দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার জেরে অন্যান্য শিল্পের মতোই চরম সঙ্কটে চা–‌শিল্প। অধিকাংশ বাগানেই মাত্র পঁচিশ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ চলছে। প্রথম দফায় উৎপাদনের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তার মাঝেই কার্যত নজির সৃষ্টি করল মাঝেরডাবরি চা–‌বাগান। এই সঙ্কটের সময় সবাই যখন সরকারের  থেকে নানা সুযোগ–‌সুবিধা দাবি করছে, তখন মাঝেরডাবরি উল্টে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। চা–‌বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, আগের আর্থিক বছরে আমাদের যা লাভ হয়েছে, এবং আগামীদিনেও যা লাভ হবে, তার অর্ধেক আমরা তুলে দেব সরকারি তহবিলে। এই ঘোষণার পর সাড়া পড়ে গেছে চা–‌বলয়ে। চা–‌শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। আগামীদিনে অন্যান্য বাগানও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে, এমনটাও শোনা যাচ্ছে। 

বিজ্ঞাপণ:


উল্লেখ্য, গত দু’‌মাসে চা–‌বাগানগুলিতে উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে। এরপরও মাঝেরডাবরি চা–‌‌বাগান কীভাবে এত বড় সিদ্ধান্ত নিল? বাগানের ম্যানেজারের কথায়, ‘‌আমরা এই মুহূর্তে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করছি না। এটা সেই সময় নয়। মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। বাগানের শ্রমিকদের স্বার্থে সারাবছর কাজ করি আমরা। ত্রাণ তহবিলে অর্থ দিলেও আমাদের বড় কোনও সমস্যা হবে না।’‌


প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মাঝেরডাবরি চা–‌‌বাগানে বছরে প্রায় ১৪ লক্ষ কেজি চা–‌‌পাতা উৎপাদন হয়। আপাতত ৩০ শতাংশ উৎপাদন নষ্ট হয়েছে। জানা গেছে, মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ কেজি চা–‌‌পাতা উৎপাদন হলে সরকারের ঘরে অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা সরাসরি তুলে দিতে পারবে মাঝেরডাবরি।

টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স শাখা সূত্রে জানানো হয়েছে এটা ‘‌মহৎ কাজ। দেশে অনেক চা–‌বাগান রয়েছে। তবে নজির তৈরি করল মাঝেরডাবরি। আমরা আশাবাদী উত্তরবঙ্গের অন্য চা বাগানগুলিও অনুপ্রাণিত হবে।’‌ এখন উত্তরবঙ্গের ৩০২টি চা–‌ওবাগানে মাত্র ২৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ চলছে।

টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স শাখার এক সদস্যের কথায় ‘‌আমরা মনে করি ১০০ শতাংশ  শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করা যেতেই পারে। কারণ, প্রতিটি চা–‌বাগানেই সামাজিক সুরক্ষা মেনে কাজ হচ্ছে। চা–‌বাগানের ভেতর যে অনুশাসন, নিজস্ব আইন রয়েছে, তা কোনও শহর বা গ্রামে থাকে না।’‌ উল্লেখ্য, কেরলে ইতিপূর্বে বন্যার সময় সাহায্য, নিজেদের বাগানেই নিজস্ব সোলার প্ল্যান্ট, সবার আগে বাগান থেকেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার মতো একের পর এক কাজ করেছে মাঝেরডাবরি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় শুধু নিজেদের চা–‌বাগান এলাকা নয়, আলিপুরদুয়ার জেলা সদরের একটি অংশ স্যানিটাইজ করেছে তারা।‌‌‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here