দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ

শিলিগুড়ি থেকে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রথমে বাংলাভাষায় আগত কর্মী-সমর্থকদের স্বাগত জানান তিনি। বক্তব্যের শুরু থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধায়ের উদ্দেশে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মোদী। দেখুন একনজরে-

  • আজ অনেকগুলো ক্যামেরা দিল্লি থেকে বাংলায় এসেছে। এখানে ক্যামেরাগুলো থাকলে দেখা যেত, জনসমুদ্র। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৌকা ডুবতে চলেছে। এত লোক দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে।
  • এই মাটি বীরের মাটি। এখনও দেশকে দিশা দেখানোর জন্য আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
  • অন্য রাজ্যের যা যা উন্নয়ন হয়েছে, তা এ রাজ্যে হয়নি। কারণ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ‘স্পিড-ব্রেকার’। দিদির জন্যই এ রাজ্যের উন্নতি হয়নি। কেন্দ্রের সব জনমুখী প্রকল্পকে এ রাজ্যে বাস্তবায়িত হতে দেননি দিদি।
  • দিদির সরকার গরিবদের টাকা লুঠ করেছে। গরিবদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা খরচে চিকিৎসা হবে। কিন্তু সেই চিকিৎসা প্রকল্পে বাধা দিয়েছেন দিদি। রাজ্যের ৭০ লক্ষ কৃষকদের উন্নতির জন্য কেন্দ্রের প্রকল্পে ব্রেক দিচ্ছেন মমতা।
  • বাংলা আমাকে যা ভালোবাসা দিচ্ছে, তার জন্য মাথানত করে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা যা ভালোবাসা দিচ্ছেন, তাতে দিদির রাতের ঘুম চলে যাবে।
  • সমস্ত বাধা দূর করে চৌকিদার কাজ করেছে। আপনাদের শুভেচ্ছাতেই এত কাজ করেছি। আপনাদের শুভেচ্ছাতেই এগিয়ে যাব। আপনাদের চা-ওয়ালা এখানকার চা বাগানের উন্নতিও করব। খালি এই ‘স্পিড-ব্রেকার’ সরে যাওয়ার অপেক্ষা করছি।
  • বালাকোটে আমাদের বায়ুসেনা ঘরে ঢুকে জঙ্গিদের মেরেছে। কিন্তু এই ঘটনার পর পাকিস্তান না কেঁদে কাঁদছে বিরোধী দল। ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোরের মানুষও ততটা কষ্ট পায়নি, যতটা কষ্ট কলকাতায় বসে দিদি পেয়েছে। দেশের সবার এই বায়ুসেনা হামলা ভালো লাগলেও দিদির ভালো লাগেনি। বিরোধী দলগুলো এই ঘটনায় এত জোরে জোরে কেঁদেছে যে পাকিস্তানে হিরো বনে গেছে।
  • কংগ্রেস সেনাকে বিশ্বাস করে না। কংগ্রেস ইস্তাহারে যা বলেছে, তাতে সেনার হাত-পা বাঁধা হয়ে যাবে। গোর্খাদের আশ্বস্ত করছি, বিশ্বাস রাখুন, কারও কোনও ক্ষতি হবে না। এ বারের লড়াই চৌকিদারের সঙ্গে দাগীদের লড়াই।
  • একজন অনুপ্রবেশকারীকেও ছাড়া হবে না। এনআরসি নিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে। এই ভোট আপনাদের সম্মান বাঁচানোর। সেনাবাহিনীর সম্মান বাঁচানোর। দেশকে বাঁচানোর জন্য ভোট দিন। চৌকিদারের হাতেই দেশের উন্নতি হবে।
  • পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর এই প্রথমবার বাংলায় এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে। এবং প্রথম দফার ভোট গ্রহণের আগে সেই প্রসঙ্গ তুলেই এ দিন তৃণমূলনেত্রীকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে বললেন, “বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলার পর দিদি এত কেঁদেছেন যে পাকিস্তানে তিনি হিরো হয়ে গিয়েছেন।”

পুলওয়ামায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ে হামলার পর দিনই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন মমতা। ওই নাশকতার জন্য যখন পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের উপর দোষারোপ করছে মোদী সরকার, তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, কোনওরকম তদন্ত না করেই কেন কাউকে দায়ী করা হচ্ছে? পরবর্তী কালে বালাকোটে হামলার পরেও প্রশ্নমালা সাজিয়ে বসেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, আদৌ কোনও জঙ্গি মরেছে তো? আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তো দেখছি অন্য কথা বলছে। এমনকি ইদানীং আকছার মোদীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, আবার নাকি স্ট্রাইক হবে শুনছি!

মোদী যেন এ সবের জবাব দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বালাকোটের ঘটনার পর তিনি যখন জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে গোটা দেশে হাওয়া তুলতে চাইছেন এবং তা বিজেপি-র অনুকূলে টানতে চাইছেন, তখন মমতার তোলা এসব প্রশ্ন তাঁকে জবাব দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও অনেকের মত। শিলিগুড়ির সভা থেকে মোদী এ দিন তাঁর নিজস্ব কেতায় পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “আচ্ছা বলুন তো পাকিস্তানে ঢুকে যে জঙ্গি মারা হয়েছে, আপনারা খুশি কিনা?” ভিড়ের মধ্যে দু’হাত তুলে সমস্বরে জবাব আসে, “হ্যাঁ খুশি!” ফের প্রশ্ন তোলেন মোদী,-“আমি ঠিক করেছি, না ভুল করেছি?” উত্তর আসে, “ঠিক, ঠিক”। আবারও প্রশ্ন মোদীর-“আপনাদের গর্ব হচ্ছে তো?” ততোধিক উল্লাসের সঙ্গেই উত্তর মেলে, “হ্যাঁ হচ্ছে!”

এর পরেই দিদিকে তীব্র খোঁচা দিয়ে মোদী বলেন, কিন্তু অনেকে খুব দুঃখ পেয়েছেন। খুব কষ্ট হয়েছে তাঁদের। তাঁরা পাকিস্তানের উমেদারি করছেন। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দেওয়ায় রাওলপিন্ডি, ইসলামবাদে, লাহোরের মানুষ ততটা কষ্ট পায়নি যতটা কলকাতার দিদি পেয়েছেন। দিদির বন্ধুদেরও তা পছন্দ হয়নি। আসলে পাকিস্তানের চোট লাগলে যন্ত্রণা হয় মমতার।”

এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেন মোদী। তিনি বলেন, কংগ্রেস সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করে না। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সেনার হাত পা বাঁধা হয়ে যাবে। এবার চৌকিদারের সঙ্গে দাগীদের লড়াই।

পর্যবেক্ষকদের মতে, পুলওয়ামার ঘটনা ও বালাকোটে বায়ুসেনার হামলা,- এই দুই ঘটনাতেই অশনিসংকেত দেখেছিলেন মমতা। তিনি আঁচ করতে পারছিলেন, এ সবের মধ্যে দিয়ে মোদী তথা বিজেপি জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে ভোটে তার সুবিধা নিতে চাইছে। তাই গোটা ঘটনাই সাজানো বা ষড়যন্ত্র বলে মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে মোদী বা বিজেপি চাপে যে একেবারে পড়েনি তাও নয়। তবে তাঁরাও এখন এটাই দেখাতে চাইছেন, সংখ্যালঘু তোষণের জন্য মমতা এতোটাই মরিয়া যে জঙ্গি দমনের জন্য পাকিস্তানের উপর হামলা করলেও তিনি প্রতিবাদ করেন। এমন কথা বলেন, যা দেশের সেনবাহিনীর মনোবলকে দুর্বল করে দিতে পারে।

তবে শেষ পর্যন্ত ভোটে দেখার যুযুধান এই দুই নেতা নেত্রীর মধ্যে কার বক্তব্য মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here