দেশের সময় ওয়েডেস্ক: দিন কয়েক আগেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের পদ ছাড়ার পরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন রতন ঘোষ। এ বার দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ক্রীড়া কর্মাধ্যক্ষ ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টার।

তাঁর অভিযোগ, আমার নামে একটার পর একটা অভিযোগ আসছে। দলের সব স্তরের নেতার সঙ্গে কথা বলেও ফল মেলেনি। জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক থেকে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গেও আমি কথা বলেছি। কিন্তু কারও উত্তরে আমি সন্তুষ্ট নই।’’ তবে কি তিনি রতন ঘোষের মতো জেলা পরিষদের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বাবু মাস্টার বলেন, সময় সব বলে দেবে, কিছু দিন অপেক্ষা করুন।

বাবু মাস্টারের এমন বক্তব্য থেকেই জেলার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা। ২০১১ সালে সিপিএম থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে বলে নিজেই দাবি করেছেন বাবু। তাঁর দাবি, সন্দেশখালিতে খুন যুক্ত থাকা-সহ ৫টি মিথ্যা মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৩টি মামলা ভেড়ির মাছ চুরির অভিযোগে। সব ক’টি মামলাতেই তিনি জামিন পেলেও দলের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ বাবুর। তাঁর ক্ষোভ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের আহ্বায়ক নারায়ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, দল কখনওই তাঁর বিরুদ্ধে যায়নি এখনও পর্যন্ত।

এদিকে বৃহস্পতিবার সাত সকালে রতন ঘোষ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ের বাড়িতে উপস্থিত! কেন? এদিকে রতন বাবুকে বনগাঁর তৃণমূল শিবির চোখে চোখে রেখেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল । সূত্রের খবর,রতন এবার বনগাঁ সহ উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের ভাঙনে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা৷ ইতি মধ্যেই বনগাঁ শহরে গুঞ্জন ছড়িয়েছে রতনের হাত ধরেই বিজেপি শিবিরে পা রাখবেন বেশ কয়েক জন তৃণমূলের ডাকাবুকো নেতা৷শোনা যাচ্ছে শহরের বাইরে কয়েক জন এমনই নেতাদের সাথে সাক্ষাৎও সেরেফেলেছেন রতন বাবু।এ বিষয়ে রতন ঘোষ দেশের সময় কে জানিয়েছেন, এসবই সৌজন্য মুলক সাক্ষাৎছিল, তবে অনেকেই আমার সাথে নতুন করে যোগাযোগ রাখছেন। তবে কোন পচা আলুর এই দলে জায়গা নেই, বনগাঁর মানুষ ওদেরকে ইছামতীতে ফেলে দিয়েছে, ভাসতে ভাসতে বসিরহাটের নোনা জলে মিলিয়ে যাবে৷ ওই মুখ গুলোকে আর কেউ দেখতে চাইছে না৷ কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে ইছামতীর স্বচ্ছ জলের মতো৷ অর্থাৎ রতন. বাবুর কথায় বোঝাই যাচ্ছে বনগাঁতে এখনও তৃণমূল শিবিরে আরও ভাঙন চলবে৷

যদিও দলে ভাঙনের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূলের বিধায়ক গোপাল শেঠ। তিনি বলেন রতন ঘোষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, দল বহিস্কার করেছে তাঁকে,মানুষ এর জবাব দেবে৷বনগাঁয় ইছামতীর তীরে যেমন গার্ডওয়াল দেওয়া আছে, যাতে বন্যার জল না ঢুকে পড়ে বাড়িতে বাড়িতে, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকদের কে দিয়ে গার্ডওয়াল তৈরী করে রেখেছে,যা বনগাঁর বুকে কেউ ভাঙতে পারবেনা।

অন্য দিকে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের মাঠেও বড় ভাঙনের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস।
ডানকুনি পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ড থেকে পদত্যাগের কথা গতকালই ঘোষণা করেছিলেন প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি জানিয়ে দিলেন, তাঁরা অনেকে মিলে আজ পদত্যাগপত্র জমা দেবেন পুরসভায়। তারপর সম্পর্ক শেষ তৃণমূলের সঙ্গেও।


তাঁর সাফ কথা, “দাদার পথেই আমরা।” বেশ কয়েক জন পুর প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য দল ছাড়ছেন বলে জানিয়েছেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বেই তাঁরা চলবেন বলে খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন দেবাশিসবাবু। ডানকুনি এলাকার দাপুটে নেতা তিনি। সারা বছর ধরে কর্মসূচিতে থাকেন। জনসংযোগও নিবিড় বলে স্থানীয়দের মত। এবার তিনি সহ আরও নেতারা তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দুর পথ অনুসরণ করতে চলেছেন বলে ঘোষণা করে দিলেন।

এদিন দেবাশিসবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার সাংসদ বলছেন দিদিই সব? তাঁর ছবি দেখিয়েই আপনারা নেতা! কী বলবেন? দেবাশিসবাবুর উত্তর যেন ঠোঁটে লেগে ছিল। তিনি বলেন, “আমিও তো মনে করি দিদি সব। তাহলে প্রশান্ত কিশোর কেন? কে প্রশান্ত কিশোর? ২০০৪-এ তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন দিদি একা। তার পর ২০০৯-এ ওই লড়াই। ২০১১-য় পরিবর্তন। এত দিন তো দিদিই করতেন। তাহলে কেন কর্পোরেট সংস্থা?”


১০ নভেম্বর শুভেন্দু নন্দীগ্রামে যে বক্তৃতা করেছিলেন, তারপর কল্যাণবাবু যা নয় তা বলেছিলেন তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। শ্রীরামপুর রবীন্দ্র ভবনে দাঁড়িয়ে কল্যাণের বক্তব্য ছিল, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটির বাইরে আলু বেচতিস রে আলু বেচতিস!”

এখন দেখা যাচ্ছে, নিঃশব্দে কল্যাণের গড়েই ভাঙন ধরিয়ে দিলেন শুভেন্দু। কল্যাণবাবুর কেন্দ্রে যে যে বিধানসভাকে তাঁর ঘনিষ্ঠরা দুর্ভেদ্য ঘাঁটি বলে মনে করেন তার মধ্যে অন্যতম চণ্ডীতলা বিধানসভা। চণ্ডীতলার মধ্যেই পড়ে ডানকুনি। এবার সেখানেও ভাঙতে চলেছে শাসকদল।

বনগাঁ,বর্ধমান, মালদহ, হুগলি, হরিণঘাটা—ক্রমশ সংক্রামিত হচ্ছে তৃণমূল ত্যাগ।

ক্ষোভ, বিক্ষোভ, ইস্তফার যেন হিড়িক পড়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসে!

শুভেন্দু অধিকারী বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এখন ও ২৪ ঘণ্টা কাটেনি। এর মধ্যেই মালদহের একটি ব্লকের পাঁচ অঞ্চল সভাপতি ইস্তফা দিয়ে দিলেন। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে মালদহের রাজনীতিতে।


জুলাই মাসে সাংগঠনিক রদবদলের সময় জেলা পর্যবেক্ষক পদ তুলে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন মালদহ জেলার পর্যবেক্ষক। অনেকের মতে, বামনগোলা ব্লকের যে পাঁচ জন ইস্তফা দিয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী।

ব্লক সভাপতিকে চিঠি লিখে পাঁচ অঞ্চল সভাপতি ইস্তফা দিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সবারই বয়ান হুবহু এক। সকলেই বলেছেন, দলীয় নেতৃত্বের বিমাতৃসুলভ আচরণে তাঁরা ব্যথিত ও দুঃখিত।
যদিও জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর দুলাল সরকার বলেছেন, যাঁরা ইস্তফাপত্র লিখেছেন তাঁরা কেউ আর অঞ্চল সভাপতি নেই। ওই এলাকাগুলিতে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

শুভেন্দু দল ছাড়লে যে অনেকে তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন সে গুঞ্জন আগেই ছিল বাংলার রাজনীতিতে। কিন্তু বিধানসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা যে এই আকার নিয়ে নেবে তা বোধহয় অনেকেরই ধারণা ছিল না।

বুধবার রাতে কাঁকসায় বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে শুভেন্দুর যাওয়া, সেখানে আসানসোলের পুর প্রশাসক তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির উপস্থিতি, কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীর থাকা—সব মিলিয়ে জল্পনা তীব্র হচ্ছিলই। এদিন আবার দেখা গেল মালদহের এক ব্লকের পাঁচ নেতা ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন।


অনেকের মতে, শুভেন্দু কখনওই সে ভাবে বর্ধমানের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখতেন না। দুই মেদিনীপুর, জঙ্গলমহল, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর—এই ছিল তাঁর দায়িত্বের জেলা। এখন শুভেন্দু যদি বর্ধমানেই এই ধরনের পেনিট্রেশন তৈরি করতে পারেন তাহলে তাঁর হাতে সংগঠন তৈরি হওয়া জেলাগুলিতে কী হবে বোঝাই যাচ্ছে।
এদিন ইকো পার্কে মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলে এখন রোজ চমক থাকবে। সকালে শুনবেন এ ছেড়ে দিয়েছে, বিকেলে শুনবেন ও ছেড়ে দিয়েছে। ডিসেম্বর মাসটা পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে ইতিহাস হয়ে থেকে যাবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here