দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হল ভারতে।মানুষের শরীরে টিকা দিতে শুরু করল দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট আহমেদাবাদের জাইদাস ক্যাডিলা। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে (ফেজ-১ ও ফেজ-২)ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি মিলেছিল আগেই। ফার্মা কোম্পানি জানিয়েছে, দুই পর্যায়ে ১০৪৮ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

ভারতে ভ্যাকসিনের দৌড়ে এগিয়ে জাইদাস ক্যাডিলার তৈরি জ়াইকভ-ডি ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট এবং ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের তৈরি কোভ্যাক্সিন। এই দুই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটই ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদন পেয়েছে।  ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর)-এরডিরেক্টর জেনারেল ডক্টর বলরাম ভার্গব গতকাল, বুধবারই জানিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই দুই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে। প্রতিটির ক্ষেত্রে প্রায় হাজার জন করে স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেওয়া হয়েছে।

জুলাই মাসের মাঝামাঝি মানুষের শরীরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করার জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রি ইন্ডিয়ায় (সিটিআরআই)নাম লিখিয়েছিল জাইদাস ক্যাডিলা।

ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে কী ভাবে?

ইনক্লুশন ক্রাইটেরিয়ায় ফেজ-১ ও ফেজ-২ পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে। ফেজ-১ পর্যায়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের। তবে সদ্য মা হয়েছেন বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন মহিলা এবং গর্ভবতীরা এই ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন না। স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দিষ্ট ডোজে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রত্যেককে টিকা নেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানেই টিকা নিতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। তারপর তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

ফেজ-২ পর্যায়ে ১২ বছর ও তার বেশী বয়সীদের টিকা দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

এক্সক্লুশন ক্রাইটেরিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। যেমন, যাঁরা ট্রায়ালে অংশ নেবেন তাঁদের কোনওভাবেই কোনও সংক্রামক রোগ থাকা চলবে না। জ্বর বা ক্রনিক রোগ রয়েছে, গত চার সপ্তাহের মধ্যে কোনও জটিল রোগ ধরা পড়েছে এমন রোগীরা ট্রায়ালে ভাগ নিতে পারবেন না। তাছাড়া গত ১৪ দিনের মধ্যে করোনা বা অনুরূপ সংক্রমণ ধরা পড়েছে বা করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসার রেকর্ড রয়েছে, হেপাটাইটিস বি বা সি রয়েছে, সম্প্রতি কোনওরকম ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন মানুষজনকে টিকা দেওয়া হবে না।

এই ক্রাইটেরিয়ায় ফেজ-১ পর্যায়ে টিকার পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ হবে ০ থেকে ৮৪ দিন ধরে। ফেজ-২ পর্যায়ের সময় আরও বেশি। পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ চলবে ০ থেকে ২২৪ দিন ধরে। এই দীর্ঘ সময় স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রভাবে কী কী পরিবর্তন হচ্ছে সেটা লক্ষ্য রাখা হবে।

কীভাবে জ়াইকভ-ডি ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে?

সার্স-কভ-২ ভাইরাসের স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনই মানুষের দেহকোষে প্রবেশ করছে। মানুষের কোষের রিসেপটর প্রোটিন (ACE-2)-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই স্পাইক প্রোটিন কোষে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করছে। ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তৈরির জন্য এই আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)স্পাইক প্রোটিনই স্ক্রিনিং করে বার করে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু সরাসরি সংক্রামক স্ট্রেন মানুষের শরীরে ঢোকানো যায় না,  তাই আগে ল্যাবরেটরিতে এই ভাইরাল প্রোটিন পিউরিফাই করা হয়েছে। তার সংক্রামক ক্ষমতা নষ্ট করার জন্য অন্য ভেক্টরের মধ্যে ক্লোন করা হয়েছে এই প্রোটিন। এরপরে ভেক্টর সমেত ভাইরাল প্রোটিন দিয়ে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট বানানো হয়েছে। ভেক্টর-সহ ভাইরাল প্রোটিন শরীরে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারবে না। বরং বি-কোষকে সক্রিয় করে তুলবে। এই বি-কোষ থেকেই রক্তরস বা প্লাজমায় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। প্রিক্লিনিকাল স্টেজে এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ইঁদুর, গিনিপিগ, খরগোশের উপর ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here