নীলাদ্রি ভৌমিক, ঠাকুরনগর. .. বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়ির প্রাণপ্রতিমা বড়মা ওরফে বীণাপাণি ঠাকুরের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এক বিরাট জনসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দোপাধ্যায় আক্ষরিক অর্থে মতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের কাছে কল্পতরু হিসাবে অবতীর্ণ হলেন। তিনি বিভেদ নয়, শান্তি চাই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে চাঁদপাড়ায় ৮.৮ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা ঘোষণা করেন। এছাড়াও মতুয়া ঠাকুরবাড়ির জন্য দুটি গেট করার প্রতিশ্রুতি দেন। এদিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এন আর সি নীতি প্রয়োগের তীব্র বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এন আর সি নিয়ে অসমে বাঙালি খেদাও, বিহারীদের নিয়ে গুজরাতে বিহারী খেদাও এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আসামের বিরুদ্ধে নই। বাংলায় কথা বলাটা কী অন্যায়? ১৯৭১ সালের পর যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের ভোটার কার্ড,রেশন কার্ড ও কাস্ট সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও হয়রানি করা হচ্ছে। এই পরিচয় কখনও কেড়ে নেওয়া যায়না। এন আর সি নিয়ে নিম্ন মানের রাজনীতি হচ্ছে। আমরা তা সমর্থন করিনা। আমরা মতুয়া আন্দোলনকে সমর্থন করি। এদিন ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন সভায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বিপুল লোক সমাগম করে মুখ্যমন্ত্রীর বাহবা কুড়িয়ে নিলেন জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ আয়োজকরা। অন্যদিকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, বড়মার ৯৮ বছর বয়স। অথচ উনি ঠিক করে দিলেন শতবর্ষ, এটা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ভাল চোখে নেয়নিI আগামী দিনে এর ফল ভুগতে হবে। যদিও, রাজনৈতিক মহলে খবর, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ, বিশ্ববিদ্যালয় ও নানা উন্নয়নের বার্তা দিয়ে তাদের মন জয় করে নিয়েছেন।
ঠাকুরনগরে উড়ান থেকে নেমেই মুখ্যমন্ত্রী দলীয় সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে সোজা চলে যান ঠাকুরবাড়িতে বড়মার কাছে। তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় ও প্রণাম সেরে অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। বড়মা মঞ্চে আসেন হুইল চেয়ারে বসে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বড়মা বীণাপাণি দেবীকে বঙ্গভিভূষণে সম্মানিত করেন। এদিন বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র সব্যসাচী দত্ত ভি আই পি জোন দিয়ে সভায় যাওয়ার সময় নিরাপত্তারক্ষীরা তালিকায় সব্যসাচী দত্তর নাম না থাকায়,তাঁকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেন। এ ঘটনায় দলের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বসিরহাট ২ নম্বর ব্লক থেকে ব্লক তৃণমূল সভাপতি সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়,. প্রাক্তন বিধায়ক এটিএম আব্দুল্লা রনির নেতৃত্বে বিরাট সংখ্যক কর্মী-সমর্থকরা সভায় হাজির হয়। ” বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক তথা উওর ২৪ পরগনা জেলা পরিবহন সদস্য গোপাল শেঠ এবং বনগাঁ পুর সভার পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যর নেতৃত্বে ২০হাজার মানুষ বাগদা ও বনগাঁ থেকে রেল পথে এদিনের মিছিলে যোগদান করেন৷ এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ৷ বনগাঁ স্টেশন সংলগ্ন একটি মাঠে প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে খিচুরি খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করেছিলেন এই দুই ডাকাবুকো নেতা৷

মতুয়া সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের সম্মানে তৈরি হবে হরিচাঁদ–গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার মতুয়া সঙ্ঘের বড়মা বীণাপাণি দেবীর শততম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ঠাকুরনগরের বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে একথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‌ঠাকুরনগরে আগেই কলেজ তৈরি হয়েছে। এবার এলাকার ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় হবে।’‌ এজন্য বুধবারই তিনি চাঁদপাড়ায় গিয়ে কৃষি দপ্তরের ৮.‌৮ একরের একটি জমি দেখেছেন। ওই জমিটিই শিক্ষা দপ্তরকে দেওয়া হয়েছে হরিচাঁদ–গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে। জেলাশাসককে এদিনই ওই জমিতে শিক্ষা দপ্তরের বোর্ড লাগিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বললেন, ‘‌মতুয়া ঠাকুরবাড়ির দুটি গেট তৈরি করে দেবে রাজ্য পর্যটন দপ্তর। এলাকায় আলো লাগিয়ে, পুকুর বাঁধিয়ে ঠাকুরনগরের সৌন্দর্যায়নও করে দেওয়া হবে।’‌ আগামী ২০ দিনের মধ্যে সৌন্দর্যায়নের কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য সরকার আগেই মতুয়া সঙ্ঘ বিকাশ পর্ষদ এবং নমঃশূদ্র বিকাশ পর্ষদ তৈরি করেছে। পীড়িত এবং উদ্বাস্তুদের জন্য মতুয়াদের আন্দোলন সম্পর্কে সবাইকে জানাতে ঠাকুরনগরকে আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায় রাজ্য সরকার। সেজন্য ঠাকুরবাড়ি বিকাশ পর্ষদ তৈরি হবে বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‌মতুয়াদের আন্দোলন উদ্বাস্তুদের পক্ষে। সেটাকে সমর্থন করে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই ১০,৫৭০০০ জাতি শংসাপত্র দেওয়া হয়ে গিয়েছে।
বাংলায় জাতি শংসাপত্র এক মাসের মধ্যেই পাওয়া যায়। অথচ, মহারাষ্ট্রে মতুয়াদের অনেক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’‌
এদিন মমতা ফের অসমের এনআরসি এবং সেখানে প্রবাসী বাঙালিদের উপর আক্রমণের নিন্দায় সরব হয়েছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‌অসমে এনআরসি–র নামে ঘৃণ্য রাজনীতি হচ্ছে। অসমে বাঙালি খেদাও চলছে। কিন্তু বাংলায় তা কখনও হবে না।
মতুয়াদের বড়মার শততম জন্মদিন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সেজে উঠেছিল ঠাকুরনগর। বিশেষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রচুর ভক্ত সমাগমের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিশেষ ট্রেনের। এদিন সকালে ঠাকুরনগরে গিয়ে প্রথমে দলীয় সাংসদ তথা বড়মার জেষ্ঠ্য পুত্রবধূ মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে বড়মার ঘরে গিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর রওনা দেন অনুষ্ঠান মঞ্চের দিকে। এদিন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বড়মা বীণাপাণি দেবীকে বঙ্গভিভূষণে সম্মানিত করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here