দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃকেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কি এবার বাজেট পেশ করতে পারবেন? তিনি এখন চিকিৎসার জন্য আছেন আমেরিকায়। বাজেটের আগে ফিরে আসা কি তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছে। অরুণ জেটলি নন, বাজেট পেশ করছেন অপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি নিয়ে এখন পর্যবেক্ষক মহল মাথা ঘামাচ্ছেন, তা হলে ভোটের আগে শেষ বাজেটে কী তুরুপের তাস ফেলতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?


চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এখন রয়েছেন নিউ ইয়র্কে। চলতি সরকারের শেষ বাজেট আর পেশ করতে পারবেন না জেটলি। কারণ, তাঁর চিকিৎসার জন্য সময় লাগবে। গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দিলেন, রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে অর্থমন্ত্রক এবং কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করবে মোদী সরকার। যা কিনা ভোটের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। সুতরাং মোদী সরকারের চলতি মেয়াদের ওই অন্তিম বাজেট পেশ করবেন পীযূষ গোয়েলই।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটের আগে ভোট অন অ্যাকাউন্ট রাজনৈতিক ভাবে মোদী সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া থেকে শুরু করে আয়করের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর মতো একাধিক জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করতে পারে সরকার। সেখানে জেটলি না থাকতে পারলে তা নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বড় ধাক্কা।

ভোট অন অ্যাকাউন্ট মানে খুবই সাদামাটা ব্যাপার। ভোটের আগে পর্যন্ত নানা খাতে সরকারের যে খরচ হবে, তা সংসদকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেবেন পীযূষ গয়াল। ভোটের পরে নতুন সরকার এসে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে। অথবা পীযূষ গয়াল এবারেই অন্তর্বর্তিকালীন বাজেট পেশ করবেন যাতে থাকবে সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তি ও ব্যয়বরাদ্দের হিসাব। সেই সঙ্গে সরকারের আর্থিক নীতিরও একটা রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে এই রূপরেখা বদলে দিতে পারে। তবে সাধারণত ভোটের আগে কোনও সরকার গুরুত্বপূর্ণ পলিসি অথবা কর প্রস্তাবের কথা ঘোষণা করে না।

২০০০ সালের পরে তিনবার অন্তর্বর্তিকালীন বাজেট পেশ হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটের আগে এই বাজেটেই সমাজের বৃহৎ অংশের ভোটারকে সন্তুষ্ট করার শেষ সুযোগ পাবেন মোদী। সেজন্য সম্ভবত তিনি করকাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনবেন। সেই সঙ্গে ঘোষণা করবেন নতুন নতুন প্রকল্প।

২০১৮-১৯ সালে সরকার ঘোষণা করেছিল, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানো হবে। সেই বর্ধিত দামে বিপুল পরিমাণ ফসল কেনা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এবারও সম্ভবত কৃষকদের জন্য কয়েকটি প্রকল্প ঘোষণা করা হবে। নোটবন্দির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এবার সম্ভবত তাঁদের জন্য অল্প সুদে ঋণ ও দুর্ঘটনা বিমার কথা ঘোষণা করা হবে।

এর আগে জিএসটি কাউন্সিল ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ছাড়ের সীমা বাড়িয়ে ২০ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষ অবধি করেছিল। ২০১৯-২০ সালের নতুন আর্থিক বছরে জিএসটি কমপজিশন স্কিমের আওতায় ছাড়ের উর্ধ্বসীমা সম্ভবত ১ কোটি থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করা হবে। বর্তমানে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলি টাকার সংকটে ভুগছে। তাদের রিলিফ দেওয়ার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে গত মাসে। এর পরে অন্তর্বর্তিকালীন বাজেটে নতুন করে তাদের ছাড় দেওয়া হবে।

জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিদদের ধারনা, অন্তর্বর্তিকালীন বাজেটে আর্থিক নীতি সম্পর্কিত বড় কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা অনৈতিক। তাঁদের কথায়, অন্তর্বর্তী বাজেটে জনমোহিনী নীতির কথা ঘোষণা করলে নতুন সরকারের পক্ষে তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি অন্য দল ভোটের পরে সরকার গঠন করে, তারা আগের সরকারের জনমোহিনী ঘোষণাগুলি নাকচ করতে পারবে না।

এক বিশিষ্ট অর্থনীতি বিদের মতে, কোনও বিদায়ী সরকার নতুন কর নেওয়ার প্রস্তাব অথবা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নীতির কথা ঘোষণা করতে পারে না। তিনি বলেন, ভোটের আর বেশি দেরি নেই। এই অবস্থায় সরকার চলতি প্রকল্পগুলির জন্য কিছু ব্যয়বরাদ্দ করিয়ে নিতে পারে মাত্র। কিন্তু নতুন প্রকল্প ঘোষণা করতে পারে না। ১ ফেব্রুয়ারিতে কেমন বাজেট পেশ করেন সরকার সেই দিকেই লক্ষ্য রাখছেন পর্যবেক্ষক সহ সাধারণ মানুষ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here