পার্থ সারথি নন্দী, বনগাঁ: বনগাঁর স্থানীয় রাজনীতিতে বিশ্বজিৎ দাস এই মুহুর্তে বেশ আলোচিত একটি নাম। কারণ তাঁকে ঘিরে সবুজ- গেরুয়া দুই শিবিরেই টানা পোড়েন চলে প্রায় সারা বছর ধরেই৷

২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাগদা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিল তৃণমূল থেকে আসা বিশ্বজিৎ এবং বিজেপি-র টিকিটে জয়ী হওয়ার পর বিশ্বজিতের ফের তৃণমূলে ফিরে যাওয়া টাকে রাজনৈতিক সমালোচকেদের কথায় অনেকে টা ডিফেন্স ফুটবল খেলোয়ারের মত৷ গোলকিপারের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই মধ্য মাঠ ভেদ করে সোজা বিরোধীদের গোল পোষ্টে বল ভেদ করে ফের নিজের দলের সঙ্গীদের কাছে উচ্ছ্বাস নিয়ে ফিরে আসার আরেক নাম বিশ্বজিৎ দাস৷

৩১ অগষ্ট মঙ্গলবার (২০২১) বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসেন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ৷ ১ সেপ্টেম্বর বুধবার মতিগঞ্জ এলাকায় মঞ্চ বেঁধে বিশ্বজিৎকে সংবর্ধনা দেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। সেদিনের অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য৷ সেদিন ওই মঞ্চে দু’জনের মধ্যে সুসম্পর্কেরই ইঙ্গিত মিলতে দেখেছিল সাধারণ মানুষ। একে অন্যের প্রশংসা করতেও শোনা গিয়েছিল দু’জনের মুখে।

প্রসঙ্গত, প্রচার আছে তাঁদের দু’জনের আড়াআড়ি সম্পর্কের কথা নেতা-কর্মীদের অজানা নয়। বিশ্বজিৎ তৃণমূল ছেড়ে গিয়েছিলেন বিজেপিতে। তিনি তৃণমূলে ফেরার পরে দু’জনের সমীকরণ কী হয়, তা নিয়ে যথেষ্ঠ জল্পনা ছিল স্থানীয় রাজনীতিতে।

সেদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে থেকেই ফের বিতর্কিত কথা হাওয়ায় ভাসতে শুরু করেছিল বিশ্বজিৎকে ঘিরে৷ তা হল তৃণমূলে প্রবেশের পর প্রথম দিনেই বিশ্বজিৎ এর সংবর্ধনা মঞ্চে স্থানীয় পুরসভা সহ দলের অন্যান্য কোন নেতা কর্মীদেরকে সেদিন উপস্থিত থাকতে দেখা না যাওয়ায় গুঞ্জন ছড়ায় যে দল বদলু দলে ফিরলেও দলের সব কর্মীরা তাঁর সঙ্গে নেই৷ এরপর বেশ কিছুদিন আর তাঁকে দলেরও কোন অনুষ্ঠানে সেভাবে দেখা যায়নি ৷ স্বভাবতই রাজনৈতিক মহলে ফের বিশ্বজিৎ কে নিয়ে জল্পনা বাসা বাঁধতে শুরু করে৷

আজ শনিবার দুপুরে বনগাঁ পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি দিলীপ দাসের নেতৃত্বে একটি রক্তদান শিবিরের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বজিৎ দাস, সেই মঞ্চে পাশাপাশি হাত শক্তকরে ধরে বসে ছিলেন তৃণমূল নেতা তথা বনগাঁর বর্তমান পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ,বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত,গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য গোবিন্দ দাস,বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি দিলীপ দাস সহ অন্যান্য নেতা ও নেতৃরা ৷

বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি দিলীপ দাস বলেন এক পরিবারে দু’ই ভাইয়ের মধ্যে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয় তবে সেটা সাময়িক আমার কাছে বিশ্বজিৎ – গোপাল হল ছেলের মত ওরা এক সঙ্গে কাজ করছে এবার বনগাঁর মানুষ প্রকৃত অক্সিজেন পাবে করোনার মত ভাইরাসকে পরাজিত করে ফের সামনেই দুর্গা পুজোর আনন্দে ভাসবে সকলে৷ এদিনের এই অনুষ্ঠানে দেখা যায় নি প্রাক্তন পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে৷

এ বিষয়ে দিলীপ বাবু জানান রক্তদান টা সেবা মূলক কাজ । এখানে তাঁরাই এসেছেন যাঁরা মানুষের সেবা করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ কে অনুসরণ করে চলতে চাই তিনিতো আমার কাছে মা দূর্গারই একটি রুপ তাই কে এলো না দেখে যারা এসেছেন তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়ে বনগাঁকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ৷

তৃণমূল নেতা তথা বনগাঁ পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ বলেন বিশ্বজিৎ আমাদের দলের সম্পদ ও আগে একজন ফুটবল খেলোয়ার প্রকৃত মানুষের বন্ধু তাই আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মত ওর হাত টা শক্ত করে ধরে রেখেছি যাতে কোন অসুর বা অশুভ শক্তি বিশ্বজিৎ বা তৃণমূলদলের কোন ক্ষতি করতে না পারে৷ ছোট থেকে বিশ্বজিৎ ফুটবল খেলায় পারদর্শি এবার দিদির নির্দেশ মত আমাদের দলের হয়ে সেরা খেলাটা খেলবে বনগাঁর মানুষের জন্য৷

এদিন বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘আমার এখন প্রধান কাজ পুরভোটে তৃণমূলকে জেতানো। ২২টি ওয়ার্ডেই আমরা জয়ী হব।’’ গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বনগাঁ পুরসভা এলাকার বেশিরভাগ ওয়ার্ডে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিশ্বজিতের বনগাঁ পুরসভা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। পুর এলাকার সংগঠন শক্তিশালী করতে তাঁকে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন বিশ্বজিৎও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাগদা নয়, বনগাঁ শহরের সংগঠন শক্তিশালী করাই তাঁর লক্ষ্য৷

বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত, বলেন এবার পুর হলে বনগাঁ পুরসভার ২২টি ওয়াডেই তৃণমূলের জয় নিশ্চিত৷ প্রকৃত উন্নয়নই হবে তার অস্ত্র ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here