বার এক মর্মান্তিক ধর্ষণ ও খুন দেখল এই দেশ।এবার ঘটনাস্থল তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ।একটি মেয়েকে ধর্ষন করে আগুনে তার দেহ পুড়িয়ে দিল নরপশু একদল ধর্ষক।এই ঘটনার পর গোটা দেশে আবার ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হল আমজনতা।কেউ কেউ দাবি তুললেল ধর্ষকদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারার।এর পরেই শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশ জানল তেলেঙ্গানার চার বিচারাধীন ধর্ষক পুলিশের হেপাজত থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাতে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।পুলিশ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েেছে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঐ চার ধর্ষককে নিয়ে তারা ঘটনার পুনঃর্নিমান করতে ঘটনাস্থলে যায়।সেখানে গিয়ে ঐ দুষ্কৃতীরা পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করে।তখনই তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।পুলিশের বিবৃতি থেকে অনেক প্রশ্ন তোলা যায়।আমরা সেদিকে যাচ্ছি না,আমরা পরিষ্কার বলছি পুলিশ গল্প সাজিয়েছে,আসলে ফেক এনকাউন্টারে মারা হয়েছে চার দুষ্কৃতীকে এটা নিয়ে সন্দেহের কোন জায়গা নেই।অনেকেই বলছেন,বলা ভাল বেশীরভাগ মানুষ বলছেন বেশ করেছে মেরেছে এই জঘন্য ্অপরাধীদের এভাবেই মেরে ফেলা উচিত।বিচারে অনেক সময় নষ্ট হয় তাই যা হয়েছে ভাল হয়েছে।
আমরা এখানেই কিছু প্রশ্ন তুলতে চাইবো।ধর্ষণ যারা করে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত তা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই।কিন্তু ফাঁসি বা এভাবে এনকাউন্টারে মেরে ফেললে ধর্ষণ কমে কি?পরিসংখ্যান বলে কমে না।ভেবে দেখুন ২০০৪ সালে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছিল এ রাজ্যে।বলা হয়েছিল এর ফলে ধর্ষক ভয় পাবে।বাস্তবে তা হয়নি।সেই ঘটনার পর এ রাজ্যে এখনও ধর্ষণ হয়েই যাচ্ছে।নির্ভয়াকান্ডেও ধর্ষকের ফাঁসির অর্ডার হয়ে গেছে।তারপরেও কিন্তু তেলেঙ্গায় একইরকম ধর্ষণ হল।এখন এনকাউন্টারে মেরে বলা হচ্ছে পুলিশ দারুন কাজ করেছে।কেউ প্রশ্ন করছেন না কেন সেদিন রাতে মেয়েটিকে নিরাপত্তা দিতে পারল না পুলিশ,কেন মেয়েটিকে বাঁচাতে পারল না?এই ব্যর্থতার দায় পুলিশের শাস্তি হবে না কেন?সাধারণ নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশ বিচার বিভাগের কাছে জবাবদিহি করার দায় এড়াতে মিথ্যে এনকাউন্টারে অপরাধীকে মেরে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা দিতে চাইছে।মানুষ গভীরভাবে বিষয়টা না ভেবেই পুলিশকে ধন্য ধন্য করছে।আর আমাদের নেতারা তাদের তো কথাই নেই।এদেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা চলছে।কেন বিজেপি দল থেকে তাদের বাদ দিচ্ছে না?আমাদের মনে নেই এ রাজ্যে সেই পার্কস্ট্রিট ধর্ষণের সময় ধর্ষিতা মেয়েটির চরিত্র নিয়ে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন।এরা এখন ধর্ষককে খুন করার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজছে।আসলে সমস্যাটাকে ধামাচাপা দিতে চাইছে।মানুষের ক্ষোভকে প্রশমিত করতে চাইছে।
ধর্ষণকে নির্মুল করতে দরকার ধর্ষকামী সংস্কৃতি প্রতিহত করা মানুষের ভাবনা ও চেতনাকে তৈরি করা।মদ অ্রর্থ আর ধান্দাবাজির রাজনীতি মানুষকে মহিলাদের সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হতে দেয় না,তাই প্রতিদিন ঘরে বাইরে মহিলাের নানা লাঞ্জনা সহ্য করতে হয়।দরকার হল সামাজিক ভাবনার বদল তা না করে ধর্ষককে খুন করে সমস্যার সমাধান হবে না।আসুন ভাবনার বদল করি মহিলাদের মানুষ ভাবতে শিখি পণ্য নয়।এই ভাবনাকে প্রসারিত না করে শুধু পুলিশের এই এনকাউন্টারে উল্লসিত হলে দেখবেন একদিন আপনার ঘরের ছেলে বা মেয়েটাকেও সমাজ বদলের লড়াইয়ের কারণে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ফেক এলকাউন্টারে হত্যা করে দেবে।তাই দোহাই পুলিশ নামক জাতটাকে খুনি হয়ে উঠতে উত্সাহ দেবেন না ।এ রাজ্যের অনেক মানুষ সাক্ষী যে সত্তর দশকে পুলিশ কীভাবে রাজনৈতিক বন্দিদের এনকাউন্টারে একের পর এক খুন করেছিল।আজ বেকায়দায় পড়ে হয়তো ধর্ষককে খুন করছে কাল কিন্তু আমাদের ঘরের ছেলে-মেয়েদের খুন করতে এদের হাত কাঁপবে না।তাই সাধু সাবধান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here