দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দুর্যোগের যে ছবি চোখে পড়ছে, সেটা আংশিক মাত্র। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে করোনা সংক্রমণ শীর্ষ ছুঁতে চলেছে। বাড়বে মৃত্যুর হারও। তারপর জুনের মাঝামাঝি থেকে অবস্থা বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। তখন দিনে ২০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন।
সংখ্যাটা স্বস্তিদায়ক না হলেও সাম্প্রতিক কোভিড পরিস্থিতির সাপেক্ষে আশার আলো তো বটেই! তার কারণ, গত ১৫ দিন ধরে ভারতে দৈনিক সংক্রমণ ৩ লক্ষ পেরিয়ে চার লক্ষও পার করে গেছে৷ এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ নাগরিক। লক্ষ-কোটির তুলনায় সংক্রমণের গ্রাফ হাজারে এসে নামাটা এক দিক দিয়ে শুভ সংকেত তো বটেই। মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

অবশ্য ভাইরাসের নয়া ভ্যারিয়েন্টের চরিত্র বেজাই পরিবর্তনশীল। যার জেরে চিকিৎসক কিংবা গবেষকদের আগাম অনুমান বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যেমন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শদাতাদের একটি বিশেষ টিম জানিয়েছিল গত মাসের মাঝামাঝি দেশে সংক্রমণের গ্রাফ সর্বোচ্চ বিন্দু স্পর্শ করবে। বাস্তবে তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি। চলতি মাসে সমস্ত রেকর্ড ভেঙে বল্গাহীন গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা।

যদিও ওই একই দল সর্বশেষ যে মডেলটি বানিয়েছে, তা দেশের অন্যান্য বিজ্ঞানীদের রিপোর্টের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মে মাস করোনা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলবে কোভিড। গ্রাফ শীর্ষ ছোঁবে। তারপর ধীরে ধীরে সেটা নীচে নামতে শুরু করবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৪ লক্ষ ১২ হাজার আক্রান্তের খবর মিলেছে। মারা গেছেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিসংখ্যান স্বচ্ছ নয়। কারণ, হাসপাতাল ও শ্মশানে মৃতদেহের ভিড় উপচে পড়ছে। ফলে আসল সংখ্যা হাতে আসছে না।

এই পরিস্থিতিতে আইআইটি হায়দরাবাদের অধ্যাপক মথুকুমাল্লি বিদ্যাসাগর বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের পরিস্থিতি খুব জটিল হতে চলেছে। সংক্রমণ নাগাড়ে বাড়তে থাকবে। যদিও ভাইরাস বারবার নিজের চেহারা পাল্টাচ্ছে। তাই আগেরবার আমাদের অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।’

একই সুর শোনা গিয়েছে আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোরের একটি গবেষক দলের রিপোর্টে। তাঁদের গাণিতিক মডেল অনুযায়ী, ১১ জুনের মধ্যে সারা দেশে মৃতের সংখ্যা ৪ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে৷ ইতিমধ্যে যা ২ লক্ষের গণ্ডি অতিক্রম করেছে।

অন্যদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পশ্চিমবঙ্গও যেন বেসামাল। এই রাজ্যের করোনা পজিটিভিটি রেট দেশের আরও অনেক রাজ্যের থেকে অনেক বেশি। প্রায় ৩০ শতাংশ। যা নিয়ে চিন্তিত রাজ্য সরকার ও বিশেষজ্ঞরা। 

গত ৮ থেকে ২১ এপ্রিলের মধ্যে করোনা নিয়ে যে রিপোর্ট সামনে এসেছে, সেখানে থেকে জানা যাচ্ছে, এই কদিনে পশ্চিমবঙ্গে হু হু করে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। পজিটিভিটি রেট ৩০ শতাংশ। 
পজিটিভিটি রেটের নিরিখে সবথেকে ভয়াবহ অবস্থা গোয়ার। ২১ থেকে ৪ মে পর্যন্ত সেখানে করোনার পজিটিভিটি রেট ৪১ শতাংশ। যা এক রেকর্ড। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি। রাজধানীর পজিটিভিটি রেট ৩২ শতাংশ। 

পজিটিভিটি রেটের অর্থ
পজিটিভিটি রেট নির্ধারিত হয় টেস্টের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ যে সংখ্যক মানুষ করোনার পরীক্ষা করাবেন, তাঁদের মধ্যে যত শতাংশ পজিটিভ হবেন, সেটাই হবে পজিটিভিটি রেট। কোন জায়গায় যদি ১০০ জন টেস্ট করান। আর তারমধ্যে ১৫ জন পজিটিভ হন, তাহলে পজিটিভিটি রেট ১৫ শতাংশ। 
পজিটিভিটি রেট ১০ শতাংশের বেশি হলেই ক্ষতিকারক 
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, করোনার পজিটিভিটি রেট ১০ শতাংশের বেশি হলেই তা মারাত্মক। এর থেকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন একমাত্র উপায়। 

কিন্তু, সম্প্রতি যে তথ্য সামনে এসেছে, তা থেকে জানা গিয়েছে দেশে এখন পজিটিভিটি রেট প্রায় ২০ শতাংশ। তারপরও লকডাউন হয়নি সর্বত্র। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ আরও বাড়বে বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here