দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেশে কোভিড অতিমারির মাঝেই, সুখবর দিল বিশ্বব্যাঙ্ক । সারা বিশ্বের নিরিখে, বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে, দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রশ্নে । প্রথমে চিন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত । 

গত একবছরে কোভিড অতিমহামারীর জেরে রীতিমতো চাপের মুখে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি। তাও বিশ্ব ব্যাঙ্ক মনে করে, ২০২১ সালে দেশের অর্থনীতির বিকাশ হবে ৮.৩ শতাংশ হারে। তবে ২০২২ সালে বিকাশের সম্ভাবনা আর একটু কম দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিশ্ব ব্যাঙ্ক গ্লোবাল ইকনমিক প্রসপেক্টস নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, আগামী বছরে ভারতের অর্থনীতি ৭.৫ শতাংশ হারে বিকশিত হতে পারে। ২০২৩ সালে বিকশিত হতে পারে ৬.৫ শতাংশ হারে।

বিশ্বব্যাঙ্ক  এর হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হতে চলেছে ৮.৩ শতাংশ। এগিয়ে থাকা চিনের সঙ্গে ব্যবধান মাত্র ০.২ শতাংশের। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, বিশ্বব্যাঙ্ক -এর করা সমীক্ষা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সম্ভাব্য হিসাব ছিল ৫.৪ শতাংশ। যা বর্তমান হিসাবের চেয়ে ২.৯ শতাংশ কম। যদিও এই বছরের এপ্রিল মাসেই বিশ্বব্যাঙ্ক যে সমীক্ষা দিয়েছিল, তাতে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিল ১০.১ শতাংশ। যা বর্তমান সমীক্ষার চেয়ে প্রায় ১.৭% বেশি। সব মিলিয়ে কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ চালকের আসনে থাকবে– এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ।

এদিন, নিজেদের রিপোর্টে ভারতের কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক৷ তাদের মতে, ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির সম্ভাব্য কারন হিসাবে, উন্নত পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ, সঠিক পরিকল্পনা, গ্রামীণ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় উন্নতি- এই চারটি বিষয়কে ধরা যেতে পারে। ভারতের পাশাপাশি দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হতে চলেছে ভূটান ও বাংলাদেশেরও। দুই দেশেরই সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সংখ্যা ৫ শতাংশ। তবে ভাঁড়ার শুন্য পাকিস্তানের। তাদের সম্ভাব্য বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ২ শতাংশ।

ভারতের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়েও নিজের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক । সঙ্গে এ কথাও জানিয়েছে, কোভিড পরবর্তী দুনিয়ায়, সারা বিশ্বকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাভাবিক জায়গায় আসতে এখনও ৮০ বছর লাগবে। এই অর্থবর্ষে সম্ভাব্য বৃদ্ধির পরিমাণ ৫.৬%। তবে এই সংখ্যায় খানিক ধাক্কা লাগতে চলেছে আগামী অর্থবর্ষ থেকে। আগামী অর্থবর্ষে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৪.৩%। ২০২৩ এ সার্বিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা ৩.১। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির পরিমাণ চলতি অর্থবর্ষে ৬.৮%।

তবে দীর্ঘদিন পর অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রশ্নে দেশের এতটা এগিয়ে থাকা, যে জনমানসে খানিক আশার আলো আনবে, তা মানছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। সম্প্রতি দেশের জিডিপি এর রেকর্ড সংকোচন হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতিতেও রেকর্ড করেছে দেশ। হতাশ জনজীবনে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির খবর যে কিছুটা আশার আলো, তা মানছেন অনেকেই।

মে মাসের শেষে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায়, কোভিড অতিমহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ আসায় দেশের অর্থনীতিতে একপ্রকার অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতির বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। বেসরকারি ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়লে তবেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।

উল্লেখ্য,গত অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকেই দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার মাইনাস ২৪ শতাংশে নেমেছিল। পরের ত্রৈমাসিক থেকে অর্থনীতি একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গত অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ধরে রাখতে পারল না ভারত। তবে পরিসংখ্যান দপ্তর আগেই পূর্বাভাস এই দিয়েছিল। জানিয়েছিল, ২০২০–২১ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতির ৮ শতাংশ সঙ্কোচন হবে। ৭.৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হওয়ার কথা বলেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।

সেই সঙ্গে অবশ্য আশার কথাও শুনিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। তার বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গতবছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছিল, দ্বিতীয় ওয়েভে ততদূর হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বলেছে, কোভিড পরবর্তী সময়ে জিডিপি-র বিকাশের জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হওয়া চাই। কত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে, তার ওপরে নির্ভর করছে অনেক কিছু। সাধারণত কোনও সংকটের পরে বাজারে যদি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তাহলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া যদি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়, তাহলেও অর্থনীতির চাঙ্গা হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে বহু সংখ্যক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। তখন বাজারে নানা পণ্যের চাহিদা বাড়ে। অর্থাৎ পুঁজি বিনিয়োগও পরোক্ষে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

এর আগে গত ২৬ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিবৃতি দিয়ে বলে, “দেশ জুড়ে কোভিড ১৯-এর অতিমারীর মাঝেও ভারতের অর্থনীতি চাঙ্গা রয়েছে, এটা লক্ষ করার মতো বিষয়।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “মার্চ মাসে দেশের অর্থনীতির অনেকটাই উন্নয়ন হয়েছে। এমনকি অতিমহামারীর পূর্ববর্তী সময়কেও তা ছাপিয়ে গেছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here