সম্পাদকীয়–
গত মঙ্গলবার গণতন্ত্রের এক আজব চিত্র দেখা গেল বনগাঁ পুরসভায়।এদিন পুরসভার চেয়ারম্যামের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত হয়।কিন্তু পুরসভায় বিরোধীদের ভোট দিতে ঢুকতেই দেওয়া হয় নি বলে অভিযোগ।অভিযোগ পুরসভার গেট বন্ধ রেখে বিরোধী কাউন্সিলারদের পুরসভার ভেতরে ঢোকা রোধ করা হয়।এছাড়াও পুরসভার বাইরে ও ভেতরে প্রচুর গুন্ডা ও লেঠেল মজুত রাখারও অভিযোগ আছে।শাসক দলের মিছিল ও পাল্টা মিছিলে সরগরম হয়ে ওঠে পুরসভা এলাকা।শাসক তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপি বেশ কিছু কাউন্সিলারকে টাকা ও নানা প্রলোভনে দলে টেনে পুরসভা দখল করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।সমস্ত ঘটনাকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করে আমাদের প্রশ্ন,এ কেমন গণতন্ত্র,যেখানে গায়ের জোরে ভোট দেওয়া আটকানো যায়,বন্ধ করে দেওয়া যায় অনাস্থা ভোটের যাবতীয় প্রক্রিয়া?মঙ্গলবারে পর শাসক তৃণমূল দাবি করেছে বনগাঁ পুরসভা তাদের দখলে,আবার বিজেপি দাবি করেছে ১১জন কাউন্সিলার তাদের পক্ষে থাকায় পুরসভা তাদের দখলে।আসলে যে কাদের দখলে কেউ জানে না।এক আজব সময়ের মুখোমুখি আমরা,কী যে হচ্ছে,কী না হচ্ছে কিছুই বোঝা য়াচ্ছে না।শেষ পর্যন্ত জানা যাচ্ছে কোর্টের নির্দেশেই নাকি স্থির হবে পুরসভা কাদের দখলে।আমাদের একান্ত অনুরোধ সব রাজনৈতিক দলের প্রতি যেভাবে আপনারা পুরসভার কার্যভার সামলাচ্ছেন তাতে বেশ বোঝা যাচ্ছে এলাকার মানুষের চাহিদা পুরণ বা তাদের পরিষেবা দেবার চেয়ে আপনারা অনেক বেশী রাজনৈতিক ক্ষমতা উপভোগ করতে আগ্রহী,আর সেই জন্যই প্রান্তিক এই একটা পুরসভাকে নিয়ে আপনাদের এই আঁকছাআকছি।গায়ের জোরে পুরসভা দখল রাখা যায় বুঝি?যারা পুরসভার গেট বন্ধ করে দিয়ে ভোট দিতে না দিয়ে পুরসভা দখলে রাখার ঘোষণা করছেন তারা ভাবুন তো,যদি কোন দিন মুখ্যমন্ত্রীকে নবান্নে ঢুকতে না দিয়ে কেউ নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে ঘোষণা করেন এবার নবান্ন তাদের দখলে তখন কী হবে?ওভাবে গণতান্ত্রীক ব্যবস্থায় ক্ষমতা দখল বা ধরে রাখা যায় না,নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই যদি সে কথা ভুলে যান তবে তা তো খুব বিপদের কথা।বনগাঁয় যে সব তৃণমূল কাউন্সিলাররা দল বদলে বিজেপিতে চলে গেছেন তারা অন্যায় করেছেন সন্দেহ নেই।পাল্টিবাজির রাজনীতির নিন্দা আমরা আগেই করেছি,কিন্তু তা বলে গণতান্ত্রীক পদ্ধতিকে আটকে অনাস্থা প্রস্বাবের উপর ভোট করতে না দিয়ে পুরসভা দখলে রাখার চেষ্টাও তো সমান নিন্দার ও ধিক্কারযোগ্য।আমাদের দাবি বনগাঁ পুরসভায় স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা হোক,যে অচলাবস্থা চলছে পুরসভাকে কেন্দ্র করে তাতে অসুবিধা হচ্ছে সাধারণ মানুষের,বন্ধ এলাকার পরিষেবা,অবিলম্বে এই অচলাবস্থা কাটাতে হবে।গণতান্ত্রীক প্রক্রিয়ায় মান্যতা দিয়ে পুরসভা চালাতে হবে,বন্ধ করতে হবে গুন্ডা মস্তানদের মবিলাইজ করার প্রবনতা।আর এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের আবেদন দলীয় আনুগত্য ত্যাগ করে ভাল মানুষকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুন,কতগুলো চোর-গুন্ডা লম্পট মাফিয়াকে দোহাই জনপ্রতিনিধি করে পাঠাবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here