দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বঙ্গবাসীর ধর্মীয় আবেগ ছুঁয়ে ফেলাই লক্ষ্য বিজেপি–র। তাই হয়তো রাজ্যে সমস্ত কর্মসূচির আগে বিজেপি–র শীর্ষনেতারা ছুটে যান কোনও মন্দিরে।কয়েকদিন আগে ভিক্টোরিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণেও বাঙালি দেশনেতাদের সঙ্গে উঠে আসে বাঙালি ধর্মগুরুদের নাম। চৈতন্যদেব, মা আনন্দময়ী, অনুকূল ঠাকুর, হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর— একে একে নাম নেন মোদী। এবার এঁদের মধ্যে তিন গুরুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মন্দির, আশ্রমে যাবেন অমিত শাহ।

দু’‌দিনের বঙ্গ সফরে আসছেন অমিত শাহ। জানা গেছে, এবার এসে তিনি মায়াপুরে ইস্কনের মন্দির, ঠাকুরনগরে হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দির এবং বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে যাবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

এবারের অমিত-সফরে রয়েছে মায়াপুরের ইসকন থেকে ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত। ডিসেম্বর মাসে বঙ্গ সফরে এসে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আগে কোভিড ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষকে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তার পরেই নাগরিক সংশোধনী আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে এগোতে চায় সরকার।’’ তাঁর এমন মন্তব্যের পর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল মতুয়াদের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে, মতুয়াদের মনে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি কাটাতেই ঠাকুরবাড়ির মাঠে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত শাহ।

সফরের প্রথম দিন, ৩০ জানুয়ারি ঠাকুরনগরে শাহের কর্মসূচি রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে মতুয়া সমাজের ভোট গিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের পক্ষে। যার ফলে বনগাঁ ও রানাঘাটে ফুটেছিল পদ্ম। বনগাঁয় বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন মতুয়া মহাসংঘের অন্যতম উত্তরাধিকারী শান্তনু ঠাকুর। ডিসেম্বর মাসে সিএএ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের পর দলীয় অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শান্তনু। মুকুল রায়–কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মতো নেতারা তাঁর সঙ্গে কথা বলে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টাও করেছিলেন। তাই এ বার সরাসরি ঠাকুরনগরের মাটিতে দাঁড়িয়েই মতুয়াদের প্রসঙ্গে মোদী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবেন তিনি।

বিধানসভা ভোটে বাংলা দখল করতে গেলে মতুয়া ভোট যে প্রয়োজন, তা বিলক্ষণ জানেন শাহ। তাই এই সফরে তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি, মতুয়া ভোট নিশ্চিত করাও প্রাক্তন বিজেপি সভাপতির অন্যতম লক্ষ্য বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও, দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি, শনিবার সিআরপিএফ আধিকারিকদের সঙ্গে এবং রবিবার বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

তাঁর দু’দিনের সেই বঙ্গ সফরে তৃণমূলের আর কে কে যোগ দেবেন, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। গত বারের সফরে অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, সুনীল মণ্ডল-সহ একাধিক তৃণমূল নেতা।

অমিত-সফরে এ বার যাঁরা যোগ দিতে পারেন জল্পনার সেই তালিকায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া, প্রবীর ঘোষালের নাম ভাসছে। সম্প্রতি লক্ষ্মীরতন শুক্ল মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও তাঁর নাম নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোন জল্পনা শোনা যায়নি যদিও।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে কলকাতায় পৌঁছবেন অমিত। তার পরের দু’দিন তাঁর ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে। তার মধ্যে ৩১ জানুয়ারি রবিবার হাওড়ার ডুমুরজলায় বিজেপি-র এক জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন অমিত। অসমর্থিত সূত্রের খবর, সেখানেই অমিতের হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে পারেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব। তাঁর সঙ্গী হতে পারেন বালির বহিষ্কৃত তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী। এ ছাড়াও দলবদল করার সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা সাংবাদিক প্রবীর ও হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীর। পাশাপাশি, হাওড়া ও কলকাতা পুর নিগমের বেশ কিছু কাউন্সিলরও বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here