দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ব্যাপারটা ছিল খুবই সাদামাটা একটি হাসপাতাল উদ্বোধনের ভার্চুয়াল কর্মসূচি। তা নিয়েই মোদী-মমতা এক প্রকার যেন শঠে শাঠ্যং হয়ে গেল শুক্রবার। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধনে এদিন যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন, তেমনই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এই ক্যাম্পাসের উদ্বোধন আগেই রাজ্য সরকার করে দিয়েছিল।”

কী ভাবে? মমতা বলেন, কোভিডের সময়ে যখন প্রচুর হাসপাতালের দরকার হচ্ছিল, বেড বাড়ানোর প্রয়োজন হয়েছিল তখন এই ক্যাম্পাসকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
নিয়েই অমিত মালব্য থেকে সুকান্ত মজুমদাররা একযোগে মমতাকে নিশানা করেছেন। বিজেপির বক্তব্য, একটা বিরাট ক্যাম্পাসের একটা অংশে কয়েকটা কোভিড বেড পাতা আর ক্যানসার হাসপাতালের পার্থক্যই বোঝেন না মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি নেতারা এদিনের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার ক্লিপ টুইট করে লিখেছেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যেমন কোমর্বিডিটি আর মৃত্যু হারের পার্থক্য বোঝেন না তেমন একটি অংশে কোভিড বেড পাতা আর একটা গোটা ক্যানসার হাসপাতালের পার্থক্যও বোঝেন না। বাংলার মানুষকে কী ভোগান্তিই না পোহাতে হচ্ছে!

প্রসঙ্গত, এদিন শুরুতেই মমতা জানিয়ে দেন, এই হাসপাতাল তো তিনি আগেই উদ্বোধন করে দিয়েছেন। কেন দিয়েছেন তাও তিনি বলেন। মমতা যখন এ কথা বলছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর মুখ ছিল দেখার মতই। কিন্তু তিনি এর সরাসরি জবাব দেননি। তবে অনুষ্ঠান শেষ হতেই তাঁর সচিবালয় ও বিজেপি নেতারা জবাব দিতে ছাড়েনি। তাঁদের কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোভিড সেন্টার আর ক্যান্সার হাসপাতালের ফারাক বোঝেন না। মুখ্যমন্ত্রী যেটা উদ্বোধন করেছিলেন, সেটা ছিল স্রেফ একটি বিল্ডিং। যেখানে কোভিড সেন্টার হয়েছিল। আর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন ক্যান্সার হাসপাতাল।

পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বাড়ছে। যে কারণে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যকে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য প্রায়োরিটি জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারমধ্যে রয়েছে বাংলাও। সরকারি এই হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস গড়ে ওঠার ফলে বাংলার ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসায় অনেকটা সুরাহা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের এই ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক পরিকাঠামোয়। থাকবে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের সুবিধাও। সঙ্গে রোগীর আত্মীয়দের থাকার জন্য অতিথিনিবাস, চিকিৎসকদের আবাসন। ১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই হাসপাতালে থাকছে ৭৫০টি শয্যা। নিজের বক্তৃতায় মমতা এদিন এও বলেন, এই ক্যাম্পাস তৈরির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকার দিয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী এদিন হিসাব দেন বাংলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করতে তাঁর মেয়াদে কী কী হয়েছে। পরক্ষণেই প্রধানমন্ত্রী আবার হিসাব দেন বাংলার জন্য তাঁর সরকার কী কী দিয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, বাংলায় যে কী হয়েছে তা কোভিডের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে মানুষ দেখছে। এঁরা দুজনেই শুধু ক্রেডিট নেওয়ার চক্করে রয়েছেন। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়!

বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে তো বহু নির্মীয়মাণ স্কুল-কলেজেও অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিল, তার মানে সেগুলোর উদ্বোধন হয়ে গেল? একজন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানে কী বলছেন বা কী বলবেন তার কোনও হোম ওয়ার্ক থাকবে না? এ কি তৃণমূলের পার্টি অফিস নাকি? প্রধানমন্ত্রী যে অনুষ্ঠানে রয়েছেন তার মানে সেটা গোটা দেশ দেখছে? এ কি ছেলেখেলা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here