দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার দুপুরে এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভে লণ্ডভণ্ড হয়েছে কলকাতা। তার আঁচ পৌঁছেছে জেলাতেও। শনিবার সকাল থেকেই ফের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকায়। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। অবরোধ করা হয় রেল। পোড়ানো হয়েছে কুশপুতুল। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।

শনিবার সকালে সাগরদীঘি থানার পোড়াডাঙা রেলস্টেশনে জড়ো হন প্রচুর মানুষ। এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন তাঁরা। স্লোগানের সঙ্গে রেললাইন ও সংলগ্ন রাস্তায় জ্বালানো হয় টায়ার। এই আগুনের জেরে আটকে যায় মালদা-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, নবদ্বীপধাম এক্সপ্রেস-সহ একাধিক ট্রেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক।

নিজেদের অধিকার রক্ষার দাবিতে পথে নেমেছেন তাঁরা। যতদিন না তাঁদের দাবি মানা হবে, ততদিন এই বিক্ষোভ চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

এই বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় রেল পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিশাল দল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

অন্যদিকে রঘুনাথগঞ্জের তালায় মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু এখনও বিক্ষোভ চলছে।


একই পরিস্থিতি উত্তর ২৪ পরগনাতেও। এদিন সকালে হাসনাবাদ- শিয়ালদহ শাখায় কাকড়া মির্জানগর স্টেশনে রেল অবরোধ করে কংগ্রেস। অবরোধ করা হয় চাঁপাপুকুর রেল স্টেশনও। ফলে ব্যাহত হয় রেল পরিষেবা। বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন রাস্তায় মোদী-শাহের কুশপুতুল দাহ করা হয়। তার সঙ্গে চলে স্লোগান। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই অশান্তির খবর আসতে শুরু করে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। প্রথমে সংখ্যালঘুদের মিছিলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ধর্মতলা চত্বর। নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিংয়ে। স্কুলের বাস থেকে সাধারণ যানবহন আটকে পড়ে। দক্ষিণ শহরতলির একটা বড় অংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

কলকাতার পাশাপাশি বিক্ষোভ ছড়ায় জেলাতেও। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রেললাইনের মাঝেই টায়ার জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর চলে স্টেশনের কেবিনে। উলুবেড়িয়া স্টেশনে অবরোধের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস, কাণ্ডারি এক্সপ্রেস। এছাড়াও ওই শাখার বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস, তাম্রলিপ্ত, হাওড়া-যশবন্তপুর দুরন্ত এক্সপ্রেস। আটকে পড়ে বহু লোকাল ট্রেনও। সব মিলিয়ে হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক পড়ে তা স্বাভাবিক হয়। দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের।

একই ভাবে অশান্তির খবর আসে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে। বিক্ষোভকারীরা থানা ভাঙচুরের চেষ্টা করে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। অবরোধ, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দুই মেদিনীপুর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন অংশেও।


এর মধ্যেই আবার আগামী সোমবার থেকে লাগাতার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলার শাসকদল। সোমবার নিজে মিছিলে হাঁটবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে জমায়েত করে গান্ধীমূর্তি হয়ে মিছিল যাবে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত। মঙ্গলবার মিছিল হবে যাদবপুর এইট-বি বাসস্ট্যান্ড থেকে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত। বুধবারের মিছিল কখন কোথায় হবে তা পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here