দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিনের ফর্মুলায় তৈরি কোভিশিল্ড টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল সাফল্যের পথে। পুণে, চণ্ডীগড়ে টিকার বৃহত্তর ট্রায়াল চলছে। এখনও অবধি কোনও স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে টিকার ডোজের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ভ্যাকসিন দেওয়ার পরবর্তী পর্যায়ে কোনওরকম শারীরিক জটিলতাও দেখা যায়নি। এমনটাই জানিয়েছে দেশের অন্যতম বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট।

চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে কোভিশিল্ড টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। ৩০০ জনকে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। এখনও অবধি ৯৭ জনকে স্ক্রিনিং করে টিকা দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

চণ্ডীগড়ের মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার অবধি ৬৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে, এখনও অবধি কোনও অ্যাডভার্স সাইড এফেক্টস দেখা যায়নি। এর আগে আরও যতজনকে টিকা দেওয়া হয়েছিল, সকলেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁদের শরীরেও কোনওরকম জটিলতা দেখা যায়নি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কোভিশিল্ড টিকা মানুষের শরীরে কার্যকরী হচ্ছে। সেরাম জানাচ্ছে, নির্দিষ্ট দিনের পরে যদি পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয়, তাহলেই টিকার পরীক্ষা সফল হবে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব মিলিয়ে মোট ১৬০০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা ছিল সেরামের। তবে অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকায় এক মহিলা স্বেচ্ছাসেবকের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা সামনে আসার পরে দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল শেষের দিকে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সেরাম। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, তৃতীয় স্তরে আরও বেশি জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। পুণের স্যাসন জেনারেল হাসপাতালে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে।

হাসপাতালের প্রধান ডক্টর মুরলিধর তাম্বে বলেছেন, তৃতীয় পর্বে দুটি ডোজে টিকার ট্রায়াল হবে। প্রাথমিকভাবে ১৫০-২০০ জনকে টিকা দেওয়া হচ্ছে এই হাসপাতালে। পরে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। টিকার ডোজ দেওয়ার পরে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রেখে ফলাফল সামনে আনা হবে।

সেরাম জানিয়েছে, এটাই কোভিশিল্ড টিকার চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল। দেশের অন্তত ১৭টি হাসপাতালে এই ট্রায়াল চলবে।  যার মধ্যে রয়েছে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ (এইমস), পুণে বি জে মেডিক্যাল কলেজ, পাটনার রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ, চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, যোধপুর-এইমস, গোরক্ষপুরের নেহরু হাসপাতাল, বিশাখাপত্তনমের অন্ধ্র মেডিক্যাল কলেজ, মাইসোরের জেএসএস অ্যাকাডেমি অব হাইয়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ। এই পর্বে টিকার ট্রায়ালের রিপোর্ট দেখেই উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে।

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফর্মুলায় তৈরি সেরামের কোভিশিল্ড টিকার দাম যাতে কম থাকে তার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাইক্রোসফট কর্তা বিল গেটস। জানিয়েছিলেন, ভ্যাকসিনের ডোজ পিছু দাম যাতে ৩ ডলারের মধ্যে থাকে তার জন্য তিনি ১৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করবেন।

তাছাড়া ভারতে তৈরি করোনার ভ্যাকসিন বিশ্বের সব দেশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গত অগস্টেই প্রাথমিকভাবে চুক্তি সেরে রেখেছিল গাভি। এই চুক্তির ভিত্তিতে বছরে ২০০ কোটি টিকার ডোজ তৈরি করবে বলে জানিয়েছিল সেরাম। সেরাম ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে,  অ্যাস্ট্রাজেনেকা কিংবা নোভাভ্যাক্স দুই সংস্থার গবেষণায় তৈরি ভ্যাকসিন ডোজের দাম হবে তিন ডলারের মধ্যে। অর্থাৎ ভারতীয় মূদ্রায় যা প্রায় ২২৫ টাকা। ভারত তো বটেই বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here