রাজ্যজুড়ে হাসপাতালগুলিতে এক অদ্ভুদ অরাজক অবস্থা তৈরি হয়েছে।জুনিয়ার ডাক্তাররা নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে সোচ্চার হয়ে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন।ঘটনার সূত্রপাত কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে এক রোগী মৃত্যুরকে ঘিরে।রোগী মৃত্যুর পর রোগীর বাড়ির ও এলাকার লোকজনদের হাতে আক্রান্ত হন জুনিয়র ডাক্তাররা,একজন ডাক্তার মার খেয়ে ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়েন,তাঁর জীবন সংশয় তৈরি হয়,কোনক্রমে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে ডাক্তারদের দাবি।

এর পরই সমস্ত সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেন।তাঁরা নিরাপত্তার দাবি করেন,দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাঁদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিন।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবি মত এনআরএসে না গিয়ে ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে হুঁশিয়ারি দেন এবং কাজে যোগ না দিলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।আর এর ফলেই গোটা বিষয়টা জটিল হয়ে ওঠে।

একটার পর একটা হাসপাতালে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে থাকে,স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে অচল হয়ে পড়ে।মুখ্যমন্ত্রী এমনকা কাজে যোগ না দিলে হোস্টেল খালি করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় একের পর এক হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ইস্তফা দিতে শুরু করে।সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তাররাও ইস্তফা দিতে থাকেন।রীতিমত গণইস্তফার চেহারা নিয়েছে রাজ্যের সব হাসপাতাল।মানুষ গভীর সংকটে,কোথায় চিকিতসার জন্য যাবেন কেউ জানেন না।বিনা চিকিত্সায় মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে হাসপাতাল চত্তরে ঘুরছেন অথবা বসে আছেন মূমূর্ষু মানুষজন।ডাক্তারদের প্রতিবাদ চড়িয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ জুড়ে।

এই সংকটকালীন সময়ে আমরা মনে করি মুখ্যমন্ত্রীর অনেক সংবেদলশীল হওয়া প্রয়োজন।মুখ্যমন্ত্রী এ রাজ্যের প্রধান প্রশাসক,তাঁর দায় ও দায়িত্ব অনেক বেশী।ডাক্তারদের মধ্যে যে নিরাপত্তাজনিত ভীতি তৈরি হয়েছে তা দূর করতে তাঁকেই এগিয়ে আসতে হবে,হুমকি বা ধমককানি দিয়ে নয় মানবিক ও সংবেদনশীল মন নিয়ে ডাক্তারদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে তাঁদের নিরাপত্তা সরকার সুনিশ্চিত করবে,বিনিময়ে ডাক্তারদের থেকে পাল্টা প্রতিশ্রুতি আদায় করতে হবে তাঁরা যেন কর্মবিরতি থেকে সরে আসেন,তাঁদের বোঝাতে হবে তাঁদের উপর নির্ভর করে মানুষের বাঁচা মরা তাই তাদের কর্মবিরতি মানে মানুষের জীবন-সংশয়।

মুখ্যমন্ত্রীকে বুঝতে হবে গণতান্ত্রীক ব্যবস্থার একজন প্রতিনিধিকে সবসময় ক্ষমতা ব্যবহার করার কথা বলতে নেই,বলতে হয় সহমর্মিতার কথা,ভালবাসার কথা।মুখ্যমন্ত্রী ভাবুন,নিরাপত্তার অভাব থেকে যে ডাক্তাররা আজ পথে নেমেছেন,তারা তার সন্তানতুল্য.তাদের ভালবেসে,তাদের সংবেদশীলতা দিয়ে কাছে টানুন।তাদের বলুন এ রাজ্যে গরীব মানুষ একমাত্র সরকারি হাসপাতালেই পরিষেবা পায়,তাই তাঁরা যেন সেই মানুষগুলোর প্রতি অবিচার না করেন।মুখ্যমন্ত্রী বলুন তিনি ডাক্তারদের নিরাপত্তার সব দায়িত্ব নেবেন,ডাক্তাররাও যেন স্বাস্থ্য পরিষেবার সব দায়িত্ব নেন।

পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সব সমস্যার মিমাংসা হোক।ক্ষমতার হুঙ্কার দিয়ে নয় মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তারদের কাজে ফেরান মানবিক আবেদন জানিয়ে।ভালবাসা সব রাগ,সব ক্ষোভকে প্রশমিত করতে পারে মুখ্যমন্ত্রী সেই ভালবাসা ও সহামুভূতির পরশে এই ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকটের মোকাবিলা করুন,অনেক সময় চলে গেছে দোহাই আর সময় নেবেন না।সংবেদনশীলতাকে হাতিয়ার করে এগিয়ে আসুন মুখ্যমন্ত্রী-বোঝার চেষ্টা করুন মানুষ বড় কাঁদছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here