দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃকরোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে বেশি ছড়াতে না পারে সে জন্য লকডাউন ও সোশাল ডিস্টেন্সিং বজায় রাখাই যে একমাত্র পথ সে কথা ক’দিন আগে সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানেও তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, দিল্লির মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তা ছাড়া ওড়িশা ও পাঞ্জাব ইতিমধ্যেই লকডাউনের মেয়াদ ১৬ দিন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন।

ফলে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের শীর্ষ সারির আমালাদের একাংশ এবং ডান-বাম রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই মনে করছেন যে, লকডাউনের মেয়াদ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আজ কালের মধ্যে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় সেকথা ঘোষণা করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তবে সরকারের শীর্ষ সূত্রে খবর, লকডাউনের ঘোষণাটা আসলে বড় ছবি। এর মধ্যে অনেক মাইক্রো ম্যানেজমেন্টের বিষয় রয়েছে। সেগুলোই বেশি জরুরি। আইসিএমআর, স্বাস্থ্য মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, বাণিজ্য এবং অর্থমন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সবিস্তার ঘোষণা হয়তো প্রধানমন্ত্রী বা ক্যাবিনেট সচিব করতে পারেন।

প্রথমত, লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পর প্রতিদিন আরও বেশি মানুষের কোভিড টেস্টের উপরে জোর দেওয়া হবে। অর্থাৎ উপসর্গ দেখা গেলেই পরীক্ষা করা হবে।

দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত এলাকায় সংক্রামিতের সংখ্যা বেশি, সেই এলাকাগুলি চিহ্নিত করে সিল করে দেওয়া হবে। সেখানে সংক্রামিতের সংস্পর্শে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যাঁরা এসেছেন তাঁদের প্রয়োজন মতো কোভিড টেস্ট ও প্রয়োজনে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হবে।

তৃতীয়ত, যে এলাকাগুলি সিল করে দেওয়া হচ্ছে সেখানে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ সুনিশ্চিত করবে সরকার। যাতে সেখানকার মানুষের খাবার দাবার বা ওষুধের মতো অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের অভাব না হয়।
চতুর্থত, কৃষিজ উৎপাদন প্রক্রিয়া যাতে অব্যহত থাকে এবং কৃষকদের সহায়ক মূল্য দিয়ে কৃষিপণ্য কেনার প্রক্রিয়া যাতে চলতে থাকে সে ব্যাপারেও রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিতে পারে কেন্দ্র।

নর্থব্লক সূত্রে খবর, অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক, মজুরদের নিয়ে সরকারের মধ্যে প্রবল উদ্বেগ রয়েছে। কারণ, তাঁদের রোজগার প্রায় বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের জন্য আরেক প্রস্ত আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা যায় কিনা সে বিষয়ে বিবেচনা চলছে সরকারের মধ্যে। এ ব্যাপারে জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির থেকেও সরকারের উপর চাপ রয়েছে।

জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে দিল্লি, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা সহ অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দাবি তুলেছেন যে, গোটা দেশে লকডাউন যেন একই সঙ্গে চলে। এ ব্যাপারে তালমিল না থাকলে সংক্রমণ মোকাবিলা করতে অসুবিধা হতে পারে। তা ছাড়া গরিষ্ঠ সংখ্যক রাজ্যই জানিয়েছে যে, আপাতত স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখা হোক। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নের মন্ত্রকের অনেকেরই মত তাই। তাঁদের মতে, যে হেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বারবার সতর্ক করে বলেছে যে স্কুল, কলেজ খোলার ব্যাপারে হুড়োহুড়ি না করতে। তাই গ্রীষ্মাবকাশের পর অর্থাৎ জুন মাসের আগে স্কুল কলেজ খোলা ঠিক হবে না।

করোনা নিয়ে দেশ জুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ। এই আবহেই শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে মোদী বলেন, তিনি সকলের জন্য সর্বক্ষণ কাজ করতে তৈরি।
আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল শেষ হচ্ছে লকডাউনের মেয়াদ। বুধবার থেকে কী হবে? লকডাউনের মেয়াদ কি আরও বাড়ানো হবে, নাকি ধাপে ধাপে তা তুলে দেওয়া হবে? এ সব বিষয় জোরাল ভাবে উঠে আসে বৈঠকে। বৈঠকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে, অমরিন্দর সিংহ-সহ অনেকেই। এ দিন প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের বলেনএক নজরে:

• আমি আপনাদের জন্য সর্বক্ষণ কাজ করতে প্রস্তুত

• রাজ্যগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

• রাজনীতি নয়, কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে

• কোনও তথ্য জানাতে ইতস্তত বোধ করবেন না, মুখ্যমন্ত্রীদের বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

• দেশ জুড়ে একই কৌশলে করোনা মোকাবিলা

• প্রত্যেকের পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হবে: নরেন্দ্র মোদী

• লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের থেকে পরামর্শ চান প্রধানমন্ত্রী

• লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের

• ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের

• ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালেরও

• এখনই পরিবহণ সচল করার পক্ষে নন কেজরীবাল

• শুধু মাত্র রাজ্য স্তরে নয়, দেশ জুড়ে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি কেজরীবালের

• কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রের জন্য আর্থিক প্যাকেজ দাবি পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহের

• দেশ জুড়ে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি অমরিন্দর সিংহের

• করোনা মোকাবিলায় নিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য বিমার দাবি উঠল বৈঠকে

• লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

• শ্রমিকদের কথাও মাথায় রাখতে হবে: মমতা

• পুরোপুরি লকডাউনের পক্ষে নন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান

দেশের অধিকাংশ মুখ্যমন্ত্রীই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে বা তা ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার পক্ষে। সেই সঙ্গে বৈঠকে অর্থ সাহায্যের অঙ্ক বাড়ানোর দাবিও উঠতে পারে। করোনা সংক্রমণে রাশ টানতে আরও টেস্ট বাড়ানোর প্রয়োজন বলেও মুখ্যমন্ত্রীদের মত।
এর আগে, গত ২ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রথম ভিডিয়ো-বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় লকডাউন কী ভাবে তোলা যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ চান প্রধানমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here