দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমরা নিশ্চিত, বাংলায় দুই তৃতীয়াশ আসনে জিতে পরবর্তী সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি৷ বাঁকুড়ার সভা থেকে এমনই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মৃত্যু ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। ক্ষমতায় এলে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রতিশ্রুতি দেন অমিত শাহ।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১.৩০ নাগাদ আকাশপথে বাঁকুড়ায় পৌঁছন অমিত শাহ। প্রথমেই তিনি মালদ্যান করেন বিরসা মুণ্ডার মূর্তিতে। সেখানে তিনি বলেন, ‘বিরসা মুণ্ডাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলা সফর শুরু করলাম। গতকাল রাত থেকে বাংলার যেখানে যেখানে ছিলাম সব জায়গায় মানুষের উৎসাহ দেখেছি। প্রচুর অভ্যর্থনা পেয়েছি। এটা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, মমতা সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের সাংঘাতিক আক্রোশ তৈরি হয়েছে।আর নরেন্দ্র মোদীর প্রতি তৈরি হয়েছে আশা ও শ্রদ্ধা।’

এরপর পুয়াবাগান এলাকাতে গিয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘মমতা সরকারের মৃত্যু ঘণ্টা বেজে গিয়েছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, ‘বিজেপি সরকার এলে কর্মসংস্থান হবে। বেকার যুবক-যুবতীরা চাকরি পাবে। তাই কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারকে ছুড়ে ফেলুন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সোনার বাংলা তৈরি হবে। বাংলায় পরিবর্তন আসছে।’ রাজ্য সরকারের কারণেই প্রান্তিক মানুষরা কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বাংলায় বিজেপির সরকার গঠনের ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত বলে দাবি করে অমিত শাহ বলেন, ‘বিজপি কর্মীদের উপর যে ভাবে হামলা করা হচ্ছে, তাতে আমরা নিশ্চিত যে বাংলায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পরবর্তী সরকার গড়বে বিজেপি। সীমান্ত রাজ্য হওয়ায় দেশের নিরাপত্তা বাংলার নিরাপত্তার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। আমি দেখতে পাচ্ছি, পরিবর্তনের আশা জ্বলজ্বল করছে এখানকার মানুষের চোখে। তা একমাত্র নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই সম্ভব।’

এখানে একটি বিষয় বিশেষ উল্লেখ্য:। এহেন ভবিষ্যদ্বাণী রাজনীতিতে আকছার অনেকেই করেন। অনেকে লক্ষ্যও স্থির করেন অনেক রকম। যেমন উনিশের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান তুলেছিলেন ৪২ এ ৪২ চাই। আবার অমিত শাহ কিন্তু লোকসভা ভোটের অনেক আগে থেকেই বলতে শুরু করেছিলেন, উনিশের নির্বাচনে বাংলায় অন্তত ২১-২২ টি আসনে জিতবে বিজেপি। অমিতের সেই পুর্বানুমান প্রায় মিলে গিয়েছে লোকসভা ভোটে। পশ্চিমবঙ্গে ১৮ টি আসনে জিতেছে বিজেপি।

গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, গতকাল রাতে কলকাতায় পৌঁছে বিজেপির রাজ্য নেতাদের সঙ্গে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত বৈঠক করেছেন অমিত শাহ। সেই আলোচনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে তিনি সমীক্ষা করিয়েছেন। বাংলায় বিজেপির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একুশের ভোটে বিজেপির জেতার সম্ভাবনা ষোলো আনা।


পর্যবেক্ষকদের মতে, হতে পারে রাজ্য নেতাদের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্যই এ সব বলছেন অমিত শাহ। তবে এও ঠিক যে, কোনও রাজ্যে ভোটের অনেক আগে থেকেই দফায় দফায় সমীক্ষা করানো বিজেপির বর্তমান ঘরানার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।


সে যাক। এদিন বাঁকুড়ায় সাংবাদিকদের অমিত শাহ আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়েছেন। উনি ভয় পেয়েছেন বলেই তো কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প বাংলায় বাস্তবায়িত হতে দিচ্ছেন না। কৃষকদের ৬ হাজার টাকা করে কেন্দ্র যে দিচ্ছে তা বাংলার চাষীরা পাচ্ছে না। গরিব পরিবার ৫ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্য বিমা পাচ্ছে না। পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষ শৌচালায়, ঘরবাড়ির জন্য টাকা পাচ্ছে না। অন্তত ৮০ টি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে রাজ্য সরকার।”

গতকাল কলকাতা বিমানবন্দরে নামা ইস্তক অমিত শাহকে নিয়ে বিজেপি শিবিরে উচ্ছ্বাস নজরে পড়ছে। তাতে খুশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও। তিনি এদিন বলেন, বাংলায় এসে দুটো জিনিস স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। একদিকে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর জন আক্রোশ। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আশা ও শ্রদ্ধা। বাংলায় পরিবর্তন আসন্ন। তার দেওয়াল লিখন পরিষ্কার।

এ বার অমিত শাহের ঘোষিত কর্মসূচি হল, বাংলা থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করার লক্ষ্যে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিধানসভা ভোটের রণকৌশল ঠিক করা। তবে সে কথা জানা সত্ত্বেও আদৌ স্বস্তিতে নেই বঙ্গ-বিজেপির নেতারা! তাঁরা বুঝেছেন, বিধানসভা ভোটের মাস পাঁচেক আগে রাজ্যে এসে একাধিক সাংগঠনিক বৈঠকে দলীয় নেতাদের ‘পারফরম্যান্সের’ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন অমিত শাহ। রাজ্য বিজেপির নেতারা এখন সবাই যে যার মতো শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here