নীলাদ্রি ভৌমিক:গাইঘাটা: রাজ্য জুড়ে এখন পুরদমে উৎসবের মরসুম। কালীপুজোর পর, ছট, কার্তিক এবং জগদ্ধাত্রী পুজো আসছে৷ এরই মধ্যে সংযোজিত হয়েছে আরেকটি উৎসব। উত্তর ২৪পরগনার গাইঘাটা থানার মতুয়া সম্প্রদায়ের সর্বময় কর্ত্রী বীণাপাণি ঠাকুর ওরেফ বড়মা চলতি বছরের অক্টোবর মাসে শতবর্ষে পদার্পণ করেছেন।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্ককে নিজেদের দিকে টানতে, বড়মা-র জন্মশতবর্ষকে পাথেয় করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এক নতুন কর্মসূচি নিয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বর ঠাকুরনগরে বড়মা বীণাপাণি দেবীকে শ্রদ্ধা জানাতে ,আয়োজন করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে এক জনসভার। যেখানে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বড়মার স্নেহধন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন। সেইজন্য, এই সভাকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে কেবলমাত্র ঠাকুরনগর নয়, গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রচার শুরু করে দিয়েছেপার্শ্ববর্তী নদিয়া জেলাতেও সভাকে সফল করার প্রস্ততি চলছে। জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও প্রায়শই সভার কর্মসূচি সফল করতে ঠাকুরনগরে ছুটে আসছেন।*আগামী ১৫ নভেম্বর মতুয়া সংঘের প্রধান উপদেষ্টা বীনাপানি দেবীর শতবর্ষের জন্মদিনে ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি তে আসছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এলাকায় আই জির ( দক্ষিণবঙ্গ) নেতৃত্বে রাজ্য পুলিশের এক প্রতিনিধি দলও ঠাকুর বাড়ি ঘুরে গেলেন ।গত রবিবার দলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ও বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে নিয়ে বড়মা-কে বিজয়ার প্রণাম করার পাশাপাশি হুইল চেয়ার সহ উপহার সামগ্রী তুলে দিলেন।জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, আগামী ১৫ নভেম্বর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা শতবর্ষে পদার্পণ করা বড়মাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। এই সভা ঐতিহাসিক সভায় পরিণত হবে। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গোপাল শেঠ ও বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যর অভিমত, একদিকে আমাদের পরম শ্রদ্ধেয়া বড়মা-র শতবর্ষ উদ্ যাপন , অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রীর ঠাকুরনগর আসাকে ঘিরে উদ্দীপনায় ফুটছেন দলের সদস্যরা। আমাদের বিশ্বাস এই সভা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দেবে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের আশা, এই সভায় বড়মার উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতাদিদি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেবন। এমন কি মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য বোর্ড গঠন প্রসঙ্গেও আলোকপাত করতে পারেন। এককথায় মতুয়াদের বেশ কয়েকটি দাবি পূরণ করবেন রাজ্যের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী । যা আগামী লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকটাই ভোটের লড়াই-এ এগিয়ে রাখবে। তাই, জনসভাকে সফল করতে উৎসবের মেজাজে প্রচারে নেমেছে গোটা জেলা জুড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব।

স্থানীয় সুত্রের খবর,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন মতুয়া ভক্ত ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে রাজনীতির যোগকে ভাল চোখে দেখছেন না। তাঁদের অভিযোগ, ঠাকুরবাড়ির কোনও সদস্যর ভোটের রাজনীতি তে যাওয়া উচিত নয়। বরং, নিজেদের সংগঠনের মধ্যে থেকে দাবি আদায়ে আন্দোলন করা উচিত। অন্যদিকে, মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশ পরিবার তন্ত্রের বিরুদ্ধে আগামী লোকসভা ভোটে সর্বজন গ্রাহ্য স্থানীয় একজনকে বিজেপির প্রার্থী করার দাবিতে সম্প্রতি দিল্লিতে দরবারও করে এসেছে বলে, রাজনৈতিক সূত্রে খবর। আবার, মতুয়া ভোটের লক্ষ্যে চলতি মাসেই বি জে পি ঠাকুরনগরে একটি বড় আকারের সভা করতে পারে, যেখানে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-ও উপস্থিত থাকতে পারেন বলে বিজেপি সুত্রের খবর।

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস জানান, জেলা পরিবহন সদস্য তথা বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠের নেতৃত্বে,মতুয়া ভক্তদের জন্য ৩০০ বাস এবং২০০০ অটোর ব্যাবস্থা করা হয়েছে,সেই সাথে যে সমস্ত ভক্ত ও সাধারন মানুষ আগের দিন এসে পৌঁছবেন তাদের থাকা এবং খাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে ঠাকুর বাড়ি এলাকায়।প্রতিটি বুথ থেকে কর্মি সমর্থকরা এখন থেকেই প্রতি মুহুর্তে যোগা যোগ করছেন ঠাকুর বাড়ির সাথে।

মতুয়া সম্প্রদায়কে নিয়ে এই রাজনৈতিক টানাপড়েন এর মাঝে তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে আগামী ১৫ নভেম্বর বড়মা-র জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা কতটা ছাপ ফেলতে পারে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় উত্তর ২৪ পরগনার রাজনৈতিক মহল ও আমজনতা ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here