দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ধর্মতলায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্নামঞ্চে ফিরে যেতেই বাম ছাত্রদের তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। রানি রাসমনি রোডে কার্যত অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে শনিবার রাত আটটার সময়ে।

‘মমতা গো ব্যাক’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রানি রাসমনি রোড চত্বর। মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি এক পড়ুয়া প্রশ্ন করেন, “দিদি প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে দিলেন কেন বাংলায়?” মাইক হাতে মমতা বলেন, “উনি নিজে এসেছেন। তোমাদের আন্দোলন করার হলে দিল্লিতে গিয়ে করো।”

ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন মমতা। বলেন, “তোমাদের যা দাবি, আমাদেরও তাই দাবি। তোমরা শান্ত হও।” বাম ছাত্ররা মোদী-মমতা সেটিং এর অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে থাকে। মমতা মঞ্চ থেকে বলে, “তোমরা যত খুশি স্লোগান দাও। আমাদের পুলিশ কিছু করবে না। এটা দিল্লির পুলিশ নয়।”

কিন্তু বেশ খানিকক্ষণ এইরকম বাক্যবিনিময় চলার পর মেজাজ হারান মুখ্যমন্ত্রীও। বলেন, “আমার উপরে হামলা হলে আমাদেরও ছাত্র সংগঠন আছে।” এরপর নিজেই মাইক হাতে নিয়ে বন্দে মাতরম স্লোগান দিতে থাকেন দিদি। বাম ছাত্রদের মুখে তখন ‘দিদি-মোদী সে আজাদি’ স্লোগান।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কালো পতাকা দেখাতে শনিবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জমায়েত করেছিল একাধিক সংগঠন। দিনভর কোথাও কোনও উত্তেজনা না হলেও প্রধানমন্ত্রী যখন মিলেনিয়াম পার্কে পোর্ট ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে তখন ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায় ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে। ব্যারিকেড ভেঙে দেয় পড়ুয়ারা। পুলিশের সঙ্গে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের।

যেই জায়গায় পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে পড়ুয়াদের তার ঠিক সামনেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্নামঞ্চ। মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরে সেখানে গিয়ে বক্তৃতা করেন তৃণমূলনেত্রী। তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পড়ুয়াদের অধিকাংশই বাম ছাত্র সংগঠনের হওয়ায় বিজেপি বিরোধী আন্দোলন মুহূর্তের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চলে যায়।

তৃণমূলের অভিযোগ, এসএফআইয়ের ছেলে-মেয়েরা গিয়ে তাদের ধর্নামঞ্চ ধরে টানাটানি করে। পড়ুয়াদের দাবি, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়িয়েছে পুলিশই। সকাল থেকে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। সন্ধের পর পুলিশ ওই জায়গা থেকে উঠে যেতে বলে। অভিযোগ, তারপরই উত্তেজনা তৈরি হয়।

মিলেনিয়াম পার্কের অনুষ্ঠানে মোদীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মমতাও। ওই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ফের ধর্নামঞ্চে আসেন মমতা। তাঁকে মঞ্চে দেখেই বাম পড়ুয়ারা আজাদি স্লোগান তুলতে থাকে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী পরিস্থিতি যথেষ্ট অগ্নিগর্ভ। সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

হামলা হলে ভাল হবে না, পাল্টা হুঁশিয়ারি মমতার

বাম ছাত্রদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়ে পাল্টা হুমকি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। হাতে মাইক নিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। সেই মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তুমুল স্লোগান তুলছিলেন বাম ছাত্র ছাত্রীরা। প্রশ্ন তুলছিলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন তিনি!

এই পরিস্থিতিতে হাতে মাইক নিয়ে বাম ছাত্রদের পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন মমতা। প্রথমে বাম ছাত্রদের বোঝোনার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তার পর বলেন, “আমাদের মঞ্চে যদি হামলা হয়, তা হলে ভুলে যেও না আমাদেরও ছাত্র সংগঠন রয়েছে। ওরা এখানেই রয়েছে।” এই সময়েই বাম ছাত্র সংগঠনের তরফে পাল্টা স্লোগান ওঠে, “মোদীর এজেন্ট মমতা, জেনে গেছে জনতা।”

মোদীর কলকাতা সফর নিয়ে বাম ছাত্রছাত্রীরা এদিন সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু বিকেলে মোদী-মমতার বৈঠকের পর তাদের আক্রমণের সুর বদলে যায়। সিপিএম পলিটব্যুরো নেতা মহম্মদ সেলিমের সুরে সুর মিলিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তা হলে কি সেটিং হয়ে গেল? দিদি তুমি কার দলে?

বস্তুত সন্ধ্যা পর্যন্ত যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছিল তার চেহারা সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাতারাতি বদলে যায়। তাদের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। তাতে উত্তেজিত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে ব্যারিকেড ভাঙেন। তার পর মুখ্যমন্ত্রী সেখানে পৌঁছলে তাঁকে ঘেরাও করেন।

এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করে ডেকে আনেননি। উনি নিজেই এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী কলকাতা সফরে এলে সৌজন্যের খাতিরে মুখ্যমন্ত্রীকে যেতেই হয়। কিন্তু ছাত্ররা সেই যুক্তি শুনতে নারাজ। ফলে তাঁরা মমতার কথায় কান না দিয়ে স্লোগান চালিয়ে যান।

এই অবস্থায় দৃশ্যত কিছুটা হতাশ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তোমরা যা খুশি করো। যতক্ষণ পারো করো। তার পর দেখা যায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্ণা মঞ্চ থেকে স্লোগান তুলতে শুরু করে দেন মুখ্যমন্ত্রীও। পাল্টা স্লোগান ওঠে, “সেটিং হল তলে তলে, দিদি তুমি কার দলে?”

সন্দেহ নেই এহেন পরিস্থিতিতে পুলিশ কিছু সমস্যাতেই পড়েছে। সম্প্রতি সুলেখা মোড়ে যাদবপুরের আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর লাঠি চার্জের ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বই পুলিশের সমালোচনা করেছিলেন। ফলে পুলিশ কোনও কঠোর পদক্ষেপ করতেও দ্বিধা করছে। হয়তো রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here