দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দুদিনের বঙ্গ সফরে এসে শেষ পর্বে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল সরকারকে একহাত নিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষের মনে অনেক প্রত্যাশা ছিল। ১০ বছর পিছিয়ে দেখলে দেখবেন, মানুষকে ঠকানো হয়েছে। মা-মাটি-মানুষের সরকার এখন তুষ্টিকরণের সরকার। মানুষের মনে ক্ষোভ বাড়ছে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বাংলার স্বপ্ন সফল হবে। যেখানে যেখানে আমাদের সরকার এসেছে, সেখানেই আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার আসার পর ৬০ কোটি মানুষের জীবন পালটে দিয়েছি। কৃষক থেকে শুরু করে গরিব-সকলেরই জীবন পালটাচ্ছে। বাংলার মানুষকে বলেছি, কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূলকে সুযোগ দিয়েছেন। একটা সুযোগ নরেন্দ্র মোদীকে দিন। পাঁচ বছরে সোনার বাংলা গড়ে দেব।’

এদিন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল সরকারের একমাত্র লক্ষ্য, ভাইপোকে মুখ্যমন্ত্রী করা। বাংলার মানুষই ঠিক করুন, পরিবারবাদ চাই, নাকি উন্নয়নবাদ! প্রশাসনের রাজনীতিকরণ, রাজনীতিকে গুণ্ডাদের নিয়ন্ত্রণে করছেন, দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিকতার রূপ দিয়ে দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের ত্রাণেও দুর্নীতি হচ্ছে। বাংলার মানুষ ভাবছে, তাঁরা কি দ্বিতীয় স্তরের নাগরিক? তিনটে আইন চলছে। একটা ভাইপোর জন্য, একটা দলের জন্য, আর একটা সাধারণ মানুষের জন্যে। দেশে কোথাও এমন হয় না।’

এ রাজ্যে আসার পর থেকেই তৃণমূল নেতারা বিজেপি শাসিত রাজ্যে মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে বারাবার আক্রমণ শানাচ্ছেন অমিত শাহের দিকে। সেই প্রসঙ্গ টেনেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এদিন সেই বিষয়ে বলেন, ‘মহিলা নিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। কিন্তু ২০১৮ সালের পর ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোকে কেন তথ্য দেননি মমতা দিদি? ২০১৮ সালে দেশে ৩ নম্বরে ছিল বাংলা। ধর্ষণে এক নম্বরে ছিল। রাজনৈতিক খুনে দেশে এখন এক নম্বরে। কত মানুষের হত্যা হচ্ছে, কোন তথ্যই দেওয়া হচ্ছে না।’

কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি এ রাজ্যে লাগু না করা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আয়ুষ্মান যোজনা কেন লাগু করছেন না? বাংলার কৃষকদের কী দোষ? প্রতি মাসে চিঠি লেখে, আমাদের টাকা দিয়ে দিন। মে মাসের পর সব পাবেন। নিজেদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাবেন। কারণ তার পর আর এই সরকার থাকবে না। আসন্ন নির্বাচনে আমরা ২০০-র বেশি আসন পাব। যারা হাসার, তারা হাসুন। মোদীজির প্রতি বাংলার মানুষের বিশ্বাস, আশীর্বাদ আছে। আমাদের একবার সুযোগ দেবেনই এখানকার মানুষ। দেশের সুরক্ষাও এর সঙ্গে যুক্ত।’

একুশের ভোটে বাংলায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে?

এই কৌতূহল শুধু বাংলায় রাজনীতির বারান্দায় সীমিত নেই, সাধারণেরও জানার আগ্রহ রয়েছে। শুধু তা নয়, খোদ বিজেপির বহু কর্মী সমর্থকেরও কৌতূহল, তাঁরা কোনও মুখকে সামনে রেখে ভোটে যাবেন, নাকি ভোটে জিতলে মুখ খোঁজা হবে!


এ হেন পরিস্থিতিতে ইদানীং সব থেকে আলোচনায় উঠে এসেছে দুটি মুখ। প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক তথা বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি তৃণমূলের বলিষ্ঠ নেতা তথা সেচ ও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী?


শুক্রবার নিউটাউনের পাঁচতারা হোটেলের সাংবাদিক বৈঠকে সোজাসাপ্টা এই প্রশ্নটাই করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। সেই জবাবে শাহ কিছুটা হেঁয়ালি করে বলেন, “তালিকা অনেক লম্বা। দুটো নামের মধ্যে আটকে থাকবেন না। সময় আসুক। সব দেখতে পাবেন!”

যখন এই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন শাহ দৃশ্যতই তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি। হাসতে হাসতে এও বলেন, “এখনও তো ৬ মাস আছে। দাঁড়ান না!”
বিজেপি যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে বাংলার ভোটে ঝাঁপাতে পারে সে জল্পনা অনেক আগে বাজারে চাড়িয়ে গিয়েছে। কারণ, সৌরভ বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার পর আম ধারনা হল এর নেপথ্য কারিগর হলেন অমিত শাহ। তা ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ ক্ষমতার জুটিটাও এখন ইন্টারেস্টিং—সৌরভ ও অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ।

সুতরাং অনেকে মনে করেন, নিশ্চয়ই প্রতিদান নেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়ই কোনও রফা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, মহারাজ এ ব্যাপারে নির্বিকার। বেহালার বীরেন রায় রোডের লাল বাড়ির ভদ্রলোককে যতবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে, ততবার তিনি বলেছেন, “আই অ্যাম নট ইন্টারেস্টেড ইন এনি পলিটিক্স!”

আবার শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে যে আলোচনা ছিলই বঙ্গ রাজনীতিতে। তা গত কয়েক দিনে বিচ্ছুরিত হয়েছে। নন্দীগ্রামের বিধায়কের একাধিক বক্তব্য শুনে অনেকেই বলছেন, এবার বোধহয় শুভেন্দুও যাচ্ছেন গেরুয়া বাহিনীর দিকে! বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বরাবরই শুভেন্দুকে নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। কারণ, দিল্লির নেতারাও জানেন বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর কারও যদি জনপ্রিয়তা থাকে তিনি হলেন শুভেন্দু। এবং তিনি বিজেপিতে এলে তৃণমূলের অনেকেই সেই পথ অনুসরণ করবেন। তাছাড়া রাজ্য রাজনীতিতে অনেকে বুঝতে পারছেন শুভেন্দু কোনও ভাবেই অভিষেকের নেতৃত্ব মানতে চাইবেন না। ফলে তাঁর তৃণমূল-ত্যাগ অনিবার্য।


তবে অমিত শাহ এদিন ফের একবার পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, এমন অনেক রাজ্য রয়েছে যেখানে বিজেপির কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ছিল না। ভোটের পর একজনকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি গত পাঁচ-ছ’বছরে অনেক রাজ্যে জিতেছে যেখানে মুখ ছিল না। যেমন, উত্তরপ্রদেশ। সেখানে তিনশর বেশি আসনে জিতেছিল বিজেপি।”

প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও এর আগে চোদ্দ সালে মহারাষ্ট্র নির্বাচনে, পরে হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে না ধরেই সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি।
এদিন অমিত শাহ বাংলার মানুষের উদ্দেশে বলেন, “বাংলায় কংগ্রেস অনেক বছর শাসন করেছে। কমিউনিস্টদের এ রাজ্যের মানুষ বারবার সুযোগ দিয়েছিলেন।

দু’বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকেও দেখলেন। এবার বিজেপিকে একটা সুযোগ দিন। একটা সুযোগ!”


আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি এও জানিয়ে দেন, ২০০-র বেশি আসন নিয়ে বাংলায় সরকার গড়বে গেরুয়া শিবির। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “লোকসভার আগে যখন আমি প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক বৈঠকে বসে বলেছিলাম বাংলায় আমরা ২০টি আসন পাব, তখন অনেক সাংবাদিক হেসেছিলেন। আমরা উনিশের ভটে ১৮টি আসন জিতেছি। এবার আমার হাসার পালা। বলে গেলাম। মিলিয়ে নেবেন।

মমতার সরকারের পতন অনিবার্য!”
যদিও তৃণমূলের এক মুখপাত্র বলেন, “লোকসভা আর বিধানসভা এক নয়। যাঁরা লোকসভায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন তাঁরাও বুঝতে পারছেন কী ভুল করেছেন। বাংলায় সরকার গড়ার স্বপ্ন বিজেপির কখনও পূরণ হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here