলিশমাছের টুকরোগুলো সাজিয়ে দিতে হবে।এর ওপর সর্ষের তেল ঢেলে দিতে হবে; ঢাকা দিয়ে হালকা আঁচে এটিকে দশ-বারো মিনিট ভাপে বসিয়ে রাখতে হবে৷ মাছ ভাপে সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে

ইলিশ মাছের দোলন –
উপকরণ: বড় ইলিশমাছ একটি, নুন ৭৫ গ্রাম, ভিনিগার সাড়ে চার কাপ, তেঁতুল ২৫০ গ্রাম, হলুদ ৩ বড় চামচ, সর্ষেবাটা ৩ বড় চামচ, ২ কোয়া রসুন, বড় শুকনো লঙ্কা ৩-৪ টি, সর্ষের তেল দেড় কাপ৷
প্রণালী: ইলিশমাছ পিস্ করে কেটে ধুয়ে নুন মাখিয়ে সারা রাত চাপা দিয়ে রেখে দিতে হবে। পরেরদিন সকালে ভিনিগারে তেঁতুল গুলে ছেঁকে নিতে হবে; এই মিশ্রনে হলুদ, সর্ষে, রসুন ও শুকনো লঙ্কাবাটা মেশাতে হবে৷ নুন মাখানো ইলিশের পিসগুলো এই মশলাগোলায় ডুবিয়ে কিছুক্ষন ম্যারিনেট করতে হবে৷ এরপর ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে মশলা শুদ্ধ ইলিশ ভেজে নিতে হবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here