দেশের সময়, বনগাঁ: রাজ্য জুড়ে যেখানে সবুজের ঝড়, সেখানে আচমকাই বনগাঁ মহকুমায় সেই ঝড়ের রঙ বদলে গিয়ে হয়ে গেল গেরুয়া। সমস্ত জল্পনা, আশায় জল ঢেলে এই মহকুমার চারটি আসনেই জয়ী হলেন বিজেপি প্রার্থীরা।

আর এই জয় নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরে জল্পনা শুরু হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বনগাঁতেও তৃণমূলের ফল যথেষ্ট খারাপ হয়েছিল। বনগাঁ শহরের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে গ্রামের একটা দ্বন্দ্ব চিরকাল থাকলেও সাম্প্রতিককালে সেই বিভাজন অনেকটাই বেড়ে যায়। আর তার ফলস্বরুপ বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। আর তখন থেকেই একটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়।

বিশ্বজিৎ দাসকে বিজেপি বনগাঁ কেন্দ্রের প্রার্থী না করে বাগদায় প্রার্থী করায় তিনিও যথেষ্ট চাপের মধ্যে পড়ে যান। তবে সেই চাপকে হেলায় হারিয়ে দিয়ে এদিন তিনি নতুন কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজনৈতিক মহলে বিশেষ বার্তা দিলেন।

 অন্যদিকে, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রথম থেকেই বিজেপি প্রার্থী অশোক কীর্তনিয়ার থেকে এগিয়ে ছিলেন। বনগাঁ পুরসভা এলাকার পাশাপাশি বনগাঁ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে। এদিন গ্রামাঞ্চলের ভোট গণনার সময় ভোটের ফলাফল তৃণমূলের পক্ষেই ছিল। যখন শহরের কাছাকাছি আসতে শুরু করে, তখনই আচমকা পরিবর্তিত হতে থাকে। ফল তখন উল্টো দিকে বইতে থাকে। যেখানে তৃণমূল প্রার্থী সকাল থেকে এগিয়ে চিলেন, সেখানে দুপুরের পর পরিস্থিতি বদলে বিজেপির অনুকুলে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেন বিজেপি প্রার্থী অশোক কীর্তনিয়া।

সকালে তৃণমূল প্রার্থীর জয়ে যখন বনগাঁ শহরে বাজির শব্দে কান পাতা দায় হয়ে পরছিল, তখন দুপুরের পর আচমকাই নীরব হয়ে যায় গোটা শহর। ততক্ষনে শহরের মানুষ বুঝতে শুরু করে দিয়েছেন, হাওয়া উল্টো দিকে বইতে শুরু করেছে।

 এই চিত্রনাট্যেরই যেন অনুকরণ বনগাঁ দক্ষিন কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও। এই কেন্দ্রেও তৃণমূল প্রার্থী আলো রাণী সরকার প্রথম থেকে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার।

গাইঘাটা কেন্দ্রে অবশ্য প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুর। তাঁর মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূলের নরোত্তম বিশ্বাস প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি ভোটে পরাজিত হন। এখানে ঠাকুরবাড়ির পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন ডাক্তার সজল বিশ্বাস। তিনি অনেকটা ভোট কাটলেও শেষ পর্যন্ত সুব্রত ঠাকুরকে হারানোর পক্ষে যথেষ্ট হয়ে না ওঠায় বিজেপি প্রার্থীর জয়ে কোনও বাধা আসেনি।

সর্বপরি রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের এমন জয়জয়কারের পাশাপাশি বনগাঁ মহকুমায় তৃণমূলের চারটি আসনেই পরাজয়ের পেছনে কি কারণ, তা সাধারণ মানুষের অজানা না থাকলেও এই ফলাফল বিশ্লেষন করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্বিত ফেরে কি না, নতুন করে শুদ্ধিকরণের পথে দল হাঁটে কি না, এখন সেদিকেই তাকিয়ে বনগাঁর মানুষ।

বনগাঁ (উত্তর) :       *অশোক কীর্তনীয়া (বিজেপি)- ৯৭৭৬১        শ্যামল রায় (তৃণমূল)- ৮৭২৭৩        পিয়ুষকান্তি সাহা (সংযুক্ত মোর্চা)- ১৪০৫১        জয়ের ব্যবধান- ১০৪৮৮
        বাগদা :        * বিশ্বজিৎ দাস (বিজেপি)- ১০৮১১১           পরিতোষ সাহা (তৃণমূল)- ৯৮৩১৯           প্রবীর কীর্তনীয়া (সংযুক্ত মোর্চা)- ৮২৫০
           জয়ের ব্যবধান- ৯৭৯২
           গাইঘাটা :          * সুব্রত ঠাকুর (বিজেপি)- ৯৯৭৫৩             নরোত্তম বিশ্বাস (তৃণমূল)- ৯০১৫০             কপিলকৃষ্ঞ ঠাকুর (সংযুক্ত মোর্চা)-১৪৫৭৬
             জয়ের ব্যবধান- ৯৬০৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here