দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের আগে উত্তর চব্বিশ পরগণার গাইঘাটায় গিয়ে মতুয়া মন পাওয়ার চেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিজেপি যেখানে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতুয়াদের সমর্থন পেতে মরিয়া, সেখানে মমতার পাল্টা দাবি, মতুয়ারা এমনিতেই দেশের নাগরিক৷ এই অধিকার তাঁদের জন্মগত৷ রাজ্যের অন্যান্য উদ্বাস্তুদের মতো মতুয়াদেরও জমির দলিল দেওয়া হবে বলেও এ দিন আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

রবিবার গাইঘাটার গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ ময়দানে জনসভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায। মতুয়াদের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরকে তীব্র আক্রমণ শানান মমতা। এদিন মতুয়াদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সকলে নাগরিক। কে নাগরিক নয়? আপনারা যদি নাগরিক না হন আপনাদের জমি, বাড়ি, গাড়ি নেই? সবাই নাগরিক। আমরা সবাই সমান। আপনাদের আলাদা করে নাগরিকত্ব আবার কী দেবে? নির্বাচন এলেই মিথ্যাকথা বলে ভোট চাওয়া। ভাঁওতাবাজি। আর সারা বছর মতুয়ারা কেমন আছে, তা কি একবারও দেখার চেষ্টা করে?’’

এদিন মমতা দাবি করেন, মতুয়াদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাঁকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন স্বয়ং ‘বড়মা’ বীণাপাণি দেবী। পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, নাগরিকত্ব দেওয়ার নাম করে মতুয়াদের ভাঁওতা দিচ্ছে বিজেপি।

সম্প্রতি বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতুয়া তীর্থক্ষেত্র ওড়াকান্দি সফর নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে তাঁর তোপ, ‘‘তুমি প্রধানমন্ত্রী প্রতিবার বাংলাদেশ যাও আমাকে নিয়ে। তার কারণ শেখ হাসিনা আমাকে ভালবাসেন। কই, এ বার লুকিয়ে লুকিয়ে গেলে, এখানকার একটা ছোকরাকে নিয়ে। কই তখন তো আমাকে নিয়ে গেলে না। ভোটের জন্য যেতে হল।

মমতা বাংলাদেশিদের, অনুপ্রবেশকারীদের মদত দেয়। মমতা গেলে বিষ হয়, আর তুমি গেলে বিষক্ষয় হয়?’’ এই সূত্র ধরে তিনি আরও বলেন, ‘‘মতুয়াদের অধিকার জন্মগত। অধিকার তারা পেয়েছে। এ অধিকার নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই।’’ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রভাব আছে এমন এলাকায় দলের টিকিট দেওয়া নিয়ে ঠাকুর পরিবারের একটি বিশেষ অংশের প্রতি পক্ষপাত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেত্রী।

এই প্রসঙ্গেই বিজেপি-র প্রতি তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কই একটা গোঁসাই, দলপতি, কিংবা সাধারণ সমর্থককে তো টিকিট দাওনি?’রমেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে অনিরুদ্ধ বিশ্বাস, নরোত্তম বিশ্বাস, এঁরা তো মতুয়া সমাজের আদি লোক৷ এঁদের দিয়েই আমি বাকি কাজ করে দেব৷ মতুয়া সমাজের বাড়ি ঘর সব করে দেব৷ ঠাকুর বাড়ির জন্য কারও ভিক্ষে চাই না৷ এখানে মা-মাটি-মানুষের সরকার আছে৷’ মমতা জানান, ইতিমধ্যেই মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷ নমঃশূদ্র উন্নয়ন বোর্ডকেও ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷

সিএএ নিয়ে বিজেপি নেতারা দ্বিচারিতা করছেন বলেও অভিযোগ মমতার। তাঁর দাবি, ‘‘এখানে এসে বলছে মতুয়াদের অধিকার দেবে। আবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে গিয়ে বলছে সিএএ হবে না। এক একটা জায়গায় গিয়ে এক এক রকম কথা বলছে। ওদের মুখোশ খুলেগেছে। ওদের বহুরূপী চরিত্র।

কখনও টিকটিকি, কখনও গিরগিটি, কখনও নেংটি ইঁদুর, কখনও বেড়াল। লোকসভায় মতুয়ারা তো ভোট দিয়েছিল। কিন্তু বিজেপি একটা কাজ করেছে?’’ এর পরই মমতা দাবি করেন, ‘‘বড়মা (বীণাপাণি দেবী)-র হাতে লেখা চিঠি আমার কাছে অনেকগুলো আছে। তিনি বলেছিলেন, আমার অবর্তমানে তুমি ওদের দেখে রেখো। চিন্তা করবেন না। আমি দেখে রাখব।’’

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘ডবল ইঞ্জিন নিয়ে দিল্লিতে বসে আছে৷ ১ হাজার টাকা গ্যাসের দাম, মানুষ ভুলেছে প্রধানমন্ত্রীর নাম৷ শুধু ভোটের সময় ঠাকুর ঠাকুর করলে হবে না, মানুষের পেট ভরাতে হবে৷’ লোকসভায় মতুয়াদের ভোট পেয়ে রানাঘাট, ব্যারাকপুরে জিতেছিল বিজেপি৷ কিন্ত রাজ্যের কোনও কেন্দ্রেই কোনও কাজ করেনি বিজেপি৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here