দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও লাদাখের পাহাড়ি এলাকায় যু্দ্ধ করার মতো দক্ষতা ও সাহস দুইই আছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর। শীতের আগে অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন হয়েছে পূর্ব লাদাখে। লাল ফৌজ যদি আস্ফালন দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের আক্রমণাত্মক বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পার্বত্য বাহিনীর মুখোমুখি হতে হবে। যার ফল মোটেও ভাল হবে না। চিনকে সোজাসাপটা হুঁশিয়ারি দিল ভারতীয় সেনার নর্দার্ন কম্যান্ড।

দিনকয়েক আগে চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল চিনের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি ছিল, শীতকালে লাদাখের মতো দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ভারতীয় সেনার পক্ষে প্রতি-আক্রমণ করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। সেদিক দিয়ে নাকি চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অনেক বেশি এগিয়ে। 

তারই জবাবে নর্দার্ন কম্যান্ড জানিয়েছে, চিনের সেনা সমতলভূমিতেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। লাদাখের মতো এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি খাঁজে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করার মতো ক্ষমতা তাদের নেই। পাহাড়ি এলাকায় কী ধরনের রণকৌশল নিতে হবে, সে জ্ঞানও ঠিকমতো নেই চিনের সেনার।

নর্দার্ন কম্যান্ড জানিয়েছে, পাহাড় হোক বা সমতলভূমি, যে কোনও প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধ করার মতো প্রশিক্ষণ আছে ভারতীয় সেনার। আবহাওয়ার বদল হোক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কোনও কিছুই টলাতে পারবে না ভারতের বীর জওয়ানদের। মাউন্টেন ফোর্সকে গেরিলা যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, পাহাড়ি এলাকার সীমান্ত পাহারা দেওয়ার জন্য তাদের কাছে আধুনিক অস্ত্রও আছে। তাই চিনের সেনা আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করলে তা বরদাস্ত করা হবে না।

নর্দার্ন কম্যান্ডের মুখপাত্র বলেছেন, সাধারণভাবেই লাদাখের পাহাড়ি এলাকায় শীতের তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। পাহাড়ি রাস্তায় বরফ জমে এলাকা আরও দুর্গম হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সব প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো প্রশিক্ষণই আছে ভারতের বাহিনীর।

চরম শীতেও পাহাড়ি খাঁজে শত্রু সেনার উপরে আচমকা প্রত্যাঘাত হানতে পারে লাদাখের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। শক্তিতে তারা যেমন দুর্দান্ত তেমনি সামরিক কৌশলেও অপ্রতিরোধ্য। চিনকে এটা ভাল করে বুঝে নিতে হবে।

পাহাড়ি খাঁজ, ভাঁজ যেখানে সাধারণ মানুষের পা রাখা অসম্ভব ব্যাপার সেখানেই অবাধ গতি এই বাহিনীর। আগ্নেয়াস্ত্রে নির্ভুল নিশানা। উঁচু পাহাড়ি এলাকার প্রচণ্ড ঠান্ডা, প্রতিকূল পরিবেশেও যুদ্ধ করার বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে এই বাহিনীর। গা ঢাকা দিয়ে অতর্কিতে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালাতে পারে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স।

তাদের গতি অতি সতর্ক, এক মুহূর্তের জন্যও টের পাবে না শত্রু পক্ষ। রণকৌশলে প্রতি পদক্ষেপে চ্যালেঞ্জ করতে পারে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে। যেহেতু তিব্বতি সেনাদের নিয়ে এই ফৌজ বানিয়েছে ভারত, তাই চিনের বাহিনীর রকমসকম এদের নখদর্পণে। কীভাবে, কোথা দিয়ে আক্রমণের কৌশল নিতে পারে চিনের সেনা তা আগেভাগেই আঁচ করতে পারে এই বাহিনী। 

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাল ফৌজের গতিবিধি আগে থেকে আঁচ করেই কালা টপের দখল নিতে পেরেছিল স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। চুসুলের কাছে ট্যাঙ্ক বাহিনীকে আগে থেকেই তৈরি রেখেছিল তারা। কালা টপের পাদদেশেও পাহারায় ছিল এসএফএফ। রাতের অন্ধকারে পা টিপে টিপে এসেও লাভ হয়নি চিনের সেনার। এসএফএফকে টপকে দক্ষিণ প্যাঙ্গং রেঞ্জে ঢুকতেই পারেনি লাল ফৌজ। আধিপত্য কায়েম তো অনেক দূরের কথা।

নর্দার্ন কম্যান্ড জানাচ্ছে, এইসব দেখেই শঙ্কিত হয়ে এখন লাদাখের পাহাড়ি এলাকায় ফাইবার কেবল বসিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছে চিনের বাহিনী। ভারতের সেনার অবস্থান ও বিন্যাস জানার জন্যই তাদের এই প্রচেষ্টা। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ নেই। ভারত সবসময় চায় শান্তি বজায় রাখতে। তাই সেনা কম্যান্ডার স্তরে বৈঠক করে সংঘাতের পরিস্থিতি এড়ানোরই চেষ্টা চলছে।

কিন্তু চিনের সেনা যদি বাহাদুরি দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ভারতকে কঠিন পদক্ষেপ নিতেই হবে। এখনই চুসুলের কাছে ভারতের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট তৈরি। সীমান্তে এয়ার ডিফেন্স প্রস্তুত। তাই সবদিক দিয়েই কয়েক কদম এগিয়ে রয়েছে ভারত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here