দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যে ঢুকে পড়ল অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘণ্টায় ১১৫-১২৫ কিলোমিটার বেগে সাগরদ্বীপে আছড়ে পড়েছে এই ঘূর্ণিঝড়। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে ভেঙে পড়েছে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি। উপড়ে গেছে গাছপালা। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্থ সুন্দরবনও।

সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে স্থলভাগে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে বুলবুল। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথে রয়েছে সুন্দরবন বদ্বীপ অঞ্চল। চরম ক্ষতি হতে পারে সেখানেও। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকায়। ঝড়ের প্রভাব পড়বে হাওড়া, হুগলি, কলকাতাতেও। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দিঘা। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলছে নাগাড়ে বৃষ্টি। একই অবস্থা বকখালিতেও। স্থানীয়রা বলছেন, “প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। বৃষ্টি চলছে মুষলধারে। ইন্টারনেট নেই। যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হতে বসেছে। অবস্থা খুবই ভয়ঙ্কর। আতঙ্কে রয়েছেন সকলে।”

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বুলবুলের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে সাগর, ধবলাহাট, শিবপুর, সাগর ব্লকের চেমাগুড়ি, মৌসুনি, বকখালি এবং ফ্রেজারগঞ্জ এলাকায়। রাত ৮টা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে ঝড়ের আওতায় পড়বে ব্রজবল্লভপুর, শ্রীধরনগর, হেরমবাগ, পাথরপ্রতিমা। রাত ১১টা থেকে ২টোর মধ্যে তীব্রতা কমবে বুলবুলের। সেইসময় ক্যানিং মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে যাবে এই ঘূর্ণিঝড়। ভোর ৪টে নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ঝড় সরে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।

শনিবার সন্ধ্যায় জন শূন্য যশোর রোড
দুর্যোগ মেকাবিলা করতে তৈরি নৌবাহিনী। বঙ্গোপসাগরে মোতায়েন হয়েছে নৌসেনার এয়ার ক্রাফট। টহলদারি চলছে বিশাপত্তনমেও। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে নবান্নে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। শনিবার বিকেলেই সেখানে হাজির হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপকূলবর্তী বিভিন্ন জেলায় চলছে কড়া নজরদারি। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে রেলের তরফেও। দিঘা, মন্দারমনি, তাজপুর এলাকায় চলছে কড়া নজরদারি। ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের উপকূল এলাকা থেকে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। দুর্যোগের জন্য শনিবার সন্ধে ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা অর্থাৎ ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দর। বাতিল করা হয়েছে সব উড়ান।ট্রেন লাইনে গাছ পড়ে বাতিল হয়েছে শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল।

বিকেল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গোটা সৈকত শহর। সন্ধে গড়াতেই অন্ধকারে ঢেকেছে দিঘা। সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া, নাগাড়ে বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সাগরদ্বীপ থেকে আর মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশই ধেয়ে আসছে সে। উপকূলবর্তী এলাকায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের কড়াকড়ি এড়িয়ে ঝড় দেখতে নাকি সৈকতের কাছাকাছি ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। আশঙ্কা অন্ধকারে নজর এড়িয়ে যে কোনও সময় সমুদ্রের কাছে চলে যেতে পারেন তাঁরা।

শুক্রবার সকাল থেকেই খারাপ হতে শুরু করে আবহাওয়া। মেঘলা আকাশ। থমথমে। বেলা বাড়তেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপটে বাড়তে থাকে হাওয়ার জোর। শুরু হয় বৃষ্টি। পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সমুদ্রে নামা ও বিচে ঘোরাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। সতর্কতামূলক টহলদারি শুরু করে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। সতর্কতামূলক প্রচারের পাশাপাশি, প্যানিক যাতে না ছড়ায় তার জন্যেও নজরদারি শুরু করে প্রশাসন।

শনিবার ভোর থেকেই আরও খারাপ হয়েছে আবহাওয়া। উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র। সমুদ্রের এই রূদ্ররূপ দেখতে হাতে গোনা কিছু পর্যটক রয়েছেন। বেশিরভাগই গতকাল চলে গিয়েছেন সৈকতনগরী ছেড়ে।

সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে দিঘার বেশিরভাগ দোকানপাট। শুনশান রাস্তা। পর্যটকদের মধ্যে যাঁরা খারাপ আবহাওয়া উপেক্ষা করেই রয়ে গিয়েছেন, বিচের ধারেকাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের। তবে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক, সুজন দত্ত বলেন, ‘‘অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। খারাপ আবহাওয়ায় সমুদ্র এমনই ফুঁসে ওঠে। তবে সাবধান থাকতে হবে প্রত্যেককেই। বিপদের সম্ভাবনা দেখলে আমরা আগাম সতর্ক করব সবাইকে। ’’

আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বুলবুলের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে সাগর, ধবলাহাট, শিবপুর, সাগর ব্লকের চেমাগুড়ি, মৌসুনি, বকখালি এবং ফ্রেজারগঞ্জ এলাকায়। সন্ধে ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ার কথা সাগর, ধবলাহাট, শিবপুর, সাগর ব্লকের চেমাগুড়ি, মৌসুনি এইসব এলাকায়। ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে ঝড় পৌঁছবে বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জে। ৮টা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে ঝড়ের আওতায় পড়বে ব্রজবল্লভপুর, শ্রীধরনগর, হেরমবাগ, পাথরপ্রতিমা। রাত ১১টা থেকে ২টোর মধ্যে তীব্রতা কমবে বুলবুলের। সেইসময় ক্যানিং মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে যাবে এই ঘূর্ণিঝড়। ভোর ৪টে নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ঝড় সরে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।

নবান্নের কন্ট্রোলরুমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি- কুন্তল চক্রবর্তী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here