দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজীব কোথায়! সিবিআইয়ের কাছে এ এক চরম জটিল ধাঁধা। কারণ, সত্যিই তো প্রাক্তন নগরপাল যেন চপলচরণ হরিণ! দৃষ্টি এড়িয়ে কোথায় যে তিনি ডুব দিয়েছেন, কিছুতেই তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে না। বাঁধা যাওয়া দূরের কথা।

পার্ক স্ট্রিটের বাড়ি থেকে রুবি মোড়ের হোটেল, সৌখিন রিসর্ট থেকে ভবানী ভবন– কোথাও তিনি নেই। সত্যি কথা বলতে, তাঁর টিকিও ছোঁয়া যাচ্ছে না। চার দিন হয়ে গেল লুকোচুরি খেলার। কিন্তু তার পরেও এখনও পর্যন্ত সিবিআইয়ের হাতে রইল পেনসিল।

তবে কি তিনি এই রাজ্য ছেড়ে অন্য কোথাও পাড়ি জমিয়েছেন! না, সেটাই বা কী করে হয়! আইন, আদালত সবই তো নিজে নিজেই চালাচ্ছেন। স্ত্রীয়ের নয়, তিনিই আগাম জামিনের আবেদন সই করেছেন। তবে তো নিশ্চয়ই কলকাতা শহর কিংবা আশপাশের কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এই জনারণ্যে তাঁর খোঁজ পাওয়াই যে বড় দায়।

নবান্ন থেকে ভবানী ভবন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পূজালি থেকে উত্তরপ্রদেশের চন্দৌসি কোথাও তিনি নেই। অথচ তিনি আছেন। কাছেই কোথাও আছেন। আইনজীবীরা নিশ্চিত জানেন। পুলিশের কেউ-কেউও জেনে থাকতে পারেন। জেনে থাকতে পারেন শুধু নয়, সিবিআই গোয়েন্দাদের ধারণা, পুলিশের পক্ষ থেকে রীতিমতো সাহায্যই পাচ্ছেন রাজীব। লুকিয়ে থাকার সাহায্য। কলকাতারই এক ট্রাভেল এজেন্টকেও স‌ন্দেহের চোখে দেখছেন সিবিআই গোয়েন্দারা।

সিআইডি প্রধান রাজীব কুমারকে নিয়ে সত্যিই ধাঁধায় পড়ছে সিবিআই। আড়ালে সে কথা স্বীকারও করছেন গোয়েন্দারা। উত্তরপ্রদেশের চন্দৌসিতে রাজীবের গ্রামের বাড়ি থেকে পার্ক স্ট্রিটের বাড়ি কোথাও খোঁজা বাকি নেই। রাজীবের খোঁজে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ ও পূজালিতে বেশ কয়েকটি রির্সটেও হানা দেন গোয়েন্দারা। কিন্তু চপলচরণ হরিণের মতোই তিনি যেন দৃষ্টি এড়িয়ে চলেছেন।

গোয়েন্দারা আবার এমনও মনে করছেন যে, রাজীব কলকাতাতেই কোনও ‘প্রভাবশালী’ আশ্রয়ে থেকে, মেঘের আড়াল থেকে মেঘনাদের মতো আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সিবিআই খুঁজছে কিছু কমন জায়গায়। যেখানে তিনি থাকলেও থাকতে পারেন। কিন্তু দুঁদে গোয়েন্দা রাজীব সিবিআই গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রয়েছেন আনকমন জায়গায়। তবে সেটা কলকাতাতেই।

এমন ভাব‌ার কারণটাও স্পষ্ট। এই তো সেদিন আলিপুর আদালতে আগাম জামিনের আবেদনে তিনি নিজেই সই করেছেন। আবার স্ত্রী সঞ্চিতার সঙ্গেও যে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে এমন প্রমাণও নেই। এমনটাই বলছে সঞ্চিতাদেবীর ফোনের কল লিস্ট। এখন তাই একটু একটু চিন্তাও হচ্ছে গোয়েন্দাদের। শুধু শুধু হন্যে হয়ে খুঁজে আদৌ লাভ হবে কিনা, তা নিয়েই রীতিমতো চিন্তা চলছে সিবিআইয়ের অন্দরে।

হাইকোর্টের রায় বেরোনোর পরের দিন পর্যন্ত বাড়ি ও অফিসে যাঁকে দেখা গিয়েছে তিনি হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেলেন!

এর মধ্যে আবার কু গেয়ে রেখেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সোমেন মিত্র সিউড়িতে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসির সম্মেলনে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘যে ভাবে সিবিআইয়ের সঙ্গে রাজীব কুমারের লুকোচুরি চলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে তিনি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশীদার। সেই ষড়যন্ত্র কী, রাজীব কুমার গ্রেফতার হলে বেরিয়ে আসতে পারে। আর সেই ভয়ে যাঁরা ওই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাঁরা তাঁকে মেরে না দেন, সেটাই চিন্তার।’’

পুজো বুঝি এসে গেল। আর ক’দিন পরেই মহালয়া। দেবীপক্ষ মানেই পুজোর আমেজ। তার আগে কি ধরা দেবেন রাজীব? তিনি কি আত্মসমর্পণের পথে হাঁটবেন? পিতৃপক্ষে কি গোয়েন্দার খোঁজ পাবেন গোয়েন্দারা? রাজীব-কাণ্ডে আপাতত এমন নানা প্রশ্নই সম্বল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here