দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেওয়াল লিখন স্পষ্ট ছিল। দেশের সময় এ পরিষ্কার ভাবে এই সম্ভাবনার কথা লেখা হয়েছিল অনেক আগেই।
শুক্রবার হলও তাই। কাল ২৩ জানুয়ারি শনিবার কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে আজ শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন।

বিধানসভা ভোটের আগে এই নিয়ে তিন জন মন্ত্রী ইস্তফা দিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে। তিন জনই তরুণ। এবং দল বা বিরোধীরা যাই বলুন, অনেকেই মনে করেন এই তিন নেতাই সম্ভাবনা ময়। রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। রাজীব ও লক্ষ্ণীরতন শুক্ল দুজনেই পরিচ্ছন্ন ও জেন্টলম্যান রাজনীতিক বলে ভাবমূর্তি রয়েছে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুভেন্দুকে দলে ধরে রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন তা রাজীবের ক্ষেত্রে দেখা যায় নি। তার কারণও রয়েছে। রাজীবের সঙ্গে দু’বার মিটিং করেছেন তৃণমূল মহা সচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পুরমন্ত্রী ববি হাকিমও তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু পরে তৃণমূল নেতৃত্ব হয়তো বুঝে যান, শুভেন্দুর মতই রাজীবও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। শুভেন্দুর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও যেমন লাভ হয়নি, এ ক্ষেত্রেও তেমনই। কারণ, এ হেন মরিয়া চেষ্টার বার্তা বাইরে গেলে এঁদের রাজনৈতিক উচ্চতাই বাড়বে, দলের লাভ হবে না।


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথমে সেচ মন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁকে প্রথমে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর এবং শেষে বন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে মোটেই খুশি ছিলেন না রাজীব। তাঁর অসন্তোষের কথা তিনি দিদির কাছে গোপন করেননি। বরং বন দফতরের দায়িত্ব দিতেই বলেছিলেন, আমি মন্ত্রিসভায় থাকতে চাই না।

তখন নাকি বলা হয়েছিল, তাঁর গুরুত্ব বাড়ানো হবে।রাজীব ঘনিষ্ঠদের মতে, ভোটের আগে গাজর ঝোলানো হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা দাদার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পর কেঁদে ফেললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবন থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে ইস্তফা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন রাজীব। এদিন তিনি বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। খুবই বেদনাগ্রস্ত হয়েছি। কোনও দিন ভাবিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কাউকে আঘাত দিয়ে থাকলে মার্জনা করবেন। যতদিন বেঁচে থাকব আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। উনি আমায় কাজের সুযোগ দিয়েছেন। নতমস্তকে ওঁকে প্রণাম জানাচ্ছি। হয়তো এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতাম না। কিন্তু গত এক মাস মানসিক দ্বন্দ্ব হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিলাম’।

মন্ত্রিসভা থেকে বিদায়বেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এদিন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, ‘আড়াই বছর আগে আমার দফতর বদলানো হয়। বদলের সময় মুখ্যমন্ত্রী সৌজন্য দেখাননি। টিভির ব্রেকিং নিউজ দেখে জানতে হয়েছে এ খবর’।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘দলের প্রতি অসন্তোষের কথা দলনেত্রীকে বহুবার বলেছিলাম। দলের কয়েকজন সহকর্মীদেরও অসন্তোষের কথা বলেছিলাম। কিন্তু, এক-দেড় মাস আমার দলের সহকর্মীদের ও সতীর্থদের কথা আমায় আঘাত করেছে। বেদনাগ্রস্ত হয়েছি। তবে, আমি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করি না। কখনও ব্যক্তিগত কুৎসা করব না’।

তবে, তিনি কি বিজেপি-তে যোগ দেবেন? তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়বেন? এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান রাজীব। অবশ্য, প্রাক্তন বনমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘মানুষ বিচার করবে কী কাজ করেছি’

গত কয়েকদিন ধরে দীর্ঘ জল্পনার পর এদিন বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। রাজভবনে গিয়ে জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎও সারেন তৃণমূল বিধায়ক। রাজীবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাজ্যপাল ধনখড়। এদিন, ফেসবুকে পোস্টে মন্ত্রীত্ব ছাড়ার কথা জানান রাজীব। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই মন্ত্রী ‘বেসুরো’ ছিলেন। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভেও দলের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল রাজীবকে। মন্ত্রী পদে ইস্তফার পর তাঁর বিজেপি-তে যোগদানের সম্ভাবনা আরও জোরালো হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here