‘ট্রাভেলগ’ (পর্ব ৫)

লিখছেন-দেবন্বিতা চক্রবর্তী,

সিমলার সন্ধ্যেটা এক কথায় অসাধারন রোমান্টিক আর উজ্জল ৷সারা ম্যাল রোডে আলোর মেলা বসে ,তার মধ্যে অসংখ্য টুরিস্ট কেনাকাটায় ব্যস্ত ৷ সিমলার বিখ্যাত ও সুস্বাদু ক্রিম বেস আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ ও জুটে গেল আমাদের ৷কিন্তু ঘুরতে ঘুরতে কোন অলিগলি পথে যে ঢুকে পরেছিলাম আমরা তা ঠিক করতে না পেরে রাস্তা হারালাম হোটেলের দিকে ফেরার সময় ৷তবে সন্ধ্যা রাত্রে ক্যাসেল ধাঁচের বাড়ি গুলোর ধার ঘেষে আর টিমটিমে রাস্তার আলোয় পথ চলতে চলতে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করলাম, সাথে ঠান্ডা বাতাসে শীতের দাপট ও ক্ষনে ক্ষনে বাড়ছে ৷ হঠাৎ খেয়াল হল এই হিমাচলের পাহাড়ের গোলোকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়ার জন্যই তো এত দূর আসা, প্রকৃতির আলোআধাঁরি তে অতিপ্রাকৃতিক হয়ে মিশে যাওয়ার আহ্বানে পাওয়া না পাওয়ার দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রাখা ৷
অবশেষে গুগল ম্যাপের সহায়তায় হোটেলে পৌঁছে স্বস্তি হল ঠিকই তার সাথে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার আনন্দটা ও অনেক বড় পাওনা ৷ সিমলাতে শেষ রাত টা এই ভাবেই কাটল | পরের দিন হবে সিমলার সাইড সিন অর্থাৎ কুফরি ৷
প্ল্যান মাফিক পরের দিন আমরা চললাম কুফরি হয়ে সিমলা থেকে মানালির পথে ৷সিমলা শহর থেকে মাত্র ১কিমি পশ্চিমে রিজ শেষ হতে অবজারভেটরি হিল এর শিরে সুন্দর প্রাকৃতির মাঝে মাসোব্রায় ভায়সরয় lord Duffrin এর বাসের জন্য তৈরী দি রিট্রিট ৷ মার্বেল পাথরের তৈরী প্রাসাদোপম বাড়ী I এইবাড়ীর ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় ১৯৪৭ সালে এই রিট্রিটে বসেই পন্ডিত নেহেরু ভারত ভাঙার চুক্তিতে সম্মত হন । উত্তরাধিকার সূত্রে স্বাধীনত্তোর ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন (গ্রীষ্মকালীন) হয় এই রিট্রিট ৷
এর পর শহর থেকে ১৬ কিমি পথ পার হয়ে ২৬৩৩ উঁচুতে দেবদারু বনে ছাওয়া অপরূপ কুফরি Iনয়নাভিরাম প্রকৃতির মাঝে ইন্দিরা গান্ধী ও জুলফিকার অালি ভুট্টোর সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা এখন ইন্দিরা হলিডে হোম নামে কুফরিতে রেস্তোরা চলে ৷ সত্যজিৎ রায়ের গুপী গাইন বাঘা বাইনের সেই বিখ্যাত দৃশ্য মনে পড়ে যেখানে হুন্ডি ,মুন্ডি ,শুন্ডি তে হাতে তালি মেরে চলে যাওয়া যায় ? তার শুটিং ও হয়েছিল এই কুফরিতে৷

ঘোরায় করে উপরে পৌঁছে যাওয়া যায় চারিদিকের দৃশ্য দেখার জন্য ৷আবার ঘোড়া তেই নেমে আসা যায় ৷ হিমাচল সরকারের নিজস্ব রেট আছে তার জন্য ৷ কুফরির টপমোস্ট পয়েন্টে এই জন্যই যেতে হবে কারন হিমালয়ের হ্যামলেট কুফরির প্রশস্তি ও তার নৈসর্গিক শোভার জন্য ৷টেলিস্কোপ পয়েন্ট থেকে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকার মূল্যে বদরীনাথ, কেদারনাথ ,পীরপাঞ্জাল, শিবালিক শিখর শ্রেণী যদি দৃষ্টিগোচর করা যায় তাহলে সেই পূণ্য থেকে আমরা ই বা বাদ থাকি কেন? এছাড়া ও কিছু শুটিং স্পট , আপেল ক্ষেতি আর পঞ্চপান্ডবের সময় প্রতিষ্ঠিত দূর্গা মায়ের মন্দির এগুলো ও উপরি পাওনা ।আর গাঢ় নীলের পর হালকা নীলের পরতে পরতে তুষারশুভ্র হিমালয় যেন দুহাত বাড়িয়েই রয়েছে সকল কে আলিঙ্গন করার জন্য ৷ টেলিস্কোপ পয়েন্ট এর পাশেই রয়েছে পুরোনো মনসা মন্দির ৷ কুফরির সৌন্দর্যে যেন কেমন নেশা আছে যা পেরিয়ে আসা মুশকিল হয় ৷ ঘোড়ায় করে নীচে আসার সময় দেখলাম পায়ে চলার রাস্তা ও তৈরী হয়েছে ট্রেকারদের উদ্দেশ্যে ৷ প্রচন্ড শীতে বরফে ঢেকে থাকে কুফরি ৷এর পর সেখান থেকে ৬কিমি আর সিমলা থেকে ২২ কিমি দূরে হিন্দুস্থান টিবেট রোডে ২৫১০ মিটার উঁচু ফাগুতে পৌঁছে তার ও নৈসর্গিক দৃশ্যে মুগ্ধ হলাম ৷ আলু চাষের জন্য ফাগু একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে ৷হিমালয় কে সাথে নিয়েই শুরু করেছিলাম পথ , এখন সিমলা ছাড়িয়ে মানালির দিকে পাড়ি জমাতে হবে ,আর তার সাথে যুক্ত হবে নতুন অনেক পাওনা না পাওয়ার গল্প ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here