এবারের ২৬ জানুয়ারি বা প্রজাতন্ত্রদিবস একেবারে অন্য মানে নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের সামনে।৭০ বছর বয়স হল আমাদের প্রজাতন্ত্রের।সেই ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী এ দেশের সংবিধান চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত এক স্বাধীন সার্বোভৌম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে স্বীকৃত হয়েছিল।সেদিন প্রতিটি ভারবাসী মেনে নিয়েছিল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যকে সম্বল করে ভারত রাষ্ট্র এগিয়ে চলবে।কোন একটি বিশেষ ধর্মকে প্রাধান্য না দিয়ে ভারত ভূমি সব ধর্মের মানুষকে জায়গা দেবে,হয়ে উঠবে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের দেশ।দেশের এই ভাবনাকে গ্রহণ করে আমাদের কবি গুরু আর্য-অনার্য নির্বিশেষে সকল জাতির মানুষকে আহ্বান করলেন এই ভারত ভূমে।এই ভারত ভূখন্ড থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া পাকিস্থান ও বাংলাদেশ যা পারে নি,ভারত তা পেরেছে।পাকিস্থান-বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারেনি,তারা মুসলিম দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে,ভারত সেখানে কোন ধর্মকে বড় না করে সব ধর্মের মানুষকে সমান সমাদরে গ্রহণ করার উদারতা দিয়ে পৃথিবীতে এক ভিন্ন নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।বলা বাহুল্য এই উদারতা ভারতকে দূর্বল করে নি,বরং শক্তিশালী করেছে।ভারত যে বাংলাদেশ ও পাকিস্থানের চেয়ে শৌর্য ও ক্ষমতার বিচারে অনেক এগিয়ে সে কথা বিশ্বের সকলেই একবাক্যে মেনে নেয়।ভারতের সাহায্য না পেলে বাংলাদেশের যে জন্মই হত না সে কথা বিশ্ব রাজনৈতিক মহলের সকলেরই জানা।এমনকী বাংলাদেশেরও সেই ঐতিহাসিক সত্যকে কোন দিন অস্বীকার করার চেষ্টা করে নি।তাই বলা যায় ভারতের যে প্রজাতান্ত্রিক আদর্শ তা ভারতের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।এথচ ৭০ বছর পেরিয়ে এসে ভারতের সেই প্রজাতান্ত্রিক ভাবনাকেই যেন নষ্ট করার একটা প্রয়াস দেখা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন নাগরিক সংশোধনী আইন নিয়ে আসার চেষ্টা করছে তাতে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে তার ফলে মানুষের ধর্ম পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকতা নির্ধারিত হবে।প্রতিটি মানুষকে নতুন করে নাগরিকতার প্রমাণ দিতেও বলা হচ্ছে।চেষ্টা হচ্ছে এ দেশে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে নতুন করে বিভাজন রেখা স্পষ্ট করে তোলার।আর এ সবই হচ্ছে ভোট ব্যঙ্ককে নিজেদের অনুকূলে নিশ্চিত করে তুলতে।

গোটা দেশ জুড়ে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে এখন।কেলজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর নিপীড়ন নামিয়ে আনা হচ্ছে।দেশের নামে একধরনের উগ্রতাকে উসকে দিয়ে বলা হচ্ছে সেই উগ্রতাকে যারা সমর্থন করবে না তারাই দেশদ্রোহী।এথচ স্বাধীন প্রজাতন্ত্র কখোন তর্ক প্রশ্ন যুক্তিকে বাদ দিয়ে হয় না।আমাদের সংবিধান মানুষকে প্রশ্ন করার অধিকার দেয়,অধিকার দেয় সরকারের সমালোচনারও।বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সংবিধানের শক্তিকেই খর্ব করতে চায় প্রশ্ন করার অধিকার কেড়ে নিয়ে।আর এখানেই এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের অন্য মানে।এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ নিতে হবে কোন ভাবেই আমরা আমাদের প্রজাতন্ত্রের পবিত্রতাকে নষ্ট হতে দেবো না।এ লড়াই কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রাপ্তির লড়াই নয়,এ লড়াই আমাদের সংবিধান ও প্রজাতন্ত্র রক্ষার লড়াই।দেশের কোেণে কোণে যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রয়াস চলছে তাকে যদি শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলে মনে করে বিজেপি সরকার তবে বুঝতে হবে তারা এ দেশের পবিত্রতা বুঝতে অক্ষম,এ দেশের প্রজাতন্ত্র তাদের হাতে আক্রান্ত তাই মানুষ বিদ্রোহ করছে।সবার আগে আমার দেশের মানুষ ও তার প্রজাতান্ত্রিক অধিকার সেই অধিকার কেড়ে নিতে চাইলে সেই সরকার ও দলকে মুছে দিতে হবে।এ বারের প্রজাত্র দিবস মানুষকে সেই শপথ নিতে প্রেরণা দিচ্ছে।তাই বিজেপি সরকারের সাবধান হওয়ার সময় এসেছে।বিজেপি নেতারা মনে রাখবেন তারা ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই করতে চাইছেন আর যারা মাঠে ময়দানে তেরঙ্গা পতাকা হাতে জাতীয় সংগীত গেয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ করছে তারা ভারতের হয়ে লড়াই করছে।তাই লড়াইটা যদি হয় বিজেপির সঙ্গে ভারতের তবে বিজেপি হারবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।শুধু ক্ষমতা ধরে রাখার তাড়নায় ভারত মাতাকী জয় বললে হবে বিজেপিকে ভারতের সংবিধান ও ভারতের সর্বধর্ম সমন্বয়ের যে আদর্শ তাকে মান্যতা দিতে হবে তা না হলে দেশের মানুষ যেমন তাদের ক্ষমতায় বসিযেছেন,তেমনি ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতেও পারেন এটা যেন নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহরা মনে রাখেন।আবারও বলি এ বারের প্রজাতন্ত্র দিবস এ দেশের মানুষের কাছে প্রজাতন্ত্রকে বাঁচিয়া রাখার শপথ নেওয়ার দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here