দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনার টিকার প্রদর্শনী শুরু হল বেজিংয়ের বাণিজ্য মেলায়। কেমন টিকা তৈরি করেছেন দেশের বিজ্ঞানীরা, তা এবার খোলাখুলি সামনে আনল চিন। জানা গিয়েছে, চিনের প্রথম সারির দুই ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা সিনোভ্যাক ও সিনোফার্মের টিকার ভায়ালের প্রদর্শনী চলছে বাণিজ্য মেলায়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে বেজিংয়ে শুরু হয়েছে বাণিজ্যমেলা। এখানেই দেদাড় টিকার ভায়ালের প্রদর্শনী করছে ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা। ছোট ভায়ালে ভরা টিকার ডোজ দেখানো হচ্ছে আমজনতাকে। সিনোভ্যাকের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই প্রদর্শনীতে টিকার বাজারদর কতটা বাড়বে জানা নেই, তবে সাধারণ মানুষের মনে আশ্বাস জন্মাবে। আশা করা যাচ্ছে, এই বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতেই টিকা নিয়ে আসবে সিনোভ্যাক। বছরে ৩০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরির পরিকাঠামো রয়েছে তাদের।
রাশিয়ার পরে চিনই করোনার টিকা আনতে চলেছে এমন খবর দিনকয়েক আগেই শোনা গিয়েছিল। চিনের সরকারি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছিল, ক্যানসিনো বায়োফার্মাসিউটিক্যালকে টিকার স্বত্ত্ব দিয়েছে চিন সরকার। চিনের ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (সিএনবিজি) জানিয়েছে, সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের তৈরি টিকার তিন স্তরের ট্রায়ালের রিপোর্ট বেশ ভাল। তাই জরুরি ভিত্তিতে সিনোভ্যাকের টিকার প্রয়োগ করা যেতে পারে। হাই-রিক্স গ্রুপের সদস্যদেরই এই টিকা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে চিনের সরকার। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া যাবে। সিএনবিজি জানিয়েছে, কতটা ডোজে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে তার গাইডলাইন তৈরি হচ্ছে।
সিনোভ্যাকের কোভিড ভ্যাকসিনের নাম করোনাভ্যাক। এই ভ্যাকসিনের প্রথম দুই পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট ইতিবাচক বলেই দাবি করেছিল চিনের এই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। চিনে টিকার দৌড়ে এগিয়ে সিনোফার্ম ও ক্যানসিনো বায়োফার্মাও। সৌদি আরবে ক্যানসিনো বায়াফার্মের তৈরি ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। চিনেও সেনা ক্যাম্পে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে।
অন্যদিকে, টিকার দৌড়ে এগিয়ে সিনোফার্মও। এই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিও তৃতীয় স্তরের টিকার ট্রায়ালে করছে। প্রথম দুই পর্বে টিকার ট্রায়ালের রেজাল্ট ইতিমধ্যেই সামনে এনেছে সিনোফার্ম। গবেষকরা দাবি করেছেন, প্রথম পর্যায়ে ৯৬ জনকে অল্প ডোজে টিকা ইনজেক্ট করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২৪ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। ওই পর্যায়ের ডোজের পরিমাণ সামান্য বাড়ানো হয়। এতদিন পর্যবেক্ষণে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
তাঁদের প্রত্যেকের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে, টিকার ডোজে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সিনোফার্মের ভাইরোলজিস্টদের দাবি, এই টিকা শরীরে ঢুকে রক্তের বি-লিম্ফোসাইট কোষ তথা বি-কোষকে সক্রিয় করে তুলেছে। ফলে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে রক্তরসে। পাশাপাশি, টি-কোষও সক্রিয় হয়েছে। তাই আশা করা যাচ্ছে এই টিকার ডোজে কোভিড প্রতিরোধী সুরক্ষা কবচ তৈরি হচ্ছে শরীরে।