দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃবৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয় বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের মৃতদেহ। তারপরেই দানা বাঁধে অনেক প্রশ্ন। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সেটা জানার জন্য সবাই তাকিয়ে ছিল ময়নাতদন্তের রিপোর্টের দিকে। তাতে জানা গিয়েছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্যই মৃত্যু হয়েছে শর্বরী দত্তের।

সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছিল ৬৩ বছরের শর্বরীদেবীর। তাই শৌচাগারে পড়ে যান তিনি। সেখান থেকে ইন্টারনাল হ্যামারেজ হয় তাঁর। তবে জানা গিয়েছে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোরবেলা সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছিল ফ্যাশন ডিজাইনারের, এমনটাই মনে করছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে খুনের ঘটনা এটি নয়। তবে নিজেদের তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্তের পরে শর্বরী দত্তের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপরে তাঁর শেষকৃত্য কী ভাবে হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার। তবে ময়নাতদন্তে শর্বরীদেবীর মৃত্যুর যে সময় দেখা যাচ্ছে, তাতে পরিবারের বাকিদের সঙ্গে তাঁর দূরত্বের একটা দিক উঠে আসছে। কারণ বৃহস্পতিবার সারাদিন তাঁর দেহ বাড়িতে পড়ে থাকল, অথচ তা জানা গেল রাতে। এতেই বোঝা যাচ্ছে ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে সম্পর্কের হয়তো অবনতি হয়েছিল তাঁর।

ব্রড স্ট্রিটের বাড়িতে ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে থাকতেন শর্বরীদেবী। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সারা দিনই তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়নি শর্বরীদেবীর। ১৬ তারিখ শেষবার ডিনারে মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ছেলে। তার পরে ১৭ তারিখ গোটা দিন কাটার পরে গভীর রাতে এই ঘটনা। শৌচাগারের দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ।

নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফ্যাশন দুনিয়ায় অন্য ধারা নিয়ে কাজ শুরু করেন শর্বরীদেবী। অনেকের মতে, ভারতে তখন পুরুষদের ফ্যাশন নিয়ে সে ভাবে কোনও কাজই হতো না। ঠিক সেই জায়গাটাতেই অভিনব ভাবনা নিয়ে আসেন শর্বরীদেবী।

বিশেষ করে ধুতির ফ্যাশনে সারা দুনিয়া এক নামে চিনত তাঁকে। রঙিন ধুতির পাড়ে কাঁথা স্টিচ বা রাজস্থানী প্রিন্ট– এসবের সৃষ্টি ছিল তাঁরই। বিভিন্ন দেশের লোক সংস্কৃতিকে পোশাকে ফুটিয়ে তুলতেন শর্বরীদেবী। তার মধ্যে অন্যতম ছিল মিশরীয় সভ্যতা। ২০০৮ সাল নাগাদ তাঁর ধুতি পাঞ্জাবির উপর ইজিপ্ট ঘরানার কারুকার্য করে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি।

টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির একাধিক অভিনেতা তাঁর ডিজাইন করা পোশাকে বিয়ে সেরেছেন। সম্প্রতি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েডিং কস্টিউমও তৈরি করেছিলেন শর্বরীদেবী। জয়া বচ্চন তাঁর বিশেষ ভক্ত ছিলেন, গোটা পরিবারের জন্য পোশাক ডিজাইন করার বরাত দিতেন শর্বরীদেবীকেই।

ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, বছর কয়েক আগে ব্র্যান্ডের নাম নিয়ে ছেলের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছিল শর্বরীদেবীর। ব্যবসায়িক কারণ নিয়েই চলছিল মা-ছেলের মামলাও। কয়েক বছর আগে পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে নিজের স্টোর খোলেন শর্বরীদেবী, নাম দেন ‘শূন্য’। সে সবই শূন্য করে দিয়ে অকালে চলে গেলেন শর্বরী দত্ত। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া ফ্যাশন জগতে ও টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here