দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:‌ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রে। তার পরেই দিল্লি আর তামিলনাড়ু। গোটা দেশের আক্রান্তের প্রায় ৪৪ শতাংশই এই তিন রাজ্যে রয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সোমবার সকালে এই তথ্য দিয়েছে। ফলে করোনার জেরে ১৪ তারিখের পরও কোনও কোনও রাজ্যে লকডাউন থাকতে পারে। তবে কোন কোন রাজ্যে তা নির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

দেশের একাধিক রাজ্যে ১৪ এপ্রিলের পরও লকডাউন থাকতে পারে! জোর চর্চা শুরু‌:
এদিন অবশ্য লকডাউন বাড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি’‌র প্রতিষ্ঠা দিবসে বার্তা দিলেন, ‘‌লম্বা লড়াইয়ের জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ জয় না আসা পর্যন্ত এই লড়াই চলবে৷’‌ আর প্রধানমন্ত্রীর এই ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তার পর লকডাউন নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে৷ যেভাবে দেশের করোনার সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সেই আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে৷

করোনাভাইরাসের কারণে ভারতের কোন রাজ্যের পরিস্থিতি ঠিক কীরকম তা জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রথমেই আসছে মহারাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্ত ৬৯০ (১৬.৯%), মৃত–৪৫, দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাড়ু– আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭১ (১৪.০৩%), মৃত–৫, তৃতীয স্থানে রয়েছে দিল্লি–৫০৬ (১২.৪৪%), মৃত–৭। এরপর ধারাবাহিকভাবে জায়গা করে নিয়েছে তেলঙ্গানা–আক্রান্ত ৩২১ (৭.৮৯%), মৃত–৭, কেরল– আক্রান্ত ৩১৪ (৭.৭২%), মৃত–২, রাজস্থান– আক্রান্ত ২৫৩ (৬.২২%), উত্তরপ্রদেশ–আক্রান্ত ২২৭ (৫.৫৮%), মৃত–২,অন্ধ্রপ্রদেশ–আক্রান্ত ২২৬ (৫.৫৫%), মৃত–৩, মধ্যপ্রদেশ–আক্রান্ত ১৬৫ (৪.০৫%), মৃত–৯, কর্নাটক–আক্রান্ত১৫১ (৩.৭১%), মৃত–৪, গুজরাত–আক্রান্ত ১২২ (২.৯৯%), মৃত–১১, জম্মু ও কাশ্মীর– আক্রান্ত ১০৬ (২.৬০%), মৃত–২।
এই পরিস্থিতিতে এদিন প্রধানমন্ত্রী বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‌আমাদের সংকল্প একটা, লক্ষ্য একটা, তা হলো করোনার বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়া৷ এই লম্বা লড়াইয়ে থামলে চলবে না, ক্লান্ত হলে চলবে না৷’‌ অর্থাৎ ২১ দিনের লকডাউনে হাঁপিয়ে পড়লে চলবে না, বরং মেনে নিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আর এখান থেকে উঠছে প্রশ্ন লকডাউন কী আরও বাড়বে?‌ উত্তর না মিললেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে তালিকা তৈরি করেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে—হরিয়ানা– আক্রান্ত ৮৪ (২.০৬%), মৃত–১, পশ্চিমবঙ্গ–আক্রান্ত ৮০ (১.৯৬%), মৃত– ৩, পাঞ্জাব–আক্রান্ত ৬৮ (১.৬১%), মৃত–৬, বিহার–৩০ (০.৭৩%), মৃত–১, অসম–আক্রান্ত ২৬ (০.৬৩%),
উত্তরাখণ্ড–আক্রান্ত ২৬ (০.৬৩%), ওড়িশা–আক্রান্ত ২১ (০.৫১%), চণ্ডীগড়–আক্রান্ত ১৮ (০.৪৪%) লাদাখ– আক্রান্ত ১৪ (০.৩৪%), হিমাচল প্রদেশ–আক্রান্ত ১৩ (০.৩১%), মৃত–১, আন্দামান–আক্রান্ত ১০ (০.২৪%),
ছত্তীশগড়–আক্রান্ত ৯ (০.২২%), গোয়া–আক্রান্ত ৭ (০.১৭%), পুদুচেরি–আক্রান্ত ৫ (০.১২%), ঝাড়খণ্ড–আক্রান্ত ৩ (০.০৭%), মণিপুর–আক্রান্ত ২ (০.৫%), মিজোরাম–আক্রান্ত ১ (০.২৫%), অরুণাচল প্রদেশ–আক্রান্ত ১ (০.২৫%)।
এই পরিস্থিতিতে করোনা রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সোমবার করোনা এই তথ্য নিয়ে প্রথমে মন্ত্রিগোষ্ঠী এবং পরে ক্যাবিনেট বৈঠক করার কথা প্রধানমন্ত্রীর৷ ফলে করোনা নিয়ে লম্বা লড়াই বলতে প্রধানমন্ত্রী ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা হয়তো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে পারে৷

এক নজরে মোদীর বক্তব্য:
করোনার বিরুদ্ধে লম্বা যুদ্ধ লড়তে হবে, ক্লান্ত হলে চলবে না মোদী:

দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বক্তৃতায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আরও অনেকদিন লড়তে হবে। ক্লান্ত হলে চলবে না।

এদিন মোদী বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধটা দীর্ঘ। এখানে ক্লান্ত হলে চলবে না। বিশ্রাম নেওয়ার কোনও অবকাশ নেই। এই যুদ্ধ আমাদের জিততেই হবে।” তিনি আরও বলেন, “দেশের এখন একটাই লক্ষ্য। তা হল, এই মারণ ভাইরাসকে পরাজিত করা।”


শুক্রবার সকাল ন’টায় ভিডিও বার্তা পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছিলেন, রবিবার রাত ন’টায় ন’মিনিটের জন্য বাড়ির আলো নিভিয়ে প্রদীপ, মোমবাতি বা মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালাতে। তাঁর বক্তব্য ছিল, মহাশক্তি জাগরণ ঘটাতেই এই আহ্বান। এদিনের বক্তৃতায় প্রদীপ জ্বালানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রবিবার সন্ধ্যায় আমরা উপলব্ধি করেছি, আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি কতখানি।” দেশের মানুষ যে ভাবে লকডাউন পালন করছেন তারও প্রশংসা শোনা যায় মোদীর গলায়।
১৯৮০ সালে আজকের দিনেই অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীদের হাত ধরে বিজেপির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রদীপ জ্বালানোর কর্মসূচি নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আবেগ উস্কে দিতে চেয়েছিলেন মোদী।

এদিন বিজেপি কর্মীদের কাছে তিনি পাঁচ দফা কর্মসূচি মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা যে গাইডলাইন দিয়েছেন, তা মেনে চলুন। নজর রাখুন, কোনও গরিব মানুষ যেন উপবাসী না থাকে।
সোমবার দলের সদস্যদের সামনে ভাষণ দেন সভাপতি জে পি নাড্ডা। তাঁর কথায়, “কোভিড ১৯ সংক্রমণের ফলে বিশ্বজুড়ে সংকট চলছে। এই অবস্থায় মোদী যেভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।” এর পরে তিনি বলেন, “করোনা সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সারা পৃথিবী এখন মোদীর দিকে তাকিয়ে আছে।”

দলের কর্মীদের উদ্দেশে নাড্ডা আরও বলেন, “বিজেপির ৪০ বছর পূর্তি হল। এই উপলক্ষে দলের প্রত্যেক কর্মীকে ৪০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। একইসঙ্গে তাঁরা পিএম কেয়ার ফান্ডে ১০০ টাকা করে দেবেন।”
বাইরে বেরলে মাস্ক পরুন, ঘরেও মুখ ঢেকে রাখুন,বার্তা মোদীর:
রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে দেশজুড়ে যেন পালন হল দিওয়ালি। বাড়ির আলো নিভিয়ে মোমবাতি-প্রদীপ জ্বালিয়ে করোনা মোকাবিলায় একসঙ্গে লড়ার বার্তা দিলেন দেশবাসী। আর তার পরের দিনই বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন মোদী। দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিলেন বিজেপি কর্মীদের। বললেন, বাইরে বেরলে তো মাস্ক পরবেনই, ঘরেও মুখ ঢেকে ঘুরুন।

এদিন দলীয় কর্মীদের বার্তা দিতে গিয়ে তাঁদের সামনে কয়েকটি দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন মোদী। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা যে পাঁচটি বিষয়ের কথা কর্মীদের বলেছেন তা পালন করতে বলেন মোদী। তারপরেই কর্মীদের সুরক্ষার দিকটি তুলে আনেন তিনি। বলেন, “এই সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে বেরলেই মাস্ক পরে বেরন। আর ঘরে থাকলেও চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে থাকুন। তবেই আমরা করোনা সংক্রমণ রুখতে পারব।”

মোদীর এই মাস্ক পরা ও মুখ ঢেকে রাখার বার্তা যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অ্যাডভাইজরিকেই আরও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা তা বলাই বাহুল্য। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এই অ্যাডভাইজরিতে জানানো হয়েছে, অনেক দেশে দেখা গিয়েছে এই পরিস্থিতিতে সবাইকে সবসময় মাস্ক পরে থাকতে। সেই সব দেশগুলি করোনা মোকাবিলায় অনেক বেশি সফল হয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে জানানো হচ্ছে, যাঁরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত নন, যাঁরা সুস্থ, যাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা নেই, তাঁরাও রাস্তায় বেরলে মুখ ঢাকা দিন। তার জন্য বাড়িতে তৈরি মাস্কই ব্যবহার করতে পারেন তাঁরা।

এই অ্যাডভাইজরিতে জানানো হয়েছে, এই মাস্কগুলি ব্যবহার করার আগে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। সাধারণত মাস্কের দুটি সেট রাখতে বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মাস্কদুটি ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক পরার আগে নিজের হাত ভাল করে স্যানিটাইজ করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাড়িতেই পরিষ্কার কাপড় দিয়ে এই মাস্ক বানিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে দেখতে হবে মাস্ক পরলে যেন মুখ ও নাক ভালভাবে ঢাকা যায়। আর একটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে বলা হয়েছে। সুস্থ ব্যক্তিরাও যেন একজনের মাস্ক অন্যজন না পরেন। প্রত্যেকেকে আলাদা মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এই নির্দেশিকায় আরও জানানো হয়েছে, যাঁরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত কিংবা তাঁদের চিকিৎসার কাজে যুক্ত ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের অবশ্যই এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িতে তৈরি মাস্ক শুধুমাত্র সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য।


এতদিন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ ও চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিল যাঁরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরাই মুখে মাস্ক পরে থাকবেন। যাঁরা আক্রান্ত হননি তাঁদের মাস্ক পরার কোনও প্রয়োজন নেই। সেই বার্তা দেওয়া হত সরকারের তরফেও। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই চিন্তাভাবনা থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আর তারপরেই দলীয় কর্মীদেরও সবসময় মুখ ঢেকে রাখার বার্তা দিলেন মোদী। বাইরে বেরলে তো বটেই ঘরে থাকলেও সংক্রমণ রুখতে চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দিলেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here