দেশের সময়,ওয়েবডেস্কঃ নতুন জম্মু-কাশ্মীরের স্বপ্ন দেখালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জাতির উদ্দেশে ভাষণে বললেন স্বপ্নের সেই নতুন কাশ্মীরে থাকবে না সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ। বেড়ে উঠবে পরিকাঠামো। পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই নতুন দিন দেখবে উপত্যকা।

এদিন মোদীর ৪০ মিনিটের ভাষণের প্রথমার্ধ ছিল এতদিনের বঞ্চনার কথা আর বাকি সময়টায় দেখালেন স্বপ্ন। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন কাশ্মীরের স্বপ্ন। যেখানে উন্নয়নের জোয়ার বইবে, যুব সম্প্রদায় কাজ পাবে। শান্ত লাদাখ আর জম্মু-কাশ্মীরে নতুন গণতন্ত্র আসবে। সেখানে স্পোর্টস অ্যাকাডেমি যেমন হবে তেমনই শুরু হবে সিনেমার শ্যুটিং। বিশ্বের সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসবে ভূস্বর্গ।

অনুচ্ছেদ ৩৭০ কার্যকর থাকায় এত দিন জম্মু-কাশ্মীরের কী কী ক্ষতি হয়েছে, এবং এখন সেটা বিলুপ্তির পরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় রাজ্যবাসীর কী কী লাভ হবে তা এদিন বিস্তারিত জানান প্রধানমন্ত্রী।
৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ হওয়ার পরে প্রথম বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘৩৭০ ধারা কার্যকরী থাকায় জম্মু-কাশ্মীর পেয়েছে শুধু সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, পরিবারবাদ এবং দুর্নীতি। জনকল্যাণে সংসদে যে সব আইন তৈরি হত, তা কার্যকরী হত না উপত্যকায়।”

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতেন না এখানকার বাসিন্দারা। এমনকি, চাকরিতে সংরক্ষণ, তথ্য জানার অধিকারও ছিল না। সেই সব থেকে মুক্ত হয়ে এক নতুন জম্মু-কাশ্মীর আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে।

এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, এখন কেন্দ্রের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীর এই সব সুযোগ পেলেও তা সাময়িক। বেশি দিন জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকবে না। শীঘ্রই বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা বললেও কবে তা হবে এমন কোনও ইঙ্গিত দেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে লাদাখ যে বরাবরের জন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কাশ্মীরবাসীর উদ্দেশে এদিন মোদী বলেন, ‘‘আপনারা কখনওই মনে করবেন না আলাদা। আপনাদের সুখ-দুঃখ আমাদেরও সুখ-দুঃখ। ১৩০ কোটি ভারতীয়র সুখ-দুঃখ।’’ কাশ্মীরবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে ধুমধাম করে ঈদ পালনের কথাও বলেন মোদী। ঈদের সময়ে সরকার যাবতীয় সাহায্য করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এদিন মোদী বারবার কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়ের কাছে নতুন ভূস্বর্গ গঠনে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। বলেছেন‘‘আসুন আমরা সবাই মিলে কাশ্মীরকে সন্ত্রাসমুক্ত, বিচ্ছিন্নতাবাদমুক্ত এমন এক শান্তির উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলি, যাতে সারা বিশ্বে নজির তৈরি হবে।’’এই কাজে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে যোগ দেওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এক নজরেঃ

৩৭০ ধারা খারিজের পর প্রথমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।

কী কী বললেন প্রধানমন্ত্রী–

৩৭০ ধারা ও ৩৫ এ ধারার জন্য জম্মু-কাশ্মীরের যাবতীয় সমস্যার কারণ।

দেশের অনেক আইনের সুবিধা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ পাননি।

সংরক্ষণের সুবিধা মেলেনি এতদিন। সাফাইকর্মী থেকে স্কুল পড়য়ারা অনেক সুবিধা পাননি।

নতুন ব্যবস্থায় যাবতীয় সুবিধা দেওয়া হবে।

রাজ্য সরকারের কর্মীরা এখন থেকে অন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো যাবতীয় সুবিধা পাবেন।

সব দফতরের শূন্যপদ পূরণ করা হবে।

আপাতত জম্মু-কাশ্মীর কিছু দিনের জন্য কেন্দ্রের অধীনে থাকবে। লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকলেও জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসবে। বেশিদিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রাখা হবে না।

রাজ্য পুলিশ এতদিন অনেক সুবিধা পেত না। সেই সব প্রকল্প চালু করবে কেন্দ্র।

এতিদন জম্মু-কাশ্মীরের বহু মানুষের বিধানসভা ও অন্যান্য স্থানীয় ক্ষেত্রের নির্বাচনে ভোটাধিকার ছিল না। এবার সেই অধিকার মিলবে।

আতঙ্কবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব থেকে মুক্ত হবে কাশ্মীর।

দ্রুত ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল গঠন শুরু হবে।

সরকারি চাকরিতে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার থাকবে।

কাশ্মীরে আবার স‌িনেমার শ্যুটিং শুরু হবে। দেশের সব ফিলম ইন্ডাস্ট্রির কাছেও এই জন্য অনুরোধ রাখছি।

জম্মু-কাশ্মীরে খেলধুলার সুযোগ বাড়ানো হবে। স্পোর্টস অ্যাকাডেমি হবে, স্টেডিয়াম হবে।

জম্মু-কাশ্মীরে ঈদ পালনে কোনও সমস্যা হবে না। সরকার সব রকমের সাহায্য করবে।

ছবি সংগৃহীত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here