দেশের সময় ঃ নিষিদ্ধ পল্লীর অন্ধকার গলি থেকে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকায় এমনই এক বাঙালি মেয়ের মর্মস্পর্শী জীবনকথা তুলে ধরেছেন একসময়ে কলকাতায় কর্মরত সাংবাদিক যুধিজিৎ ভট্টাচার্য। মেয়েটি যেহেতু বাঙালি, তাই খবরটি গুরুত্ব সহকারে বাংলা ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে জিওগ্রাফিক পত্রিকার ডিজিটাল সংস্করণে। 

https://www.nationalgeographic.com/magazine/2020/10/stolen-lives-harrowing-story-of-two-girls-sold-into-sexual-slavery-feature/

কাহিনিতে যুধিজিৎ তুলে ধরেছেন, পরিবারকে বাঁচাতে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বা ভালবেসে কারওর হাত ধরে বেরিয়ে আসা গ্রাম বা মফস্‌সলের মেয়েরা কীভাবে পাচার হয়ে চলেছেন নিষিদ্ধপল্লীর অন্ধকার জগতে এবং একই সঙ্গে পুলিশ ও অন্যান্য সমাজসেবী সংগঠনের সাহায্যে কীভাবে তাঁরা ফিরছেন স্বাভাবিক জীবনে। বাংলাদেশের খুলনার সায়েদাই হোক বা শিলিগুড়ির অঞ্জলিই হোক (নাম পরিবর্তিত) প্রেক্ষাপট দু’‌জনেরই এক— অভাব আর সুন্দর জীবনের স্বপ্ন।

স্কুলছুট সায়েদা ভালবাসত নাচ। ১৩ বছর বয়সেই বিয়ে সেরে ফেলেছিল সে। কিন্তু সংসার আর করা হয়নি তার। স্বামীর অত্যাচারে ফের ঘরে ফিরে আসা। অভাব ঘোচাতে নাচ শেখার জন্য যে প্রতিষ্ঠানে সে ভর্তি হয়েছিল, সেখান থেকেই দালালের টোপে পড়ে নাচ দেখিয়ে রোজগারের আশায় তার সঙ্গে চোরাপথে ভারতে আসা এবং বিক্রি হয়ে যাওয়া।

অন্যদিকে, কারখানায় কাজ করা অঞ্জলিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা এবং বিক্রি করে দেওয়া। দু’‌জনকেই মহিষাদলের একটি হোটেলে গণিকাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল। সমাজের চোখে ‘‌মন্দ’‌ হয়ে যাওয়া এই মেয়েদের উপাখ্যানে যুধিজিৎ খুঁজে বের করেছেন, উপার্জনের জন্য মরিয়া এই পরিবারগুলির আর্থ–‌সামাজিক অবস্থার সুযোগ কীভাবে নেয় এই চক্রের কুশীলবরা। 

কীভাবে অভাবী, লেখাপড়া না জানা নাবালিকাদের সামনে ‘‌সুন্দর’‌ জীবনের টোপ খাড়া করে দালালরা তাদের পাচারের সুযোগ নেয়। কীভাবে হারিয়ে যায় ওরা আলো থেকে আঁধারে। 

দালালদের এই ভূমিকা প্রসঙ্গে সাংবাদিক তুলে ধরেছেন তাদের পাচার–‌পদ্ধতির কথা। পাচারের জন্য এরা খুঁজে বের করে অভাব মেটাতে কাজের সন্ধানরত অথবা ঘর বাঁধতে চাওয়া গরিব ঘরের মেয়েদের। এমনও দেখা গেছে, ‘‌শিকার’‌ ধরতে ফোন রিচার্জ শপ থেকেও মোবাইল নম্বর জোগাড় করে দালালরা আলাপ পাতায় এবং কথার ছলে ভুলিয়ে শেষ পর্যন্ত পাচার করে দেয় নিষিদ্ধপল্লীতে। 

পরে পুলিশের চেষ্টায় কেউ উদ্ধার হয়, আবার কারওর সন্ধানই মেলে না। উদ্ধার হওয়া অনেকেই ফের মিশে যান জীবনের মূল স্রোতে। সায়েদা এবং অঞ্জলিকেও মহিষাদল থেকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। অনেকের মতো এই দু’‌জনও ছিল কলকাতার ‌কাছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রয়ে। 

দু’‌জনেই চেয়েছিল ঘরে ফিরে নতুন জীবন শুরু করতে। সায়েদার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে শরীরের পসরা সাজিয়ে বসা সায়েদা শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভুলতে পানাসক্ত হয়ে পড়েছিল। অসুস্থ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লিভার নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও শেষরক্ষা হয়নি। বাংলাদেশে পৌঁছেছিল সায়েদার মৃত শরীর। কিন্তু অঞ্জলি ফিরে নতুন স্বপ্ন নিয়ে গেছে শিলিগুড়ি, তার পরিবারে।        

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here