দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার হঠাৎ করেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। কলকাতায় এসে সাংবাদিক সম্মেলন করে গোর্খা নেতা বিমল গুরুং জানিয়েছেন এনডিএ জোট ছাড়ছেন তিনি। একুশের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই গুরুংকে স্বাগত জানাল বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সেইসঙ্গে পাহাড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সব দলকে একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছে তৃণমূল।

বুধবার বিমল গুরুংয়ের সাংবাদিক সম্মেলনের পরে তৃণমূলের তরফে টুইট করে বলা হয়েছে, “শান্তির জন্য এনডিএ জোট থেকে সমর্থন তুলে নেওয়া ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আস্থা জানানোর জন্য বিমল গুরুংয়ের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। রাজনৈতিক স্বার্থে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে ব্যবহার করারে চেষ্টা ও বিজেপির আসল রূপ বাংলার মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে গিয়েছে।”

তৃণমূলের তরফে টুইটে আরও বলা হয়, “আমরা আত্মবিশাসী যে পাহাড়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন, গোর্খাল্যান্ড টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও সাধারণ মানুষ সবাই মিলে কাজ করবে। আমাদের মাতৃভূমির শান্তি ও উন্নতির জন্য সবাই আমাদের হাত ধরবে।”

এদিন হঠাৎ করেই বদলে যায় পাহাড়ের এই রাজনীতির খেলা। যে বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে বাংলার তৃণমূল সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছিল, পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন যিনি, সেই গোর্খা নেতা আজ কলকাতায় অভিজাত হোটেলে বসে সাংবাদিক বৈঠক করেন। আর সেখানেই নিজের পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানান তিনি।

একাধিক মামলায় জর্জরিত গুরুং যখন ফেরার ছিলেন, তখন রাজনৈতিক সূত্রে জানা যাচ্ছিল বিজেপির আশ্রয়ে তিনি। লোকসভা ভোটের সময়েও গুরুং প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। তবে তাঁর প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তের উপর।

কিন্তু এ দিন সেই বিজেপিরই তীব্র সমালোচনা করেন এই গোর্খা নেতা। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমরা কী পেয়েছি? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ সকলেই আশ্বাস দিয়েছিলেন গোর্খাল্যান্ডের দাবির স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে। ভোট ইস্তেহারেও সে কথা লিখেছিলেন। কিন্তু গত ৬ বছরে কিছুই তো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে শুধু বলেন, ‘দেখছি’, ‘হবে’। তুলনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বরং ভাল। উনি আমাদের কথা শুনেছিলেন। তার পর কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন।

গুরুংয়ের ভোট বদলের কাহিনিতে টুইস্টের শুরু এখান থেকেই। সাংবাদিক বৈঠকে এর পরেই গুরুং বলেন, আমি কেন্দ্রে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট তথা এনডিএ-র শরিক। কিন্তু আজ এই মুহূর্ত থেকে এনডিএ ছাড়ছি। সেই সঙ্গে এই অঙ্গীকার করছি যে একুশের বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ভোট লড়ব। সেই সঙ্গে গোর্খাল্যাণ্ডের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করব।

গুরুংকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার বিরুদ্ধে তো ইউএপিএ ধারায় মামলা রয়েছে, খুনের মামলা রয়েছে, পুলিশ আপনাকে খুঁজছিল? এই যে আপনি এখানে বসে রয়েছেন, পুলিশ তো কিছুই বলছে না!
জবাবে গুরুং বলেন, আমি রাজনৈতিক কর্মী। কোনও অন্যায় করিনি। এর পরেও যদি পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে তা হলে জেলে যেতে রাজি। সেখানে বসেই কাজ করব।

বাংলায় শাসক দলের সঙ্গে তাঁর কবে এবং কী ধরনের আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। এও প্রশ্ন করা হয়েছিল, তা হলে কি পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছে তৃণমূল? জবাবে গোর্খা নেতা বলেন, এখনও তৃণমূলের কারও সঙ্গে আমার আলোচনা হয়নি।

বস্তুত এক মাস আগে থেকেই রাজনৈতিক পরিসরে জল্পনা ছিল যে গুরুং তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু তখন গুরুং সে কথা বেমালুম অস্বীকার করেন। এমনকি একটি অডিও বার্তায় বলেন, তাঁর নামে মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের কথায়, গুরুংয়ের কথা হাস্যকর! শাসক দলের কারও সঙ্গে ওঁর আলোচনা হয়নি, অথচ তৃণমূলের সঙ্গে তিনি জোট করবেন ঘোষণা করে দিলেন! তাঁরা আরও বলেন, গুরুংয়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যেভাবে তৃণমূলের তরফে তাঁকে স্বাগত জানানো হল তা থেকে এটাই পরিষ্কার আগে থেকেই পুরো পরিকল্পনা করেই কলকাতায় এসেছিলেন গোর্খা নেতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here