দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্কের মধ্যেই দুর্গাপুজো। হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি। সারা বাংলার পুজো মণ্ডপগুলির প্রস্তুতিও তুঙ্গে। কোভিড বিধি মাথায় রেখেই মণ্ডপে ঘুরবেন দর্শনার্থীরা। সে অনুমতি মিলেছে, তবে করোনার কথা মাথায় রেখে কড়া বিধিনিষেধও জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট । জনসাধারণের প্রতিমা দর্শন যাতে নিরাপদে ও সুরক্ষা বিধি মেনে হয় তার জন্য একগুচ্ছ নিয়ম বেঁধে দিয়েছে নবান্ন । পুজো কমিটিগুলি তো বটেই সাধারণ মানুষকেও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে সেইসব নিয়ম।

গত বছরের মতো এ বছর দুর্গাপুজোর কার্নিভাল বাতিল করল রাজ্য সরকার। করোনা পরিস্থিতির জন্যই কার্নিভাল বাতিল করা হচ্ছে বলে নির্দেশিকা জারি করে জানাল নবান্ন। কার্নিভাল ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য একাধিক বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

প্রতি বছর কলকাতার রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল হয়। চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা দেখার জন্য ভিড়ও হয় ভাল। করোনা অতিমারি কারণে গত বছর ওই অনুষ্ঠান বাতিল করে রাজ্য। এ বছরও তা বাতিল করা হল। কারণ হিসাবে রাজ্যের তরফে জানা গিয়েছে, এখনও অবধি করোনা সংক্রমণ দূর হয়নি। পাশাপাশি, কলকাতা হাই কোর্ট থেকেও বলা হয়েছে অতিমারি পরিস্থিতি ভিড় যাতে না হয় তা রাজ্যকে নিশ্চিত করতে হবে। তাই ওই সমস্ত দিক বিবেচনা করে কার্নিভাল বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শুধু কার্নিভাল বাতিল নয়। মঙ্গলবার পুজো নিয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নির্দেশিকায় আরও ১১টি বিষয় উল্লেখ করেছেন। পুজো কমিটিগুলিকে বলা হয়েছে – মণ্ডপ খোলামেলা রাখতে হবে। প্রবেশ এবং বেরোনোর পথ আলাদা থাকবে। মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। পুজো কমিটিগুলিকেও মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে হবে। মণ্ডপে ঠিক মতো সামাজিক দূরত্ব ও করোনা বিধি মানা হচ্ছে কি না তা নজর রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করতে হবে পুজো কমিটিকে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুজোর উদ্বোধন এবং বিসর্জনের অনুষ্ঠানে জাঁকজমক করা যাবে না।

পুজো কমিটি ও দর্শনার্থীদের জন্য কী কী নিয়ম জারি করেছে রাজ্য সরকার জেনে নিন

১) মণ্ডপসজ্জা হবে নিয়ম মেনে

নবান্নের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, পুজো মণ্ডপের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে।
চারদিক থেকে খোলা হলে বেশি ভাল। কোনওভাবেই ভিড় বা ঘেঁষাঘেঁষি করা চলবে না।
মণ্ডপের ভেতরে যেন পারস্পরিক দূরত্ব মেনে থাকা যায়।
প্রতি মণ্ডপের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার পথ আলাদা রাখতে হবে। অনেক পুজো মণ্ডপ এই নিয়ম মানলেও সব জায়গায় তা হয় না। মণ্ডপে ঢোকা ও বেরনোর একটাই পথ থাকার কারণে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এবার সেদিকটা খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে পুজো কমিটিগুলিকে।

২) মাস্ক-স্যানিটাইজার মাস্ট
মণ্ডপের ভেতরে যে স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন তাঁদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখতে হবে। মাস্ক ছাড়া মণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
দর্শনার্থীদের জন্যও পর্যাপ্ত ফেস-মাস্কের ব্যবস্থা রাখতে হবে পুজো কমিটিগুলিকে।
মণ্ডপের কাছে মাস্ক ছাড়া যে দর্শনার্থীরা আসবেন তাঁদের মাস্ক বিলির দায়িত্ব নিতে হবে সেই পুজো কমিটির কর্তৃপক্ষকেই।

৩) পুজোর বিধিতেও কোভিড-সতর্কতা

হাইকোর্ট এবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বড় পুজোর ক্ষেত্রে মণ্ডপের ভিতরে থাকতে পারবেন সর্বাধিক ৬০ জন। ছোট পুজোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ জন।
ছোট পুজোর প্যান্ডেলের বাইরে পাঁচ মিটার ও বড় পুজোর প্যান্ডেলের বাইরে দশ মিটার দূরে ব্যারিকেড রাখতে হবে।
দর্শনার্থীরা মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন না। হাঁটতে হাঁটতেই তাঁদের প্রতিমা দর্শন করতে হবে। এই নিয়ম যাতে মেনে চলা হয় তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে স্বেচ্ছাসেবকদের।
মণ্ডপ চত্বরে আসা দর্শনার্থীরা যাতে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেনে দর্শন করেন সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
পুজোর বিধিও কোভিডের নিয়ম মেনেই করতে হবে। সিঁদুর খেলা, অঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ বিতরণ, ঢাক বাজানো সব কোভিড গাইডলাইন মেনে হবে।
ঢাকিরা মণ্ডপের বাইরে দাঁড়িয়ে ঢাক বাজাতে পারবেন, ‘নো-এন্ট্রি’ জ়োনে ঢুকতে পারবেন না।
পুজো করবেন যে পুরোহিত তিনি মন্ত্র বলবেন মাইকে যাতে অনেক দূর অবধি শোনা যায়। এই মন্ত্র শুনেই অঞ্জলি দিতে হবে, মণ্ডপের ভেতরে ঢোকা যাবে না।

দর্শনার্থীদের অঞ্জলির ফুল আনতে হবে বাড়ি থেকেই। ফুল বিতরণের সময় যাতে ঘেঁষাঘেঁষি, হুড়োহুড়ি না পড়ে যায় তার জন্যই এই ব্যবস্থা।


৪) আলাদা করে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। মণ্ডপের আশপাশে স্টেজ বেঁধে কোনও জমায়েত হবে না।

৫) বিচারক মণ্ডলীর জন্য বিধি

কোন পুজোর প্রতিমা সেরা, কোন পুজোর মণ্ডপসজ্জা বা আলোকসজ্জা, তা ঠিক করতে বিচারকদের প্যানেল বসে। বিচারক মণ্ডলীর সদস্যেরা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে তা নির্ণয় করেন। এবার তা হবে বিধি মেনে। নবান্ন বলেছে, গোটা ব্যাপারটাই ভার্চুয়ালি হলে ভাল না হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে যেমন সকাল ১০ থেকে বিকেল ৩টের মধ্যেই মণ্ডপে ঢোকা যাবে।


৬) জনসাধারণকে সতর্ক করবে পুলিশ ও মিডিয়া

পুজো মণ্ডপের বাইরে যাতে ভিড় উপচে না পড়ে তার জন্য সর্বক্ষণ মাইকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। রাস্তায় নেমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করবেন পুলিশকর্মীরা। ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়াকেও দায়িত্ব নিতে হবে জনগনকে সতর্ক ও সচেতন করার।


৭) পুজো উদ্বোধনের সময় যাতে ভিড় কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে পুজো কমিটিগুলিকে। কম লোকজনকে নিয়ে তুলনামূলকভাবে কম আড়ম্বরে উদ্বোধনের অনুষ্ঠান করতে হবে। সেক্ষেত্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার, পারস্পরিক দূরত্ব মানতে হবে। প্রতিমা বিসর্জনের সময়ও একই ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। যে ঘাটে বিসর্জন হবে আগে থেকে তা স্যানিটাইজ করে রাখতে হবে। বিশাল মিছিল করা চলবে না।


৮) করোনার কারণেই এ বছর পুজো কার্নিভাল হবে না।


৯) পরিষেবায় ছাড়—সরকারপক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা পুজো কমিটি ও উদ্যোক্তাদের বিশেষ কিছু পরিষেবায় ছাড় দেবেন। যেমন জরুরিকালীন অবস্থার জন্য দমকল পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।

বিদ্যুত পরিষেবাতেও ছাড় আছে।
প্রতিটি ক্লাবকে রাজ্য সরকারের তরফে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
পুলিশ ও প্রশাসন সর্বক্ষণ সহযোগিতার জন্য তৈরি থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here